এই গ্রামে বংশ পরম্পরায় অন্ধত্বের অভিশাপ

‘আমরার দুঃখ খইয়া খিতা খরতাম। আমরা তো মানুষ নায়। এর লাগি তো খেউ খোনোদিন খোঁজ নেয় না। ফুরিরে (মেয়ে) বিয়া দিছলাম, হেও খানা (অন্ধ) ওই গেছে। জামাইয়ে আরেক বিয়া খইরা তারে ফিরত দিলাইছে। আমরার তিন ভাইওর পরিবারও ২৫ জন খানা। বুঝরা তো আমরা আর খিলা থাকমু।’
এ সব কথা বলছিলেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পুটামারা গ্রামের খানাদের বংশ হিসেবে পরিচিত একটি বাড়ির প্রধান মুরব্বি খুরশিদ মিয়া।তিনি জানালেন, তাঁর বয়স ১০০ ছাড়িয়েছে। ছেলেরাও এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছে।
বয়সের ভারে ন্যূব্জ খুরশিদ মিয়া তাঁর দুঃখের সংসারের গল্প বলতে গিয়ে বার বারই ভেঙে পড়ছিলেন। তিনি জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষও অন্ধ ছিলেন। তাঁর মা শরবান বিবি ও বাবা আরজু মিয়াও যৌবন পাড়ি দিতে না দিতেই অন্ধ হয়ে যান। এখন তাঁরা ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিনিসহ তিনজন অন্ধ। আর তিন ভাইয়ের ঘরে সন্তানদের মধ্যে বেশির ভাগই অন্ধত্ব বরণ করেছেন। এমনকি খুরশিদ মিয়াদের নাতি-নাতনিদের অনেকেই বংশের অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছেন।
তিন ছেলে ও তিন মেয়ের বাবা খুরশিদ মিয়া মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে টাকা সংগ্রহ করে এবং সম্পত্তি বিক্রি করে তাঁর মেয়েদের বিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর মধ্যে দুজন স্বামীর সংসারে থাকলেও তার আদরের ছোট মেয়েকে ফিরে আসতে হয়েছে। বংশের অন্ধত্ব তাঁকে দুই মেয়ে নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য করেছে।
এ বংশের যারা এখন সুস্থ রয়েছেন তাঁরাও শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। খুরশিদ মিয়ার ভাতিজা কামাল উদ্দিন ও নাতি আব্দুল মুমিন বলেন, পরিবারের যাঁরা অন্ধ রয়েছেন তাঁরা উপার্জন করেন না। সুস্থরাই কাজ করে পরিবার-পরিজনের আহার জোটান। তবে বংশের এ অভিশাপ যদি তাদেরও পেয়ে বসে তাহলে সবাইকেই না খেয়ে মরতে হবে।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে ঝড়-তুফান তাদের ঘরের টিন উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এখন বৃষ্টি হলে তাদের কষ্টের আর সীমা থাকে না।
এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রত্যেক মানুষের তাঁর আত্মীয়স্বজন কিংবা বংশের অন্যদের সঙ্গে জেনেটিক মিল রয়েছে। যখন তাঁরা নিজেদের মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তখনই এর প্রবণতা বেড়ে যায়। প্রথমে তাদের ঘন ঘন মাথা ব্যথা হয়। তারপর ধীরে ধীরে চোখের নার্ভ শুকিয়ে তারা অন্ধ হয়ে যান। এ বিষয়ে তিনি অবগত রয়েছেন জানিয়ে বলেন, তাঁরা চাইলে সহযোগিতা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবির একটি বংশের অন্ধত্ব সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি তাদের খোঁজ খবর নেব।’
ইছাকলস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুটি মিয়া বলেন, উপজেলার সীমান্তে অবস্থান এ ইউনিয়নের। যার দরুণ চরম অবহেলিত। আর অবহেলিত ইউনিয়নের সব অধিকার থেকে বঞ্চিত পুটামারা গ্রাম। যে গ্রামের মানুষ নৌকা ছাড়া চলাচল করতে পারে না। সেখানে অন্ধের বংশ কীভাবে টিকে থাকবে। তারপরও নিজ উদ্যোগে তিনি তাদের ১৫ জনকে কর্মসংস্থনের সুযোগ করে দিয়েছেন। চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন চেয়ারম্যান হিসেবে কদিন হয়েছে দায়িত্ব পেয়েছি। তাদের চিকিৎসাসহ নাগরিক সব অধিকার প্রদানে কাজ করব।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

সিলেটের জঙ্গি নেতা আব্দুল বারি ও শামসু জামিনে মুক্ত
নিজস্ব সংবাদদাতা: শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিবাদী সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এরবিস্তারিত পড়ুন

সিলেটে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
দ্বিতীয় দফার বন্যায় সিলেট অঞ্চলে সাত লক্ষাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দি।বিস্তারিত পড়ুন

সিলেটে ৯ ঘণ্টা পর রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক
চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফেঞ্চুগঞ্জে দুটি বগি লাইনচ্যুতবিস্তারিত পড়ুন