গভীর রাতে সাভারের বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরের শিকার হওয়া, গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে গিয়ে ভাঙচুর করা, মাদক মামলায় গ্রেপ্তার, হাজতবাস, গোপনে একাধিক বিয়ে, সন্তানের মা হওয়া, সবশেষ স্বামী শরীফুল ইসলাম রাজের সঙ্গে দাম্পত্য কলহ, তারপর ডিভোর্স—এমন নানা কারণে দেশজুড়ে বেশ আলোচিত নাম চিত্রনায়িকা পরীমনি।

বিশেষ করে ২০২১ সালের ৮ জুন মধ্যরাতে বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগ তোলার পর এই অভিনেত্রীর পেছনের অনেক ঘটনাই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগাতে শুরু করে। একে একে বের হয়ে আসে তার জীবন ও পরিবারের নানা কাহিনি। এই পরীমনিকে তো সারা দেশের মানুষ চেনেন, কিন্তু তার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে কতজন কতটা জানেন?

পরীমনির জন্ম ১৯৯২ সালে নড়াইলে। জন্মনাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। ছোট্ট পরীকে নিয়ে বাবা মনিরুল ইসলাম ও মা সালমা সুলতানার ছিল সুখের সংসার। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন সয়নি পরীর কপালে। নায়িকার বয়স যখন মাত্র তিন বছর, তখন তার মায়ের মৃত্যু হয়। আগুনে পুড়ে মারা যান তিনি। সে সময় মা হারা পরীকে রেখে আসা হয় নানাবাড়ি পিরোজপুরে। সেখানে নানা শামসুল হক গাজীর তত্ত্বাবধানে ছোটবেলা কাটে অভিনেত্রীর।

নানাবাড়িতে থেকেই পরীমনি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ২০১১ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে বিএ (সম্মান) পড়াকালীন তিনি চলে আসেন ঢাকায়। নাচ শিখতে শুরু করেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা)।

শোনা যায়, সে সময় পরীমনিকে নিয়ে তার বাবা মনিরুল ইসলাম সাভারের ব্যাংক টাউনে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর শুধু পরীমনির কথা ভেবেই আর বিয়ে করেননি নায়িকার বাবা।

কিন্তু ২০১২ সালে বাবার ভালোবাসাও হারাতে হয় পরীমনিকে। ওই বছরের ২১ জানুয়ারি সিলেটে তার বাবার গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়। তিনি রিকন্ডিশন গাড়ির ব্যবসা চালাতেন। গুঞ্জন রয়েছে, এই ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণেই প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছিলেন পরীমনির বাবা মনিরুল ইসলাম। যদিও সেই হত্যা-রহস্য আজও উদঘাটিত হয়নি।

বাবার মৃত্যুর পর সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়েন পরীমনি। শোনা যায়, এরপর নায়িকা সাভারে তার এক খালার বাসায় থাকতে শুরু করেন এবং মিডিয়ায় কাজ করার চেষ্টা চালান। সেই চেষ্টার প্রথম সাফল্য হিসেবে ২০১৪ সালে তিনি একটি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পান, যেটি সে সময় এসএ টিভিতে প্রচার হয়। এরপর ২০১৫ সালে ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ নামে সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক করেন।

নায়িকা হিসেবে পরীমনির এখন অনেক নামডাক। ক্যারিয়ারের শুরুতেই একসঙ্গে ২০টিরও বেশি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঢালিউডে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার চুক্তিবদ্ধ হওয়া অধিকাংশ সিনেমাই নির্মিত হয়নি। কয়েকটি আবার নির্মাণের পর মুক্তির আলো দেখেনি। এ পর্যন্ত পরীমনি অভিনীত দুই ডজনের মতো সিনেমা মুক্তি পেয়েছে।

সেই পরীমনি মা-বাবা হারিয়ে, নড়াইল থেকে পিরোজপুর, সাভার এবং সবশেষ ঢাকার অন্যতম অভিজাত এলাকা বনানী হয়ে বর্তমানে থাকছেন আরেক অভিজাত এলাকা বসুন্ধরায় এক বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে।

এর আগে বনানীতেও থাকতেন বিলাসবহুল এক ফ্ল্যাটে। সেখানকার বাসাতে অবৈধ মদ ও মাদক রাখার দায়ে ২০২১ সালের ৪ আগস্ট আটক হন পরীমনি। পরদিন তার নামে বনানী থানায় মাদকের মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর কয়েক দফা রিমান্ড ও এক মাস হাজতবাসের পর জামিন পেয়ে বনানী ছেড়ে আস্তানা গাড়েন বসুন্ধরায়।

অভিনেতা শরীফুল রাজকে বিয়ে করে বসুন্ধরার এই বাসায়ই সুখের নীড় সাজিয়েছিলেন পরীমনি। তাদের সঙ্গে ছিলেন নানা শামসুল হক গাজী। পরে পরীর সংসারে আরও এক নতুন সদস্য যোগ হয়, তার পুত্রসন্তান শাহীম মুহাম্মদ রাজ্য ওরফে পদ্ম ওরফে পূণ্য। কিন্তু দাম্পত্য কলহের জেরে ভেঙে গেছে পরীর শেষ সংসারও। আজীবনের জন্য চলে গেছেন নায়িকার নানাও। বর্তমানে সন্তানকে নিয়েই কাটছে পরীর দিন-রাত।

বর্তমানে পরীমনির পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের মধ্যে একমাত্র সন্তান ছাড়াও আছেন মামা এবং মামি। যদিও মামা-মামিকে সেভাবে কখনোই দেখা যায়নি পরীমনির পাশে। ছোটবেলা থেকে পাশে থাকা নানা শামসুল হক গাজী তো মারা গেছেন। পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সবশেষ স্বামী রাজও। তিনি পরীমনি ডিভোর্স দেওয়ায় রিাজ এখন অন্য জগতের বাসিন্দা।

গত বছর তিন অভিনেত্রীর সঙ্গে রাজের আপত্তিকর কথাবার্তা ও ধূমপানের ভিডিও প্রকাশ হলে পরীমনির সঙ্গে তার দাম্পত্য কলহ সামনে চলে আসে। পরীমনি জানান, ওই ঘটনার ১০ দিন আগেই রাজ জিনিসপত্র নিয়ে তার বাসা থেকে বেরিয়ে যান। জানিয়ে যান, তিনি আর পরীমনির সঙ্গে সংসার করবেন না। একই ইচ্ছার কথা জানিয়ে কয়েক মাস পর রাজকে ডিভোর্স দেন পরীমনি।