আশায় আশায় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল
মার্চে দলের জাতীয় সম্মেলনের চার মাস পর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত হয়। এরপর থেকে শোনা যাচ্ছে শিগগির ঘোষণা হচ্ছে বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি। সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কথা। কিন্তু সেসব খবর আর আলোর মুখ দেখে না।
সবশেষ সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়ার আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা করবেন বলে জোরালো গুঞ্জন ছিল। কিন্তু তাও হয়নি শেষ পর্যন্ত।
এসব সংগঠনে পদপ্রত্যাশীরা এখন নতুন করে আশা করছেন চেয়ারপারসন হজ থেকে দেশে ফিরলে কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ কারণে চেয়ারপারসনের দেশে ফেরার দিনে বিমানবন্দরে নিজেদের সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, জাসাস, কৃষক দল, তাঁতী দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, ওলামা দল ও মৎস্যজীবী দল- এই হলো বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এ ছাড়া জিয়া পরিষদকেও অঙ্গসংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
এসব সংগঠনের মধ্যে শুধু ছাত্রদলের নতুন কমিটি আছে। তাদের বয়সও বছর পেরিয়েছে। বাকি সংগঠনগুলোর কমিটির বয়স সর্বনিম্ন পাঁচ বছর থেকে এক যুগে গিয়ে ঠেকেছে। বারবার উদ্যোগ নিয়েও পরে নানা জটিলতার কথা বলে কমিটি হচ্ছে না এসব সংগঠনের। ফলে তৈরি হচ্ছে নেতৃত্বের জট।
সর্বশেষ ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে খালেদা জিয়া ২১১ সদস্যবিশিষ্ট যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ২১১ সদস্যবিশিষ্ট হওয়ার কথা থাকলেও সেটি বর্তমানে ২৭১ সদস্যবিশিষ্ট। ছয় বছর ধরে এর নেতৃত্বে আছেন সভাপতি হিসেবে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাইফুল আলম নীরব। প্রতি তিন বছর পর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও তা পরিপালন হয়নি। তা করতে পারার জন্য নানা সীমাবদ্ধতার কথা জানানো সংগঠন থেকে।
যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যারা পদে আছেন তারা যেমন বিরক্ত, তেমনি যারা পদ-প্রত্যাশী তারা হতাশ। বিষয়গুলো নিয়ে দলের হাইকমান্ড উপযুক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যার প্রভাব পড়েছে গোটা সংগঠনের ওপর।’
গত মার্চে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পর গুঞ্জন শুরু হয় মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করবেন বিএনপি প্রধান। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে তিনি একাধিকবার আলাপ-আলোচনাও করেছেন বলে জানা গেছে। বক্তৃতা-বিবৃতিতেও তিনি বলেছেন স্বল্প সময়ে এসব সংগঠনের কমিটি দেয়ার কথা।কিন্তু এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি কোনো কমিটি।
দলীয় বিভিন্ন সূত্র বলছে,কমিটি যখনই হোক যুবদল দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এতে শীর্ষ পদে বর্তমান কমিটিতে আছেন এমন নেতাদের পাশাপাশি সাবেক ছাত্রনেতারা আসীন হতে পারেন।
যুবদলের শীর্ষ নেতৃত্বে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ ও নূরুল ইসলাম নয়ন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য মজনু স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়দের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আবার শীর্ষ পদে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের নামও শোনা যাচ্ছে।
যুবদলের নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস উদ্দিন মামুন বলেন, ‘আশা করছি ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) হজ থেকে ফেরার পর কমিটি ঘোষণা করবেন। সবাই মনে করছে, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে। ফলে ত্যাগী নেতাদের কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
তবে ছাত্রদলের মতো ঢাকা মহানগরকে চার ভাগ করে কমিটি হলে কেন্দ্রীয় পদ-প্রত্যাশী অনেকে মহানগরে থেকে যেতে পারেন বলে জানা গেছে।
যুবদলের সভাপতি আলাল হজে যাওয়ায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। আর নীরবের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
স্বোচ্ছাসেবক দল
সংগঠন হিসেবে অনেকটা গোছানো হলেও কমিটির বয়সের দিক থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের অবস্থা আরো করুণ। বর্তমান কমিটির বয়স সাত বছর চলছে।
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও মীর সরফত আলী সপুকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০০৯ সালের অক্টোবরে সংগঠনটির কমিটি গঠন করা হয়।
বিএনপির সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিবের পদ পেয়েছেন হাবিব উন নবী খান সোহেল।
যুবদলের মতো এই সংগঠনেরও কমিটি ঘোষণা যেকোনো সময় করা হবে এমন গুঞ্জন অনেক দিন ধরে চলছে। পদ-প্রত্যাশীরা ইতিমধ্যে শীর্ষ নেতাদের কাছে দৌঁড়ঝাপও কম করেননি। সেটি এখনো চলছে।
পদ-প্রত্যাশীদের আশা ছিল ঈদের আগে বা হজে যাওয়ার আগে কমিটি ঘোষণা করবেন বিএনপি-প্রধান। তবে এবারও তা আর হয়নি।
সংগঠনের নতুন কমিটির সভাপতি পদে মীর সরাফত আলী সপু ও বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবুর নাম শোনা যাচ্ছে জোরালোভাবে। সাধারণ সম্পাদক পদে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীমের নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েলও আলোচনায় রয়েছেন।
তাদের বাইরে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছিন আলীর নামও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শোনা যাচ্ছে।
বাবু-আলীমের নেতৃত্বে কমিটি হচ্ছে এমন আলোচনা জোরালো হলেও শীর্ষ দুই পদের একটিতে এবারও সপু থাকছেন এমন বিশ্বাস সংগঠনটির নেতাকর্মীদের।
এদিকে ছাত্রদলের মতো স্বেচ্ছাসেবক দলও ঢাকা মহানগরে চার ভাগ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম এই চার ভাগে কমিটি হলে কেন্দ্রের শীর্ষ পদে আগ্রহীদের অনেকে মহানগরের শীর্ষ পদে থাকতে পারেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারপারসনসহ হাইকমান্ড এ নিয়ে কাজ করছেন শুনেছি। সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে তাও শুনেছি। এখন বলা হচ্ছে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) দেশে ফেরার পর নতুন কমিটি দিবেন। আমরা সেই অপেক্ষা করছি।’
আর সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদ বলেন, ‘চেয়ারপারসন তার সময়-সুযোগ অনুযায়ী কমিটি ঘোষণা করবেন। তার হজ থেকে ফেরার পর এই ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি। আমাদের প্রত্যাশা নতুন কমিটিতে সংগঠনে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন