আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা বছরের প্রথম দিন। বিগত বছরের সব গ্লানি মুছে সকল জীর্ণতা, শীর্ণতা দূরে ঠেলে দিয়ে নতুন করে জেগে উঠার প্রত্যাশায় উন্মুখ বাঙালি জাতি। প্রভাতের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে তারা গানে গানে বরণ করে নিবে নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখকে।

পহেলা বৈশাখ উদযাপনে বর্ষবরণের আয়োজন সকল বাঙালির সার্বজনীন একটি অসাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠান। মূলত কৃষক সমাজের ঘরে ফসল তোলা আর খাজনা আদায়ের মধ্যে সামঞ্জস্যতা আনতেই শুরু হয় বাংলা বছরের। তবে মোগল সম্রাট আকবরের বাংলা ক্যালেন্ডার বঙ্গাব্দের শুরু থেকে বর্ষবরণ আনুষ্ঠানিকতা পায়।

অন্যান্য বছরগুলোর মতো এবারও বর্ষবরণে জমজমাট আয়োজন ঘটবে রাজধানী ঢাকায়। নতুন বছরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পহেলা বৈশাখে রমণার বটমূলে শুরু হবে ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথের আগমনী গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ এর মাধ্যমে নতুন বছরকে স্মরণ করবে বাঙ্গালীর প্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।

বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এ উৎসবকে ঘিরে বরাবরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বৈশাখ উপলক্ষে বের করা হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের শোভাযাত্রায় স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে রবিঠাকুরের গানের লাইন ‘অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে…’।

এদিকে, বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করেছে সরকার। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিবেন। বাংলানববর্ষের তাৎপর্য তুলে ধরে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।

এ উপলক্ষে বিভাগীর শহর, জেলা শহর, সকল উপজেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ আলোচনাসভা ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করবে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটসমূহ, বিসিক ও ছায়ানট নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউণ্ডেশন ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে।

নববর্ষের প্রথম দিন সকল কারাগার, হাতপাতাল ও এতিমখানায় উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউণ্ডেশন এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় জাদুঘর ও প্রত্নস্থানসমূহ সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব ব্যবস্থাপনায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করছে। অভিজাত ও হোটেল ও ক্লাব বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।

সকল সরকারি বেসরকারি টিভি ও বেতার বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এবং স্ব-স্ব উদ্যোগে বাংলা নববর্ষের উপর বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন এবং স্ব-উদ্যোগে বাংলা নববর্ষের উপর বিশেষ অনুষ্ঠানমালার প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিকগুলোও নববর্ষ উপলক্ষে প্রকাশ করেছে বিশেষ সংখ্যা।

এছাড়া বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ উদযাপনকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।