বলিউড পাড়াতে শাহরুখ খান ও আমির খানের মধ্যকার দ্বৈরথ আবারও বেড়ে উঠেছে। অসহিষ্ণুতা প্রশ্নে এবার এই দুই খান অনেকটা আলাদা আলাদা অবস্থানে। অসহিষ্ণুতা নিয়ে শাহরুখ খান পূর্বে একবার মুখ খুলেছিলেন। এরপর তাকে পোহাতে হয়েছিলো নানা ঝামেলা। তবে এবার তিনি অসহিষ্ণুতা নিয়ে কথা বললেও এর নেপথ্য কারণ ছিলো আমির খানকে জবাব দেওয়া। কিছুদিন আগেই আমির জানিয়েছিলেন দেশের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে তার স্ত্রী এতটাই আতঙ্কে আছেন যে, বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে দেশ ছাড়তে হবে কি না সে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই শাহরুখ যেন জানালেন, দেশ নিয়ে তার কোনও অভিযোগ নেই। বলিউড স্টারদের যা কিছু বিত্ত-বৈভব-সম্মান তা এই দেশই দিয়েছে। আমিরের এ মন্তব্যের নানা ব্যাখ্যা ইতোমধ্যেই হয়েছিল। গায়ক অভিজিতের মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী তথা স্বঘোষিত ‘দেশপ্রেমিক’ খোলা চিঠিতে আমিরকে তুলোধনা করেছিলেন। অনুপম খের জানিয়েছিলেন, এ দেশেই তাকে সুপারস্টার তৈরি করেছে, স্ত্রীকে যেন সে কথা বলেন আমির। পালটা জবাব দিয়ে কেউ কেউ বলছিলেন, আমির স্বীয় প্রতিভাতেই স্টার বনেছেন। বিতর্কের মুখে পুনরায় মুখ খোলেন আমির। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তিনি জানান, তিনি দেশ ছাড়ার কথা বলেননি। তিনি যা বলেছিলেন সেই অবস্থান থেকে তিনি সরেও যাচ্ছেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে দেশের সংহতি, সংস্কৃতি, বহুত্ববাদের কথা তুলে ধরেন তিনি। আমিরের আগে অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খুলে সংঘ পরিবারের কোপে পড়েছিলেন শাহরুখ খানও। ৫০ তম জন্মদিনের সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, দেশ এখন অসহিষ্ণুতার শীর্ষে। এরকম চলতে থাকলে দেশের অধিবাসীরা যে অন্ধকার যুগে ফিরে যাবে এমন মতও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দেশ নিয়ে তার কোনও অভিযোগ নেই। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কোনও প্রশ্নই নেই। বলিউডি স্টার হিসেবে তারা যা পেয়েছেন তা এই দেশেই তাদের দিয়েছে। আরও একধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার সন্তানদের বলি ধর্ম দিয়ে কোনওকিছু বিচার না করতে। ধর্ম নিয়ে ছোটখাটো ঝামেলা চলতেই থাকে। কখনও কখনও কেউ প্রেক্ষিতের বাইরে গিয়ে মন্তব্য করে ফেলেন ৷ কিন্তু তার মানে এই নয় যে, দেশ আমার প্রতি অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে।’ স্পষ্টতই ব্যক্তিগত জায়গায় দেশের বিরুদ্ধে তার অভিযোগহীন অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছেন কিং খান। বলিউড পাড়ার জল্পনা, তবে কি আমিরকেই জবাব দিলেন শাহরুখ? আমির অসহিষ্ণুতা প্রসঙ্গেই ব্যক্তিস্বার্থ সামনে টেনে এনেছিলেন। ভয়ের আবহে সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে তার স্ত্রীর স্বাভাবিক শঙ্কার থেকেও সমালোচনার ঢেউ উঠেছিল, তার স্ত্রীর দেশ ছাড়ার আশঙ্কা নিয়ে৷ প্রশ্ন উঠেছিল, কেন শঙ্কায় দেশ ছাড়ার ভাবনা? কেন দেশে থেকেই পরিবর্তনের চিন্তা নয়? আজ শাহরুখ ব্যক্তিগত জায়গা থেকে তাই পরিষ্কার করে জানিয়ে দিলেন, এহেন কোনও শঙ্কা অন্তত তার পরিবারে নেই৷ দেশের অসহিষ্ণুতা নিয়ে তাঁর মন্তব্যে অনড় থাকলেও, ব্যক্তিগতভাবে দেশের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই বলেই জানিয়েছেন তিনি৷ খান সাম্রাজ্যে আগে বিরোধের আবহ থাকলেও, স্মরণকালের অতীতে তা অনেকটাই বন্ধুত্বের পরিবেশে বদলে গিয়েছিল৷ শাহরুখের এ মন্তব্যের পর অনেকেই মনে করছেন, তবে কি আবার দুই খানের দ্বৈরথ জমে উঠল?