আসন্ন নির্বাচন ঢাকা-১৪: খালেক পরিবারেই থাকছে ধানের শীষ?
বৃহত্তর মিরপুরের আসনে (ঢাকা-৫) বরাবরই নির্বাচন করে এসেছেন মিরপুরের স্থানীয় বাসিন্দা এস এ খালেক। পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে (পুনর্বিন্যাসকৃত ঢাকা-১৪) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপির এই প্রবীণ নেতা।
তবে আগামী নির্বাচনে আর প্রার্থী হচ্ছেন না তিনি। তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ছেলে এস এ সিদ্দিক সাজুকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করতে চান বলে ইতিমধ্যে দলের হাইকমান্ডকে জানিয়ে দিয়েছেন এই আলোচিত নেতা ।
তার এই সিদ্ধান্তকে দলের পক্ষ থেকে ইতিবাচক হিসেবে নেয়ার পরপরই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন এস এ সিদ্দিক সাজু। আগামী নির্বাচনে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে তৈরি করতে পুরোদমে মাঠে নেমেছেন তিনি।
জনাব সাজু বলেন, ‘সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে সময় দিচ্ছি। একদিকে দলের কর্মসূচি পালন করছি, অন্যদিকে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নিজেকে প্রস্তুতের চেষ্টা করছি।’
নির্বাচনী সরকারের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরগরম বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। তাই নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে বিএনপির আগ্রহী প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় তৎপরতা জোরদার করছেন। রাজধানীর অন্যান্য আসনের মতো নির্বাচনী আলোচনায় সরগরম ঢাকা-১৪। সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মিরপুর, শাহআলী ও দারুস সালাম থানা এবং রূপনগর থানার আংশিক নিয়ে গঠিত এটি।
ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে সাজু ছাড়া আরো একজন সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে চান বলে এখন পর্যন্ত জানা যাচ্ছে। তিনি মহানগর উত্তর বিএনপির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আউয়াল।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন রবিউল আউয়াল। বৃহত্তর মিরপুর থানা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালে ১১ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তার দুই ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের ল্যুজিয়ানা ইউনির্ভাসিটিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি করছেন। রবিউল আউয়াল রাতসা কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং মিরপুর-১ নম্বরের ‘রবিউল প্লাজার’ স্বত্বাধিকারী। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীও ছিলেন তিনি।
নির্বাচনে আগ্রহের কথা জানিয়ে রবিউল আউয়াল বলেন, ‘আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। জীবনের বাকি দিনগুলো আমি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য দিতে চাই। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে মিরপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার আসনটি আমি বের করে নিয়ে আসতে পারব, ইনশা আল্লাহ।’
অন্যদিকে একসময় এলাকায় এস এ খালেকের জনপ্রিয়তা এমনই ছিল যে দেশের জাঁদরেল আইনজীবী ও রাজনীতিক সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামাল হোসেনও বিপুল ভোটে পরাজিত হন তার কাছে। বাবার এই জনপ্রিয়তা নির্বাচনে কাজে লাগাতে চান ছেলে এস এ সিদ্দিক সাজু।
বিগত নির্বাচনগুলোর তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে বিএনপির টিকিটে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন এস এ খালেক। এরপর ৮৬ ও ৮৮ সালে এরশাদের শাসনামলে পরপর দুবার সংসদ নির্বাচিত হন তিনি। এই দুই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় তিনি জাতীয় পার্টির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করে বিজয়ী হন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই সদস্য।
তবে ৮৭ বছর বয়সের এ প্রবীণ নেতা এখন শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। এ কারণে দলে সময় দেয়ার সুযোগ পান না। জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে যাওয়ার আগে তার সঙ্গে এস এ খালেক দেখা করেন ছেলে এস এ সিদ্দিক সাজুকে নিয়ে। সেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎকালে নিজের বয়স ও শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে আগামী দিনে নিজের জায়গায় ছেলের জন্য সুপারিশ করেন বিএনপির এই প্রবীণ নেতা।
বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর এক রকম সংকেত পেয়ে ছেলে সাজুকে মাঠে নামান এস এ খালেক। বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সাজুর বিরুদ্ধে সরকারের ২১টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যেই ধীরে ধীরে দলের কর্মসূচিতে নিজেকে সক্রিয় করতে থাকেন তিনি।
এস এ সিদ্দিক সাজু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে জড়িত আমি। কিন্তু আগে হয়তো এখনকার মতো সক্রিয় ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে বাসে অগ্নিসংযোগসহ ২১টি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এখন চেষ্টা করছি নিজেকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করতে। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে বাবার মতো আমিও মিরপুরের এ আসনটি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দিতে পারব।’
কোন দিক থেকে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রাখছেন-এমন প্রশ্নে সাজু বলেন, ‘আমি যেহেতু বয়সে অন্য মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের চেয়ে তরুণ, ভোটারদের কাছে বিশেষ করে তরুণদের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে মনে করি। এ ছাড়া আমরা এই আসনের স্থায়ী বাসিন্দা। এখানেই আমাদের সবকিছু। এলাকার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো। আমার বিশ্বাস দল এসব বিষয় নিশ্চয়ই বিবেচনায় রাখবে।’
এই আসনেরই স্থায়ী রবিউল আউয়ালও দাবি করেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষসহ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার রয়েছে গভীর সুসম্পর্ক। তিনি বলেন, ‘গত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মিরপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলাম আমি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে আমি এলাকায় দলের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের পাশাপাশি দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য নানা কর্মসূচি পালন করছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি আমি বের করে নিয়ে আসতে পারব।’
এদিকে মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি মুন্সী বজলুল বাসিত আঞ্জুও এ আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে দলের নানা কর্মসূচিতে তাকে দেখা গেলেও নির্বাচন ঘিরে তার তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন