শ্যামল কান্তি ভক্তের শাস্তি দাবি
আলটিমেটামে নেই হেফাজত, পুনরায় তদন্ত দাবি
নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের ফাঁসির দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম থেকে সরে এসেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তারা এখন ধর্ম নিয়ে অবমাননার অভিযোগ পুনরায় তদন্তসাপেক্ষে শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
আলটিমেটামের শেষ দিন আজ সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামীর সভাপতি মাওলানা আবদুল আউয়াল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানান। আবদুল আউয়াল শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকার রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব।
মাওলানা আবদুল আউয়াল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘গত ১৩ মে বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত কর্তৃক আল্লাহ এবং মুসলমান সম্পর্কে কটূক্তি করার প্রতিবাদে গত শুক্রবার (২০ মে) শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। ওই সমাবেশের পূর্বে আমরা ওই স্কুলের ছাত্র রিফাতের কাছ থেকে সরাসরি অবমাননার কথা শুনেছি এবং ছাত্র রিফাত সম্মেলনেও উপস্থিত ছিল। সে সম্মেলনে সরকারকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে আলটিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার এই ৭২ ঘণ্টার সময়ের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নারায়ণগঞ্জের ওলামায়ে কেরাম ও সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা আস্তে আস্তে ফুঁসে ওঠে। নারায়ণগঞ্জের পরবর্তী অবস্থা কী হবে তা বলাবাহুল্য। ইতোপূর্বেও ধর্ম অবমাননা হয়েছে। সরকার তার কোনো সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন নাস্তিকরা আশকারা পাচ্ছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ, রাসুল এবং ধর্ম নিয়ে অবমাননা করেই যাচ্ছে। তাই নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং মুসলমানদের ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় ঠান্ডা করতে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্যামল কান্তি ভক্তের আল্লাহ এবং মুসলমান সম্পর্কে কটূক্তির বিষয়টি পুনরায় তদন্তসাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের জনতার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
এর আগে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর ‘নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মুসলিম জনতা’ ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ শাখার সভাপতি আবদুল আউয়াল ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শ্যামল কান্তি ভক্তের বিচার না হলে হরতাল, অবরোধ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধের হুমকি দেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছি এবং শিক্ষার্থী রিফাতের সঙ্গে কথা বলেছি। সে বলেছে, প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন। তাই আমরা এ ব্যাপারে আর বসে থাকতে পারি না।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন তাহরিকে নবুয়তের নেতা ড. সাঈদ আব্বাসী, জেলা হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির, মাওলানা হারুনুর রশিদ প্রমুখ। তারা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সমালোচনা করে শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।
সমাবেশে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনকারী শিক্ষার্থী রিফাতও বক্তব্য দেয়। সে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিচার দাবি করে।
গত ১৩ মে (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের একটি মসজিদ থেকে হঠাৎ করেই মাইকে ঘোষণা করা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন এবং সেখান থেকে এলাকাবাসীকে স্কুলমাঠে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই দলে দলে স্কুলে ঢোকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তারা স্কুলের দরজা ভেঙে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করে এবং তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
পরে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। সংসদ সদস্য উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ-বস করার শাস্তি দেন।
কান ধরে ওঠ-বসের পর সমবেত জনতার কাছে করজোড়ে মাফ চাইতেও বাধ্য করা হয় ওই প্রধান শিক্ষককে। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের হেফাজতে স্কুল থেকে বের করা হয়। এর পর পুলিশ চিকিৎসার জন্য তাঁকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে ওই শিক্ষক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত বৃহস্পতিবার শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন পেশ করেছে। এতে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন বলে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে স্বাগতিক ওয়েস্টবিস্তারিত পড়ুন
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকানে চুরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভবিস্তারিত পড়ুন
যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদেরবিস্তারিত পড়ুন