উইপোকার আড্ডা এখন শেখ ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগারে!
সোহানুর রহমান, লালমনিরহাট প্রতিনিধি : কোথায় স্বর্গ ? কোথায় নরক ? কে বলে তা বহুদূর ? মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর । রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয় , আত্ম গ্লানির নরক অনলে তখনি পুরিতে হয়। এই মর্মস্পর্শী কবিতার কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতি ধরে রাখতে কবির গ্রামে গড়ে তোলা পাঠাগারটি আজ আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।জানা যায়, কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতি রক্ষার্থে স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০০৫ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা বাজারে কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতি পাঠাগারটি নির্মিত হয়। পাঠাগারটির শুরুর দিকে ব্যাপক পাঠক সমাগম ঘটলেও এক বছর ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে।
পাঠাগারটি দেখভাল করার জন্য মাসিক এক হাজার টাকা সম্মানিতে কেয়ারটেকার হিসেবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আজিম উদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগের আট বছর পেরিয়ে গেলেও একটি টাকাও পাননি তিনি। সাত বছর বিনা সম্মানিতে শ্রম দিলেও মনের ক্ষোভে এক বছর ধরে পাঠাগার খোলেন না আজিম উদ্দিন।কবি ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগারের কেয়ারটেকার আজিম উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে পাঠাগারের কেয়ারটেকার হিসেবে নিয়োগ পেলেও সম্মানির একটি টাকাও পাননি তিনি। সাত বছর বিনা সম্মানিতে শ্রম দিলেও এক বছর ধরে পাঠাগার খুলেন না তিনি।তিনি আরো জানান, স্থানীয় একটি কমিটি পাঠাগারটি পরিচালনা করত।
৩ বছর হয় সেই কমিটিও বিলুপ্ত হয়েছে। এখন পাঠাগার মানেই তিনি একা।এ পাঠাগারের দ্বিতল ভবনের নিচ তলায় ৪০০ বই ও পড়ার টেবিল চেয়ার এবং একটি ক্রামবোর্ড রয়েছে। উপরে রয়েছে সেমিনার কক্ষ। সবেই আজ অযথাই পড়ে উইপোকার আড্ডায় পরিণত হচ্ছে বলে জানান আজিম উদ্দিন। পাঠাগারের মূলফটকে ময়লা আবর্জনার স্তুপ দেখে বলার অপেক্ষা রখেনা যে এটি কখনও খোলা ছিল।মূল ফটকের সামনে কিছু দোকান, অটোরিকশা ও সিএনজি।
বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই যে এখানে পাঠাগার আছে। কাকিনা গ্রামের বাসিন্দারদের সঙ্গে এ প্রতিবেদক কথা বললে ক্ষপ্ত কণ্ঠে বলেন,উত্তরঞ্চলের প্রানের কবি শেখ ফজলল করিমের পাঠাগারটি উইপোকার আড্ডায় পরিণত হয়। তাহলে কি প্রয়োজন ছিল পাঠাগারটি স্থাপনের। কবি বাড়ির বর্তমান রক্ষক কবির অন্যতম প্রপুত্র ওয়াহিদুন্নবী বলেন, এই বৃদ্ধ বয়সে কবির স্মৃতি ধরে রাখতে চেষ্টা করছি। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সংস্কার করতে পারছি না। দীর্ঘদিন এমনি পড়ে থাকায় কবির ব্যবহৃত জিনিসগুলো নষ্ট হতে চলেছে।পাঠাগারটি সম্পর্কে জানাতে চাইলে উত্তর বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক গোলাম কিবরিয়া বলেন -‘বাংলা কাব্য সাহিত্যে অমর কবি শেখ ফজলল করিমের’ অবদান কোন ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
এরকম একজন গুনি কবির নামে যে পাঠাগারটি নির্মিত হয়েছে তা সর্বমহলে সেদিন নন্দিত হয়েছিল বিপুল ভাবে।আজ ১২ বছর পরে ২০১৭ সালে অনেক আশা ভরসার প্রতীক পাঠাগারটি অবহেলায়, অযত্নে কীট পতঙ্গ ও সরীসৃপদের অভয়াশ্রমে পরিনত হয়েছে। এর চেয়ে বেশি দুর্ভাগ্য জনক আর হতে পারে না।তিনি আরো বলেন, কাকিনা বাসীদের সবচেয়ে দু:খ জনক হলো যে, ড. মোজাম্মেল হক ও ড. আব্দুস সালাম স্যারের মত শিক্ষানুরাগী ও প্রবীণ বুদ্ধিজীবিগণও কবি’র পাঠাগারটির প্রতি উদাসীন ছিলেন এবং আজও আছেন।
আসলে পাঠাগারটি’র এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। এখনই সেরা সময় পাঠাগারটিকে ডিজিটালাইজড এর মাধ্যমে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর প্রিয় স্থান হিসাবে গড়ে তোলা।কবি শেখ ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগারের বিলুপ্ত কমিটির সহ সভাপাতি তাহির তাহু বলেন, কেয়ারটেকারের মাসিক সম্মানির ব্যবস্থা করলে পাঠাগারটি পুনরায় পাঠকপ্রিয়তা ফিরে পাবে। এজন্য তিনি সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আরতদাড়ের সাথে বিরোধ, রহনপুর বাজারে আম বিক্রি বন্ধ
আম চাষিরা আমের মণ সর্বোচ্চ ৪৮ কেজি করার দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ শুরু
লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়া ৩টি বগি উদ্ধারবিস্তারিত পড়ুন
পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অণুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় নাগরিকবিস্তারিত পড়ুন