ঈদে মুছে যাক মনের সব কালিমা, দৃঢ় হোক সম্প্রীতি
আজ শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে শনিবার মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। অন্যথা রোববার ঈদুল ফিতর। একমাস সিয়াম সাধনার পর সারাদেশে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে থেকেই।
রাজধানীসহ সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য ও উৎসাহ উদ্দীপনায় ঈদ উদযাপনের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঈদ মানেই আনন্দ। তাই শিশু-কিশোর, যুবা-বৃদ্ধসহ সবার মনেই আনন্দের ধারা বয়ে যায় ঈদের দিনে। ঈদ আসে সত্য ও সুন্দরের জয়গান নিয়ে।
প্রতিটি মুসলিম হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে অফুরন্ত প্রেম-প্রীতির নবজাগরণ। নতুন সুর বীণায় ছন্দময় করে তোলে প্রতিটি প্রান্তর এবং জনপদ। মানবকল্যাণের সব ধরনের উচ্ছ্বাস জাগিয়ে দেয় নব-চেতনায় এবং নতুন মাত্রায়। দূর হয়ে যায় মনের সব কালিমা। তাই ঈদুল ফিতরের দিনে মানুষের সেই চেতনারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে নবোদ্যমে।
মুসলমানদের জীবনে ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও আনন্দ অপরিসীম। উৎসব হিসেবে পবিত্র ধর্মীয় অনুভূতি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইসলামের জীবন আর ধর্ম একই সূত্রে গাঁথা। তাই ঈদ শুধু আনন্দের উৎস নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কর্তব্যবোধ, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের বৈশিষ্ট্য। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সম্প্রীতির ভাবটা এখানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
এলাকার লোকেরা ঈদের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট ঈদগাহে সমবেত হয়। এতে সবার মধ্যে একাত্মতা ও সম্প্রীতি ফুটে ওঠে- ইসলামের মহান ভ্রাতৃত্ববোধে সবাই উদ্দীপ্ত হয়। পরস্পর কোলাকুলির মাধ্যমে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পর ভাই বলে গৃহীত হয়।
ধনী-গরিবের ব্যবধান তখন প্রাধান্য পায় না। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগ করে নেয়। এর ফলে ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র, আত্মীয়স্বজন- সবাই পরস্পর ভ্রাতৃত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকে। ঈদ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভোলার জন্য, মানুষের মধ্যে প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হওয়ার জন্য পরম মিলনের বাণী নিয়ে আসে। একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে যে ফিতরা, দান করা দেওয়া হয়, তার মাধ্যমে মানুষের মনের পরীক্ষা হয়, ধনী-দরিদ্র সবাই সমভাবে ভাগ করে নেন ঈদের আনন্দ। ঈদের মধ্যে আছে সাম্যের বাণী, সহানুভূতিশীল হৃদয়ের পরিচয়। পরোপকার ও ত্যাগের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় মানুষের মন।
এক কথায়, মানুষের পশুত্ব মানবিকতার উদ্যত ও অহমিকার মূলোৎপাটন করতেই মূলত বছর শেষে একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর আগমন ঘটে মুসলিম জাহানে।
বিশ্বব্যাপী আজ যে হাহাকার ও বিপন্ন মানবতার চিৎকার, তা থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্ত করতে ঈদুল ফিতর শিক্ষা ফি বছর আমাদের সামনে এসে স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে। মানবতার কল্যাণ সাধনে ইসলাম যে ক’টি শিক্ষা মানুষের সামনে তুলে ধরে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রমজান ও ঈদুল ফিতরের শিক্ষা।
রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানব মনের সমস্ত পশু প্রবৃত্তির মূলোৎপাটন এবং আত্মশুদ্ধি ও মানবিক কল্যাণ চেতনাকে শাণিত করার এটি একটি জ্বলন্ত শিক্ষা। আর এতে নবজাগৃতি এবং নবশক্তির উদ্বোধন ঘটে প্রতিটি মুসলিম অন্তরে।
এভাবে ধর্মীয় একটি উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে মানুষ ও সমাজকে তুলে আনার যে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি তা অবশ্যই গুরুত্ববহ এবং ইসলামী বিধানের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যকেই উন্মোচিত করে।
অতএব আসুন, ঈদুল ফিতরের দিনে প্রকৃত ঈদের খুশি নিয়ে মানবতার কল্যাণে যা পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘বলো আমার নামাজ, আমার ইবাদতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছুই মহান আল্লাহর জন্য। আর সেই আলোকে জীবনকে গড়ে তুলি। মনের পশুবৃত্তিকে সংহার করে মানবতার জয়গানে মেতে উঠি। সেই সাথে ত্যাগের মাধ্যমে সবার মনের কালিমা দূর হোক, আমাদের সমাজে গড়ে উঠুক দৃঢ় সম্প্রীতি। ধর্ম-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে আমরা সবাই ভাইয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শান্তিতে বসবাস করি।
সবাইকে ঈদ মোবারক।
লেখক: ড. সরদার এম. আনিছুর রহমান, শিক্ষা ও সমাজ বিষয়ক গবেষক, [email protected]
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন