রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

উচ্চতর স্কেল জালিয়াতি, মূলহোতাকে পায় না মাউশি!

শহীদুল্লা। রংপুরের পীরগঞ্জের ছোট উজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি ১০ কোডে বেতন পেতেন। হঠাৎ করে তার স্কেল পরিবর্তন হয়ে যায়। ১০ কোড থেকে ৯ কোডে উন্নীত হন তিনি। তাতে তার বেতন ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার স্কেলে উঠে যায়। একই ঘটনা ঘটেছে আরো হাজার খানেক শিক্ষকের বেলায়।

কোনো দৈব কিংবা ভুল থেকে এমনটি ঘটেনি। কোনো যোগ্যতা কিংবা বিধিবদ্ধ শর্ত পূরণের মাধ্যমেও এই ভাগ্যবদল হয়নি। শুধু একটাই শর্ত পূরণ করতে হয়েছে্ তাদের- ‘ভাগ্যবদলের’ চক্রের সন্ধান পাওয়া আর তাদের হাতে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে দেয়া। সেটি তারা পেরেছেনও। চক্রের মাধ্যমে নিজেদের তুলে নিয়েছেন উচ্চ স্কেলে।

কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নিজ ঘরে এই অবৈধ কাজ চলে এলেও চক্রের হোতাদের সন্ধান করতে পারেনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর।

অবৈধভাবে কোড পরিবর্তনের এই মচ্ছব ধরা পড়েছে বটে মাউশির তদন্ত কমিটির কাছে, কিন্তু হোতারা রয়ে গেছে সেই আড়ালেই। তবে কোড পরিবর্তন হওয়া অনেকের উচ্চতর স্কেল রদ করা হয়েছে। কাউকে কাউকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে আরো এক ধাপ নিচে।

যে শহীদুল্লাকে দিয়ে লেখাটা শুরু হয়েছে, তিনি এমনই এক দরবার নিয়ে আজ বুধবার মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেনের কাছে এসেছিলেন। মাউশির পরিচালককে এ-সংক্রান্ত একটি আবেদন দিয়ে শহীদুল্লা বলেন, “স্যার, আমি ১০ কোডে বেতন পেতাম। কিন্তু মাঝখানে আমার স্কেল পরিবর্তন হয়ে একধাপ উপরে ৯ কোডে উন্নীত হয়। কিন্তু এটি অবৈধ হওয়ায় আমার স্কেল নামিয়ে ১১ কোডে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন আমি ১০ কোডে ফেরত যেতে চাই।”

পরিচালক ওই শিক্ষকের কাছে জানতে চান, “আপনি এখন ১০ কোডে ফিরে যেতে চান। কিন্তু অবৈধভাবে ৯ কোডে গিয়েছিলেন কেন?” উত্তরে ওই শিক্ষক বলেন, “স্যার, আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি।”

পরে ওই শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সবাই চায় বেতন স্কেল উপরে উঠুক। আমিও চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন সেই বর্ধিত টাকা ফেরত দিয়েছি। আমার আগের স্কেলে ফেরত যাওয়ার আবেদন দিয়েছি।”

মাউশিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু শহীদুল্লাই নন, অর্থের বিনিময়ে নিম্ন স্কেল থেকে উচ্চতর স্কেলে বেতন নিচ্ছেন মাধ্যমিক স্কুলের সহস্রাধিক শিক্ষক। এর বেশির ভাগই রংপুর বিভাগের্। এমন ঘটনা মাউশির তদন্তে ধরা পড়লেও এর সঙ্গে জড়িত চক্রকে খুঁজে পায়নি তারা। ফলে এমন অনিয়ম-দুর্নীতি করেই যাচ্ছে চক্রটি।

মাউশির যেসব কর্মচারী-কর্মকর্তা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চাইলে পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন বলেন, “আসলে মূল হোতাদের এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। কম্পিউটার শাখায় এটি ঘটেছে বলে তাদের খুঁজে পাওয়াও কঠিন। কেননা কম্পিউটারে বসে কে এটি করেছেন, সেটি প্রমাণ করতে হবে।” তবে সন্দেভাজনদের বদলি ও সাসপেনশন দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন বলেন, “আমরা কম্পিউটারের ডিজিটাল ফরেনসিক পরীক্ষা করার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি। তারা এটা তদন্ত করছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

মাউশি সূত্র জানায়, শিক্ষা প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও সব ধরনের কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা মাউশি নিজেই অনেক বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের স্রষ্টা।

সম্প্রতি ৩৪৪ শিক্ষকের স্কেল পরিবর্তনের ঘটনা ধরা পড়ে মাউশির তদন্তে। গত এপ্রিল-মে মাসে এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) কার্যক্রম চলাকালীন বিধিবহির্ভূতভাবে কোড পরিবর্তন করে নিম্নতর স্কেল থেকে উচ্চতর স্কেলে এমপিওভুক্ত হয়েছিলেন তারা। এ ঘটনায় ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাউশি। ইতিমধ্যে তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

গত জুন-জুলাইয়ের এমপিও কার্যক্রমেও অবৈধভাবে আরও ৫৬৯ জনের কোড পরিবর্তন করে উচ্চতর স্কেল নেয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। তাদের শুনানি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে উচ্চতর স্কেল বাতিল করা হয়।

মাউশির তদন্ত কমিটির প্রধান এলিয়াছ হোসেন বলেন, একটি চক্রের মাধ্যমে এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। চক্রটি সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন না করেই মাউশির ইএমআইএস সেল-এর মাধ্যমে অবৈধভাবে কোড পরিবর্তন করে নেয়। বিষয়টি ধরা পড়ার পর একটি কমিটি করা হয়। কমিটিতে এসব শিক্ষকের শুনানি নেয়া হচ্ছে। এরপর একটি প্রতিবেদন দেয়া হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এলে কোড অবনমন করা হবে।

এলিয়াছ হোসেন বলেন, গত জুন-জুলাইয়ের এমপিও কার্যক্রমে অবৈধভাবে ৫৬৯ জনের কোড পরিবর্তনের বিষয় ধরা পড়লে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে সংশ্লিষ্টদের উচ্চতর স্কেল বাতিল করা হয়।

মন্ত্রণালয় ও মাউশির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আইটি বিশেষজ্ঞ, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা, এমপিও কাজে জড়িত সৎ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে অধিকতর তদন্ত করলে আরো বেশিসংখ্যক জালিয়াতির হদিস মিলবে।

মাউসি সূত্র জানায়, এর আগে ২০১৩ সালে ২৭৩ শিক্ষকের অবৈধভাবে এমপিও নেয়ার ঘটনা ধরা পড়েছিল। তখন ওই শিক্ষকদের এমপিও কাটা হয়। তাদের মধ্যে প্রথম দফায় ২৭, পরে ১৩, তৃতীয় দফায় ৫২ ও সর্বশেষ ১৮১ জনের এমপিও বাতিল করা হয়।

মাউশি সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা দেশে সাড়ে ২৮ হাজার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ৫ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) সুবিধা পাচ্ছেন। সাধারণত নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজ মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি করে থাকে। এর বাইরে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগ, ইনডেক্সধারী, শূন্যপদে নিয়োগ, টাইম স্কেল ও বিডিএড স্কেলের মতো এমপিওগুলো মাউশি করে থাকে। আর গ্রেড পরিবর্তন করতে হলে শিক্ষকতা পেশায় আট বছর সম্মানজনক চাকরির শর্ত রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির একাধিক কর্মকর্তা জানান, শর্ত পূরণের আগেই এক শ্রেণীর শিক্ষক একটি অসাধু চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে কোড পরিবর্তন করে নিচ্ছেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই কাজটি করছে চক্রটি। শিক্ষা ভবনের এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইআইএমএস) সেলের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত এই চক্রটি বিস্তৃত। এখন মাউশি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অনুসন্ধান করে ওই শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে।

মাউশির স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা শাখা জানায়, দুই দফায় (এপ্রিল-মে ও জুন-জুলাই) সোয়া ৯০০ শিক্ষক-কর্মচারী অনিয়ম করে কোড পরিবর্তন করেছেন। এর মাধ্যমে প্রতিজন এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত উত্তোলন করেছেন। ৯০০ জনের পেছনে তিন মাসে সরকারের অতিরিক্ত প্রায় ৭০ লাখ টাকা গচ্চা গেছে। তবে গত জুলাই মাসের অধিকাংশই টাকা ফেরত দিয়েছেন। আর মে মাসের টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ফেরত দিতে শুরু করেছেন।

সিন্ডিকেটের প্রধান সন্দেহভাজন

ওরাকল ও সিনোসিস আইটি ফার্মের সফটওয়্যার ব্যবহার করে এমপিও কার্যক্রম পরিচালনা করছে মাউশির কম্পিউটার সেল (ইএমআইএস)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমপিওর মতো কার্যক্রম পরিচালনা করা ওরাকল সফটওয়্যারের সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠান সিনোসিস আইটি ফার্ম কাজ করছে বলে জানায় মাউশি। ইএমআইএস থেকে যেকোনোভাবে কোড পরিবর্তন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে মাউশি। এ জন্য মাউশির কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্টের দায়িত্ব থেকে আবুল ফজল মো. বিল্লাল হোসেনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মাউশির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সন্দেহের তীর তার দিকেই। কারণ তার পাসওয়ার্ড ছাড়া ড্যাশ বোর্ডে কারও পক্ষে ঢুকে চূড়ান্তভাবে কোড পরিবর্তন সম্ভব নয়। ঢাকাটাইমস

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না

গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন

জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে ‍সুবিধা পাওয়া যাবে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন

ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন

  • শাকিব: আমার ক্যারিয়ারের সব বিগ হিট সিনেমা ঈদ ছাড়াই এসেছে
  • এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান ৬১.১% মানুষ, সংস্কার শেষে ৬৫.৯%
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুপক্ষের সংঘর্ষ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ১০ মৃত্যু
  • জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করার পরামর্শ কমিশনের
  • দেশের সংকটে যে সমাধান দেখছেন তারেক রহমান
  • যে কারণে প্রতিমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • ‘হেফাজতের আপত্তির মুখে’ নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা বন্ধ
  • স্বর্ণের দামে ফের বড় লাফ, এগোচ্ছে নতুন রেকর্ডের দিকে
  • টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
  • রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
  • যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা