ই-সিগারেট সাধারণ সিগারেটের ১০ গুন ক্ষতিকর!

অনেকদিন ধরেই সিগারেট ছাড়তে চাইছেন এক ব্যক্তি। অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। শেষে বিজ্ঞাপন দেখে ই-সিগারেট ব্যবহার করা শুরু করলেন।
কিন্তু দিনকয়েক পর থেকেই গলায় অস্বস্তি হতে শুরু করল, সঙ্গে শ্বাসের কষ্ট এবং অ্যালার্জি।
চিকিৎসক জানালেন, ই-সিগারেট থেকেই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বন্ধুদের দেখিয়ে খুব কায়দা করে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এক শিক্ষার্থী বন্ধুদের বলেছিল, এটা ই-সিগারেট। এতে তামাক থাকে না। একেবারেই ক্ষতিকারক নয়।
এই কথা শুনে তার কয়েকজন বন্ধুও ই-সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিল। কিন্তু কয়েকমাস পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ল তাদের কয়েকজন।
চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিলেন, অবিলম্বে ছাড়তে হবে এই নেশা।
সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেট ব্যবহার করে ইদানীং সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকেরাও মানুষকে এই বস্তুটি ব্যবহার করা থেকে সতর্ক করছেন বারবার।
কী এই ই-সিগারেট?
সাধারণ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ‘ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম’ (এন্ডস) বা ‘ইলেকট্রনিক সিগারেট’ ব্যবহার করা হয়। সিগারেটের মতই দেখতে ফাইবার বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এই ব্যাটারিচালিত যন্ত্রগুলির মধ্যে একটি প্রকোষ্ঠ থাকে। তার মধ্যে ভরা থাকে বিশেষ ধরনের তরল মিশ্রণ। যন্ত্রটি গরম হয়ে ওই তরলের বাষ্পীভবন ঘটায় এবং ব্যবহারকারী সেই বাষ্প টেনে নেয় ফুসফুসে, যা ধূমপানের অনুভূতি দেয়। এই পদ্ধতিকে বলে ‘ভেপিং’।
অনেকেই মনে করেন বা বিজ্ঞাপনেও দেখানো হয় ই-সিগারেট ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে সাহায্য করে। কিন্তু এখানেই দেখা দিয়েছে বিতর্ক। ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, ই-সিগারেট ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করে এর কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে এর প্রভাব সাধারণ সিগারেটের চেয়েও ক্ষতিকারক বলে দাবি করছেন তারা।
তারা জানান, ই-সিগারেটের তরল মিশ্রণ (ই-লিকুইড)-এর মধ্যে থাকে প্রপেলিন গ্লাইসল, গ্লিসারিন, পলিইথিলিন গ্লাইসল, নানাবিধ ফ্লেভার এবং নিকোটিন। গরম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রাসায়নিক গুলি থেকে সাধারণ সিগারেটের ধোঁয়ার সমপরিমাণ ফরমালডিহাইড উৎপন্ন হয়। এ ছাড়াও ই-সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে অতিসূক্ষ রাসায়নিক কণা যা ভীষণই ক্ষতিকারক। এর থেকে গলা-মুখ জ্বালা, বমিভাব এবং ক্রনিক কাশি দেখা দিতে পারে।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা সবচেয়ে বেশি চিন্তিত এর মধ্যে থাকা নিকোটিনের পরিমাণ নিয়ে।
তারা জানান, ই-সিগারেটের প্রধান উপকরণ নিকোটিন থেকে দ্রুত আসক্তি তৈরি হয়। সিগারেট ছাড়তে চেয়ে যারা এটি ব্যবহার করেন তাদের এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা থেকে দেখা দিতে পারে ফুসফুসের বিভিন্ন অসুখ।
তবে ই-সিগারেটের মধ্যে থাকা নিকোটিন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে অনেকদিন থেকেই। প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে সরাসরি নিকোটিন ব্যবহার আদৌ করা যায় কি না? আইন মোতাবেক নিকোটিন ‘শিডিউল কে’ ড্রাগ এবং এর সরাসরি ব্যবহারের মাত্রা ২ থেকে ৪ মিলিগ্রাম। তাও নিকোটিন ছাড়ানোর চিকিৎসাপদ্ধতি হিসেবে লজেন্স অথবা চিউয়িং গামের মধ্যে ওই নির্দিষ্ট মাত্রার নিকোটিন ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু ই-সিগারেটে যেভাবে রাসায়নিক নিকোটিন ব্যবহার করা হয় তা ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) দ্বারা অনুমোদিত নয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে মৃত্যুও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন তারা।
ভারতীয় ক্যানসার চিকিৎসক এবং ভয়েস অফ ক্যানসার ভিকটিমের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গৌতম মুখোপাধ্যায়ের মতে, ই-সিগারেটের মধ্যে একটা চমকপ্রদ ব্যাপার রয়েছে যা দেখে যুবসমাজ সবচেয়ে বেশি করে আকৃষ্ঠ হচ্ছে। কিন্তু এর থেকে ক্ষতি হয় না এই ধারণা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা কখনই কাউকে ই-সিগারেট খেতে বলি না। এর ধোঁয়ায় এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলি থেকে ক্যনসার হওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ই-সিগারেট দিয়ে কোনওদিন সিগারেট ছাড়া যায় না। বরং বেশি খরচ করে মানুষ আরও বড় বিপদ ডেকে আনছে। জাপানে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ই-সিগারেট সাধারণ সিগারেটের চেয়ে দশ গুণ বেশি ক্ষতিকারক। আমরা সিগারেটের পাশাপাশি এর বিরুদ্ধেও সচেতনতা গড়ে তুলতে চাইছি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন

রেড মিট খাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ জেনে নিন
কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকদিন টানা খাওয়া হয় গরু বা খাসিরবিস্তারিত পড়ুন

জাপান ও ইউরোপে বিরল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
জাপানে, একটি বিরল “মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া” এর কারণে এক রোগবিস্তারিত পড়ুন