ইরাক, সিরিয়ায় আইএসের পতনেও ওরা ফেরেনি
জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ধ হয়ে বছর দেড়েক আগে সপরিবারে দেশ ছেড়েছিলেন শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোকনুদ্দীন। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক জামাতাসহ তখন সিরিয়া চলে গেছেন বলে জানিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস ইরাক ও সিরিয়ায় কথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য বেশ কিছু এলাকা দখলের পর বেশ কিছু তরুণের পাশাপাশি দেশ ছাড়েন শিশু হাসপাতালেরও এই চিকিৎসকও।
এই চিকিৎসক পরিবার ছাড়াও আইএসের ‘সুসময়ে’ জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে ঘর ছেড়েছিলেন অসংখ্য যুবক। এদের মধ্যে একাধিক জন সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছে। একজন আবার সিরিয়া থেকে ভিডিওবার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশেও জিহাদ এর হুমকি দিয়েছিলেন।
এরই মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের মূল ঘাঁটিগুলোর পতন ঘটেছে। হাজার হাজার আইএস যোদ্ধা পালিয়ে গেছে, ধরাও পড়েছে কয়েক হাজার। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে যারা গিয়েছিলেন, তাদের কারও ফেরার তথ্য নেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।
২০১৫ সালের জুলাইয়ে মালোয়শিয়ায় যাওয়া কথা বলে ঘর থেকে বের হন ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক খন্দকার রোকনুদ্দীন, স্ত্রী নাঈমা আক্তার, দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন নাদিয়া ও রামিতা রোকন এবং নাদিয়ার স্বামী সাদ কায়েস শিশির। এরপর তারা আর ফিরে আসেননি।
তখন মালয়েশিয়া থেকে রোকন অন্য একটি মুসলিম দেশে গেছেন বলে ফোন করে স্বজনদেরকে জানিয়েছিলেন। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা ছিল তারা আইএস অধ্যুষিত অঞ্চলে গেছেন।
দেশ ছাড়ার কয়েক মাস আগে থেকেই রোকন পরিবারের মধ্যে আচরণগত বেশ পরিবর্তন আসে। বড় মেয়ে রেজওয়ানা রোকনকে বিয়ে দিয়েছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ছাত্র সাদ কায়েসের সঙ্গে। সাদ জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ ছিলেন এবং তিনিই তার পরিবারকে একই পথে নিয়ে যান বলে তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বের হয়ে এসেছে।
স্বজনরা জানিয়েছেন চিকিৎসক হিসেবে রোকনুদ্দিনের বেশ সুনাম ছিল। রোগী দেখার পর রোগী বা স্বজনদের ‘জিহাদের দাওয়াত’ দিতে ভুল করতেন না তিনি। সিরিয়া, ইরাকের গল্প শোনাতেন রোগীদের।
রোকনুদ্দীনের শ্যালক চিকিৎসক মর্তুজা কামালের কাছে এই পরিবারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের রমজান মাসে তারা স্বপরিবার বিদেশে গিয়েছিলেন বলে শুনেছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা ফেরেননি। যদি তারা দেশে ফিরত তাহলে আমরা জানতে পারতাম।’
হলি আর্জিটান বেকারিতে হামলার পর বাংলাদেশে আরও হামলার হুমকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভিডিও ছাড়া হয় সেটিও সিরিয়া থেকেই রেকর্ড করা হয় বলে পরে জানা যায়। এই তিন তরুণের সবাই বাংলাদেশি এবং একজন ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার সফিউর রহমানের ছেলে তাহমিদ রহমান শফি। অপর এক তরুণের নাম তাওসীফ হোসেন বলে শনাক্ত হয়।
গুলশান হামলার দুইদিন পর ১০ জন নিখোঁজের খবর সামনে আসে। তাদের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করে তাদের ফিরে আসার আহ্বান জানায় তাদের স্বজনরা। এরপর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও শতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়। এরপর প্রায় প্রতিদিনই নিখোঁজের তালিকা দীর্ঘ হয়েছিল। ওই আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে নিখোঁজদের ব্যাপারে তথ্য চেয়ে আহ্বান জানানো হয়।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তর ও র্যাব আলাদা ভাবে দুটি সেল খুলে তখন। এছাড়া নিখোঁজের পর যারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে তাদের বিষয়ে তথ্য পেতে র্যাব আলাদা একটি অ্যাপসও চালু করেছে।
ওই সময় ২৬২ জনের একটি নিখোঁজের তালিকাও প্রকাশ করেছিল র্যাব। এদের একজনও ফিরে এসেছে-এমন তথ্য পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ ব্যাপারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘নিখোঁজদের ফেরার ব্যাপারে কোন তথ্য নেই আমাদের কাছে। তাদের ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।’
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের জঙ্গি বিরোধী শাখা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের উপ কমিশনার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘বেশকিছু মানুষ নিখোঁজ হয়ে জঙ্গিবাদে যোগ দিয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তবে এদের কেউ এখনও দেশে ফেরেনি। এদের ব্যাপারে আকাশপথ জলপথ এবং স্থলপথের ইমিগ্রেশনে তথ্য দেওয়া রয়েছে। এরা দেশে ফিরলেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী জানতে পারবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিন চোখ ফাঁকি দিয়ে এদের কেউই দেশে প্রবেশ করতে পারবে না।’-প্রতিবেদন ঢাকাটাইমসের সৌজন্যে প্রকাশিত।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন