শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

প্রাণহানি ঘটছে বাংলাদেশিরও

ইতালির পথে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে লিবিয়া

লিবিয়া থেকে ট্রলারে ইতালিতে যাওয়ার পথে আরও ২০ থেকে ২৫ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এঁদের মধ্যে দুজনের পরিচয় মিলেছে।
ইতালির উপকূলে ওই ট্রলার থেকে উদ্ধার হওয়া তিন বাংলাদেশি মুঠোফোনে এ তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, গত ২৫ আগস্ট রাতে লিবিয়ার জোয়ারা উপকূল থেকে তাঁদের ট্রলারটি ইতালির উদ্দেশে ছাড়ে। ২৭ আগস্ট ইতালি সীমান্তে পৌঁছালে কোস্টগার্ড ট্রলারে থাকা জীবিত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আর ট্রলারের পাটাতনের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় বাংলাদেশিসহ অর্ধশত লাশ। ইঞ্জিনের গরমে ও শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই তথ্য অন্য কোনো সূত্র থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে ইতালি ও লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, মাঝেমধ্যেই এমন ঘটনা ঘটছে। যদিও ওই ট্রলারটির বিষয়ে এখনো তাঁরা কিছু জানেন না। গত ২৭ আগস্ট লিবিয়ার জোয়ারা উপকূলে অন্য দুটি ট্রলারডুবিতে ২৪ জন বাংলাদেশিসহ ১১৮ জনের মৃত্যু হয়, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এর মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক ও সিরিয়ার নাগরিকদের পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে লিবিয়ায় থাকা কিছুসংখ্যক বাংলাদেশির ইতালির পথে পাড়ি দেওয়ার ঘটনা আলোচনায় আসে।

ইতালির উপকূলে ট্রলার থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া মোহাম্মদ রুবেল শেখসহ ১৯ জন বাংলাদেশি এখন সেখানে একটি বন্দিশিবিরে আছেন। আর মৃত বাংলাদেশিদের মধ্যে শাহাদাত হোসেন ও মো. সেলিম নামের দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এই দুজনের লাশ ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁদের পরিবার ঢাকায় রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে। বাংলাদেশে রেড ক্রিসেন্টের পরিচালক মনোয়ারা সারোয়ার গতকাল বলেন, সংস্থার ইতালিসহ আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
শাহাদাতের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়। তাঁর খালাতো ভাই আল আমিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

গতকাল তিনি বলেন, ‘ট্রলারে ওঠার আগেও আমার সঙ্গে শাহাদাতের কথা হয়েছে। আমরা তাকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু সে আমাদের বলেছে, অনেকেই এভাবে গেছে। এত দূরে এসে ফিরে যেতে চায় না। ১ সেপ্টেম্বর আমরা জানতে পারি, শাহাদাত বেঁচে নেই। আমরা তার লাশ দেশে আনার জন্য ঢাকায় রেড ক্রিসেন্টকে চিঠি দিয়েছি।’

শাহাদাতের মা বকুল আক্তার (৫০) বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। ওর বাপও সৌদিতে থাকে। আমরা সবাই শাহাদাতকে না করেছিলাম এভাবে যেতে। যাওয়ার আগমুহূর্তে সে তার বাবার সঙ্গে কথা বলে। ওর বাবাও বলেছে, তুই আমার একটাই ছেলে, যাইস না। কিন্তু ছেলেটা আমার পৃথিবী থেকেই চলে গেল।’
সেলিমের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে। তাঁর স্ত্রী রেহানা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী আমাকে সব সময় ফোন করত। ২৫ আগস্ট ট্রলারে ওঠার সময় সর্বশেষ ফোন দেয়। এরপর ইতালি পৌঁছে আবার ফোন করবে বলেছিল। কিন্তু সেই ফোন আর আসেনি। পরে আমার আত্মীয় কামরুল ভাই জানায় সেলিম মারা গেছে। এখন আমি আমার দুই মেয়ে নিয়ে কীভাবে বাঁচব।’

কামরুল নিজেও লিবিয়ায় ছিলেন। গতকাল তিনি বলেন, ‘আমরা লিবিয়ায় একসাথেই ছিলাম। ঈদের আগে দেশে ফিরেছি। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ট্রলারে ওঠার আগে সেলিম জানায় ইতালি যাচ্ছে। পরদিন জোয়ারা উপকূলে দুটি ট্রলারডুবির খবর পেয়ে আমি খোঁজখবর নেওয়া শুরু করি। লিবিয়ার আরেক বাংলাদেশি খোরশেদ জানায়, সেলিম ওই ট্রলারে ছিল না। কিন্তু তারা অন্য ট্রলারে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছে।’

খোরশেদ লিবিয়ায় বাবুর্চির চাকরি করেন। গতকাল মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘অনেকেই এভাবে লিবিয়া থেকে ইউরোপে চলে যাচ্ছে। সেলিম, শাহাদাত, রুবেল যেতে চাইলে আমি বলি, তোরা লিবিয়ায় চাকরি করছিস। তোদের মরতে যাওয়ার কী দরকার? কিন্তু তারা জোয়ারায় গিয়ে ট্রলারে ওঠে।’
ওই ট্রলার থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া মোহাম্মদ রুবেল শেখের বাড়ি মাগুরার মোহাম্মদপুরে।

তিনি বেনগাজির একটি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি গতকাল তাঁদের ট্রলারযাত্রার বর্ণনা দেন। ইতালির বন্দিশিবির থেকে তিনি বলেন, ইতালিতে যাওয়ার জন্য বেনগাজি থেকে সেলিম, শাহাদাতসহ তাঁদের বাসে করে ত্রিপোলি আনা হয়। সেখান থেকে জোয়ারা। সাধারণত এক হাজার লিবীয় দিনার দিলেই দালালেরা ট্রলারে তোলে। কিন্তু তাঁরা বাবু নামে বাংলাদেশি দালালকে ১ হাজার ৩০০ দিনার দেন, যাতে ট্রলারের পাটাতনে না রেখে তাঁদের ওপরে রাখা হয়। কারণ পাটাতনের নিচে ইঞ্জিনের কাছে রাখলে বেশির ভাগই মারা যায়।

রুবেল শেখ বলেন, ‘২৫ আগস্ট রাতে আমাদের যখন ছোট নৌকা থেকে বড় নৌকায় (ট্রলার) তুলে পাটাতনের নিচে ঢুকতে বলা হলো, আমরা আপত্তি করলাম। কিন্তু দালালেরা আমাদের পিস্তলের ভয় দেখালে আমরা বাধ্য হয়ে সেখানে ঢুকি। সেখানে প্রায় ২০০ লোক ছিল। নৌকা ছাড়ার পর কান্নাকাটি শুরু হয়। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম মারা যাব। সবাই সবার কাছ থেকে মাফ চাই। শাহাদাত ও সেলিম দম বন্ধ হয়ে আমার গায়ের ওপরই মারা যায়। আরও কতজন যে মরল হিসাব নেই। ৩৮ ঘণ্টা নৌকা চলেছে। শেষের দিকে পাটাতনে পানি চলে আসে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কোস্টগার্ড এসে আমাদের উদ্ধার করে। নইলে আমরাও মরে যেতাম।’

নৌকায় কতজন বাংলাদেশি ছিল জানতে চাইলে রুবেল বলেন, ‘৩৭০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে ৬০ থেকে ৭০ জন বাংলাদেশি ছিল। অর্ধশত লোক মারা গেছে। তাদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন বাংলাদেশি থাকতে পারে।’ কীভাবে নিশ্চিত হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শাহাদাত, সেলিম ও আমি একসঙ্গেই ট্রলারে উঠেছিলাম। আমার চোখের সামনেই দম বন্ধ হয়ে আমার দুই বন্ধু মারা গেছে। নামার সময় আমি আরও অনেকের লাশ দেখেছি।’
বন্দিশিবিরে থাকা মাদারীপুরের আলী মাতুব্বর ও মোহাম্মদ নজরুলও একই কথা বলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) আশিক-ই-রুবাইয়াত বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে আমরা প্রায়ই বিভিন্নজনের কাছ থেকে এমন খবর শুনি। কিন্তু আমাদের ইতালির কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানালে আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করতে পারি না। তবে এটি সত্যি, সাম্প্রতিক সময়ে এভাবে অনেক বাংলাদেশি লিবিয়া থেকে ইতালি আসছে।’

বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার লিবিয়া। তবে ২০১১ সালে দেশটিতে যুদ্ধাবস্থা শুরুর পর ৩৬ হাজার বাংলাদেশি ফিরে আসেন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি নতুন করে যান। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে এখন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার বাংলাদেশি আছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থার কারণে ও ভাগ্য বদলাতে অনেকেই এখন ইতালির পথে রওনা হচ্ছেন।

লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ঢাকায় পাঠানো একাধিক চিঠিতেও এই প্রবণতার কথা বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়, আগে সাধারণ শ্রমিকেরা এভাবে যেতেন। এখন অনেকে পরিবার নিয়েও এভাবে রওনা হচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এক-দেড় বছর ধরে শুনছি এভাবে অনেক বাংলাদেশি ইতালি চলে যাচ্ছে। প্রায়ই আমরা গ্রেপ্তার ও প্রাণহানির ঘটনার কথাও শুনি। কিন্তু কেউ পৌঁছে গেছে এবং সেখানে থাকছে—এমন প্রচারণায় আরও অনেকেই যেতে উৎসাহী হয়। আর লিবিয়ায় অস্থিরতা চলছে। এখান থেকে দেশে টাকা পাঠানো যায় না। এসব কারণেও অনেকেই চলে যায়। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সচেতন হতে হবে। এভাবে কারও মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে যাওয়া উচিত নয়।’

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীবিস্তারিত পড়ুন

হাইকোর্টে ১২ বিচারপতিকে বেঞ্চ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত

হাইকোর্ট বিভাগে ১২ জন বিচারপতিকে আপাতত প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়াবিস্তারিত পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আঁকা গ্রাফিতি হেঁটে দেখলেন ড. ইউনূস

জুলাই ও আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়বিস্তারিত পড়ুন

  • মাধ্যমিকে ফের চালু হচ্ছে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে মির্জা ফখরুলের রিভিউ আবেদন
  • শিক্ষা ভবনের সামনে সড়কে শুয়ে শিক্ষকদের অবরোধ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ৩ জনের মৃত্যু
  • এইচএসসির ফল প্রকাশ মঙ্গলবার, জানা যাবে যেভাবে
  • ড. ইউনূস: নির্বিঘ্নে সব জায়গায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে
  • ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
  • অবৈধভাবে ভারত যাওয়ার সময় ওএসডি হওয়া যুগ্ম সচিব আটক
  • শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী উদযাপিত, আজষ্টমী ও কুমারী পূজা
  • যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে: সরকারকে সেলিমা রহমান
  • রাস্তা দ্রুত মেরামত না হলে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি
  • ডিমের বাজারে আগুন: মিডিয়াকে দুষলেন প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা