ঈদযাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা
ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় পৌঁছতে নুরজাহান বেগমের সময় লেগেছে ১৫ ঘণ্টা। অন্যান্য সময় এই পথ যেতে লাগে পাঁচ ঘণ্টা। তিনগুণ বেশি সময় লেগেছে এবারের ঈদে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ এই যাত্রাপথে গরম আর খাবার সমস্যায় তার দুই শিশু সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে আনন্দযাত্রা তার কাছে বিষাদে পরিণত হয়েছে।
শনিবার রাত সাড়ে নয়টায় গাবতলী থেকে গাইবান্ধার উদ্দেশে রওয়ানা হন নুরজাহান বেগম। গাবতলী থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত যেতেই সময় লেগেছে ১১ ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে তার দুই বছরের সন্তান রাফি বমি করেছে দুই বার। আর বড় সন্তানের বয়স পাঁচ বছর। সেও একবার বমি করেছে। সারা রাস্তায় দুই সন্তানকে সামলিয়ে এখন তিনিও অসুস্থ। এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, ‘এতো দুর্ভোগ জানলে শিশু সন্তানদের নিয়ে আসতাম না।’
এভাবে শুধু নুরজাহান বেগমই নয়, এবারের ঈদযাত্রায় ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষ এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন।
শাকিল আহমেদ স্ত্রী, তিন সন্তান নিয়ে বগুড়ায় পৌঁছেছেন ১৪ ঘণ্টায়, যেখানে সময় লাগে চার ঘণ্টা। রাজধানীতে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন তিনি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গাড়িতে উঠে সকাল ১০টায় তিনি বগুড়ায় পৌঁছেছেন। তিনি জানান, তার ছয় বছরের ছোট ছেলেটি বাসে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আর দীর্ঘ এই যাত্রায় কিছু না খেয়ে তার স্ত্রী ও অন্য দুই সন্তানও অসুস্থ।
ক্ষোভ প্রকাশ করে শাকিল জানান, ‘বাড়িতে আসলাম আনন্দ করতে। এখন দেখি আরও কষ্ট বাড়ছে।’
মহাসড়কের পাশে রেস্তোরাঁয় নোংরা খাবার
দীর্ঘ যানজটে মহাসড়কের পাশে রেস্তোরাঁগুলোতে চলছে রমরমা খাবার বাণিজ্য। দীর্ঘ যানজটের কারণে আটকে থাকা গাড়ির যাত্রীদের ভরসা রেস্তোরাঁর খাবার। এই সুযোগে রেস্তোরাঁগুলোও কামিয়ে নিচ্ছে বাড়তি টাকা। স্বাভাবিক সময়ে এক বেলা ভাত খেতে যেখানে লাগে এক থেকে দেড় শত টাকা। সেখানে এখন একজন যাত্রীকে ব্যয় করতে হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা।
এছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেস্তোরাঁগুলো টেবিল, প্লেট, গ্লাস পরিষ্কার না করেই খাবার পরিবেশন করছে। এছাড়া টয়লেট ও ওয়াশ রুমগুলোও নোংরা অবস্থা পড়ে আছে।
সিরাজগঞ্জের ফুটভিলেজ, হোটেল রিগেন, হোটেল হানিফ, মামা-ভাগ্নের হোটেল, বগুড়ার পেন্টাগনসহ মহাসড়কের প্রায় সব রেস্তোরাঁয় একই পরিবেশ বিরাজ করছে।
শফিকুল ইসলাম নামে এক যাত্রী পরিবার নিয়ে সিরাজগঞ্জের ফুট ভিলেজে রাতের খাবার খেতে যান। খেতে গিয়ে দেখেন টেবিলে খাবারের উচ্ছ্বিষ্ট পড়ে আছে। এরমধ্যেই তাদের খাবার দেয়া হয়েছে। প্লেট ও গ্লাস অপরিষ্কার।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হোটেলের এই রকম নোংরা অবস্থা এর আগে কখনও দেখিনি।’
জানতে চাইলে ফুট ভিলেজ রেস্তোরাঁর কর্মচারী মনির হোসেন বলেন, ‘স্যার কয়েকদিন ধরে ঘুমাইতে পারি না। কাজের ওপর কাজ। এতো লোকজন খাইতে আসে, পরিষ্কার করার সময় পাই না। মানুষ আসছে, খাচ্ছে, যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে এভাবেই অটো চলছে।’
গাবতলীতে এখনো অপেক্ষায় মানুষ
গাবতলীতে বাড়ি ফেরা মানুষের এখনো দীর্ঘ অপেক্ষা। কেরানীগঞ্জের ইস্পাহানি ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজের ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক কামরুল হাসান ১০ সেপ্টেম্বরের টিকেট কিনেছিলেন ২৮ আগস্ট। পঞ্চগড় যাবেন তিনি। সে হিসেব অনুযায়ী গতকাল রাত নয়টায় গাবতলীর বাস কাউন্টারে আসেন। কিন্তু কাউন্টার থেকে বলা হয় আপনার বাস আসেনি। আপনি আগামীকাল সকাল নয়টায় আসেন (আজ রবিবার)।
আজ রবিবার সকাল নয়টায় গাবতলী এসে জানতে পারেন তার গাড়ি এখনো আসেনি। বেলা দেড়টায় গাড়ি আসবে। তিনি নিশ্চিত নন গাড়ি দেড়টায় আসবে কী না। রংপুরে যাবেন মোরশেদ আলম। রাজধানীর উত্তরাতে একটি আইটি ফার্মে কাজ করেন তিনি। আরাফাত পরিবনের একটি গাড়িতে সে টিকেট কেটেছে। গতকাল ১০টায় ছিল তার গাড়ি। তিনি ফোন করে শুনলেন গাড়ি রাতে ছাড়বে না। সকালে আসতে হবে। সকাল এসে কাউন্টার থেকে বলা হল গাড়ি এখনো রাস্তায় বিকাল নাগাদ গাড়ি ছাড়বে। এই দীর্ঘ অপেক্ষা শুধু গাড়ি পাওয়ার। আর গাড়ি পাওয়ার পর সেই গাড়ি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে কখন ছেড়ে যাবে আর কখনই বা গন্তব্যে পৌঁছবে তা বলা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এভাবে অনেক যাত্রীকে দেখা যায় গাবতলী বাস কাউন্টারে অপেক্ষায় বসে আছেন।
নাবিল পরিবহনের ম্যানেজার জানান, যানজটে গাড়ির সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। আমরা যাত্রীদের ফোনে বলে দিয়েছি। তাদের গাড়ি কখন ছাড়বে। রাস্তার যানজট তো আর আমরা নিরসন করতে পারবো না।
নাবিল পরিবহনের এক গাড়ি চালক ফরহাদ হোসেন জানান, ‘রাস্তায় ব্যাপক যানজট। আসার চেয়েও যাওয়ার পথে যানজট বেশি। কুড়িগ্রাম থেকে তার আসতে সময় লেগেছে ১৬ ঘণ্টা। তবে বেশি যানজট হচ্ছে সিরাজগঞ্জ থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত। এই জায়গাটুকুতেই সময় লেগে যায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে যাত্রীদের অপেক্ষা
ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রিয়জনের কাছে যেতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়িতে উঠার অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। এই অপেক্ষা শুরু গাবতলী থেকে। গাবতলীয় থেকে সভারের চন্দ্রা পর্যন্ত মোড়ে মোড়ে দেখা যায় অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে যাত্রীরা। গাড়ি খালি পেলেই তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে উঠছেন। নছিমন, করিমন, গরু পরিবহনের ট্রাকেও উঠছেন কেউ কেউ।
রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশের উপস্থিতি কম
মহাসড়কের গাড়ি ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে। সাভারের চন্দ্রা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত গাড়ি ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্যদে চোখে পড়েনি। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। এ কারণে যানজট বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গাড়ি ব্যবস্থাপনায় সড়কে ট্রাফিক পুলিশ থাকলে হয়তো রেকর্ড পরিমাণ যানজট হতো না। এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন