একজন ভাষাসৈনিকের দিন কাটে অনাহারে-অর্ধাহারে
১৯৫২ সালে মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য আর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাঙালিরা আন্দোলন করেছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। রাজ পথে ঢেলে দিয়েছিল বুকের তাজা রক্ত। সে লড়াইয়ে বাঙালিরা সফলও হয়েছে।
মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আর বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ আজ বাংলা ভাষায় কথা বলাসহ দাপ্তরিক সকল কাজ করছে। এছাড়া মাতৃভাষা দিবসটি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে মহান দিবস হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির এই দিনটি ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সে সময় থেকে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি দেশে বিদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলেও সেই সময়ের ভাষাসৈনিকেরা রয়ে গেছে অবহেলিত। রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতিও মেলেনি তাদের। অনেকে অসহায় হয়ে বা কেউ রোগে ভুগে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকের কপালে জোটেনা চিকিৎসার টাকা। ফলে কষ্টে জীবন কাটে তাদের। মাঝে মাঝে কোনো সভা সেমিনারে আমন্ত্রণ পেলেও অনেকের জীবন কাটে নিভৃতে আর নিঃসঙ্গতায়।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নের বালাপুকুর গ্রাম। এই গ্রামেরই একজন কমরেড সিরাজুল ইসলাম। তিনি বাংলা ভাষা রাষ্ট্র চাই আন্দোলনের একজন নির্ভীক সৈনিক। বয়স একশ পেরিয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তার বয়স এখন ১১৬ বছর। ব্যক্তি জীবনে স্ত্রী , ৬ ছেলে আর ১০ মেয়ে নিয়ে তার পারিবারিক জীবন। ছেলে মেয়েরা সবাই নিজ নিজ কর্মজীবনে ব্যস্ত।
সহায় সম্বল বলতে শুধু মাত্র ৫ শতাংশ জমি। আর বসত বাড়ি। বয়সের ভারে শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। কোনো কাজ কর্ম করতে পারেন না। ফলে উপার্জন কমে গেছে। অর্থাভাবে থেমে আছে চিকিৎসা। ভাষা আন্দোলনের এই সৈনিকের বর্তমান দিন কাটছে অনাহারে, অর্ধাহারে। খোঁজ নেয়ার মতো তেমন কেউই নেই। সন্তানরাও তাকে এখন বোঝা মনে করছেন।
এদিকে সিরাজুল ইসলাম নিজেই বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করে দমে যাননি। বড় ছেলে নুরজ্জামানকে উদ্বুদ্ধ করেছেন মুক্তিযুদ্ধে যেতে। দেশের জন্য লড়াই করতে। দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছে। কিন্তু ভাষাসৈনিক সিরাজুলের মুক্তি মেলেনি। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই তার এখনো শেষ হয়নি।
বাড়িতে অবস্থানরত তার ছেলে রজব আলী জানান, বাবা ভাষার জন্য লড়াই করেছেন। কিন্তু ভাষাসৈনিক হিসেবে কোনো স্বীকৃতি পায়নি আজো। সকল ভাষাসৈনিককে স্বীকৃতি দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
স্পষ্ট করে কথা বলতে অক্ষম সিরাজুল ইসলাম জানান, তার জীবনে শেষ চাওয়া সরকার যেন তাকে স্বীকৃতি দেয়। সমাজে তিনি যেন ভাষাসৈনিক হিসেবে মর্যাদা পান। তার দাবি সকল ভাষা শহীদদের নামে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সড়কের নামকরণ করা হোক। তাহলেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে যেমন দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিক তেমনি বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার নিয়েও বাঙালি জাতিকে আন্দোলন ও জীবন দিতে হয়েছে। বাংলামেইল
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপকবিস্তারিত পড়ুন
দুই দফা কমার পর ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম
টানা দুই দফা কমার পর দেশের বাজারে ফের স্বর্ণের দামবিস্তারিত পড়ুন
চট্টগ্রামে দুর্ঘটনার কবলে হাসনাত-সারজিসের বহরের গাড়ি
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত শেষে ফেরার পথে সড়কবিস্তারিত পড়ুন