আর নয়। এক বুক কান্না চেপে নতুন শপথ সোনাগাছির, হারিয়ে দিল সবাইকে
সারাটা বছর অপরের জন্য সাজি। পুজোর কটা দিন নিজের জন্য। সারা বছর অপরকে খুশি করতে হয় কিন্তু চারটে দিন নিজেদের খুশি করি। এক বছর আগে এমনটা বলেছিলেন সোনাগাছির চুমকি।
প্রথম থেকেই ছিল লড়াই। কিন্তু ২০১৫ সালে লড়াইটা ছিল সবথেকে কঠিন। আদালতের রায় হাতে পাওয়ার পরে মোটেই সময় ছিল না। তবু ওঁরা উৎসবে মেতেছিলেন। আলোর সাজে রঙিন হয়ে গিয়েছিল সোনাগাছির অন্ধকার পাড়াটা। রামধনু রং খেলে গিয়েছিল লাল রং-এর পাড়ায়।
কিন্তু আর নয়। অনেক কষ্ট বুকে চেপে রেখে, অনেক চোখের জল গোপন করে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সোনাগাছি— ‘আর দুর্গাপুজো হবে না।’ কলকাতার বণিতা পাড়ায় আর আসবেন না উমা। সারা শহর পুজোর রং-এ রঙিন হয়ে উঠলেও কালো হয়ে থাকবে উত্তর কলকাতার এই প্রাচীন পাড়াটা।
সমাজে ব্রাত্য মানুষেরা যে উৎসবের দিনেও কোণঠাসা হয়েই থেকে যান, বেশ বুঝেছিলেন সোনাগাছির যৌনকর্মীরা। তিন বছরের লড়াইটা এখনও ভুলতে পারছেন না বিমলাদেবী, চামেলি, সুপ্রিয়ারা। এঁদেরই কেউ একজন গতবছর আদালত থেকে পুজোর অনুমতি পাওয়ার পরে জানিয়েছিলেন, ‘‘সারাটা বছর অপরের জন্য সাজি। পুজোর কটা দিন নিজের জন্য। সারা বছর অপরকে খুশি করতে হয়, কিন্তু চারটে দিন নিজেদের খুশি করি।’’
কিন্তু এবার খুশি করার পুজোটা আর হবে না। কেন? তিন বছর ধরে লড়াই চালিয়েও কেন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেন? কারণটা গভীর।
উমা আসবেন বঙ্গে। তার জন্য অনেক আয়োজন। অনেক বড় বড় মণ্ডপ হবে। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে সোনাগাছির জন্য বরাদ্দ ছোট্ট একটু জায়গা। সেখানেই পুজোর আনন্দ করে নিতে হবে। সামর্থ্য থাকলেও, ইচ্ছা থাকলেও বড় প্যান্ডেল করা যাবে না। অনুমতি নেই। ২০১৩ সালে প্রথমবার সোনাগাছিতে পুজো করার অনুমতি চায় যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি।’কিন্তু অনুমতি মেলেনি।
এর পরে পুজোর অনুমতি পেতে আদালতে যেতে হয়। বিস্তর জলঘোলা হয় সেই মামলা নিয়ে। বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় অনুমতি দিয়ে দিলে রাজ্য সরকার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায়। সেখানেও জয় পায় সোনাগাছি। বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের আপত্তি খারিজ করে দিয়ে পুজোর পক্ষে রায় দেন। শুরু হয় উৎসব। সবার উৎসব সত্যি করেই সর্বজনীন হয়ে ওঠে।
সেই রায়ের ভরসায় ২০১৪ সালেও পুজো হয়। কিন্তু নতুন সঙ্কট দেখা দেয় ২০১৫ সালে পুজোর আগে। সোনাগাছির পুজো কমিটি একটু বড় মণ্ডপ বানানোর জন্য আবেদন জানায়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই সেই আবেদন নাকচ হয়ে যায়। ফের মামলা গড়ায় হাইকোর্টে।
পুলিশের বক্তব্য ছিল, সোনাগাছির সরু রাস্তায় বড় মণ্ডপ হলে যানজট তৈরি হবে। কিন্তু আদালতে প্রশ্ন ওঠে, কলকাতা শহরে আরও অনেক পুজো যখন রাস্তা আটকে হয়, তখন যদি বাধা না দেওয়া হয়, তবে যৌনকর্মীদের আবেদন কেন মঞ্জুর করা হবে না? এমন প্রশ্ন তোলেন খোদ বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। মামলায় জয় হয় যৌনকর্মীদের। আদালতের রায় হাতে পেয়েই অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিটে পুরসভার কমিউনিটি হলের সামনে পুজোর আয়োজন শুরু হয়ে যায়। পুজোও হয়। মণ্ডপের জায়গা একটু বড় হওয়ায় খানিকটা খুশি হন যৌনকর্মীরা।
কিন্তু ওইটুকু কমিউনিটি হলে কি অত বড় পাড়ার পুজো হয়? স্বপ্ন ছিল একদিন বাকি বারোয়ারির মতোই তাঁদের পুজোরও নামডাক হবে। সবাই চিনবে। থিম হবে। কিন্তু সে সব স্বপ্ন। কারণ, ওঁরা বুঝে গিয়েছেন, পুজোর অনুমতি মিললেও সেটা হবে, বাচ্চাদের খেলনা দিয়ে ভোলানোর মতো। তাই আর নয়। এক বুক কষ্ট নিয়েও কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সোনাগাছি।
পুজোর উদ্যোক্তা সংগঠন ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি’-র যুগ্ম সম্পাদিকা ভারতী দে জানিয়েছেন, ‘‘ছোট জায়গায় পুজো করে তৃপ্তি হচ্ছে না। অথচ বড় পুজো করার অনুমতি নেই। বাকি কলকাতায় বড় পুজো সম্ভব, কিন্তু এখানে নেই। আবার এই পাড়াতেও অন্যান্য পুজো বড় প্যান্ডেল করে হয় কিন্তু দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে অনুমতি মেলে না। বারবার আদালতে যাওয়ার থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর পুজোই করব না।’’
তবে কি হেরে গেল সোনাগাছি? না, পুজো না করলেও যে সিদ্ধান্ত ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি’ নিয়েছে তাতে আরও বড় জয় পেতে চলেছে তারা। জবাব দিতে চলেছেও বলা যায়। যে সরকার বারবার মনের মতো পুজো করায় বাধা দিয়ে এসেছে, সেই সরকারের পাশেই দাঁড়াতে চায় সোনাগাছি। ভারতীদেবী জানিয়েছেন, ‘‘পুজো হবে না। তাই আমরা ঠিক করেছি পুজোর যে ফান্ড রয়েছে সেটা মুখ্যমন্ত্রী ত্রান তহবিলে দান করা হবে। বন্যার্ত মানুষের কাজে লাগুক সেই সঞ্চিত টাকা।’’
ওঁরা আলাদা। যতই সমাজের মূলস্রোতের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হোক ওঁরা আলাদাই থেকে যায়। পুজোর চারদিন কলকাতা রামধনু রং-এ সাজলেও সোনাগাছি থাকবে ‘লাল রং-এর পৃথিবী’ হয়ে। আলাদা হয়ে। পুজোর কলকাতায় আড়ম্বরের স্রোতে গা না ভাসিয়েও তো ওঁরা অন্যরকমের, আলাদা হয়েই থাকবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
প্রকাশ্যে জানালেনঃ দুই পরিচালকের সঙ্গে ‘প্রেম’ ছিল পায়েলের
টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির স্বনামধন্য দুজন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী ও আবিরবিস্তারিত পড়ুন
প্রথম ‘সন্তানের’ জন্মলগ্নে কেঁদেছিলেন দেব ! দায়িত্ব অনেকটাই একা সামলাচ্ছেন তিনি
শিরোনাম পড়ে ভাবছেন, নায়ক দেব তো বিয়েই করেননি, তাহলে সন্তানবিস্তারিত পড়ুন
আলোচিত বাবা রাম রহিমের আয় কত, অনেকেই জানেনা?
ভারতের বিতর্কীত ধর্মগুরু বাবা রাম রহিমের পঞ্জাব, হরিয়ানায় স্থাবর সম্পত্তিরবিস্তারিত পড়ুন