একবার চুমুতে ১৫ বছরের শান্তি
পাথুরে ব্যালকনির দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে আলেজান্দ্রো মার্টিন এবং পওলিনা অ্যাকভেডো নামের দুই কিশোর-কিশোরী। অনেক ধৈর্য্যের সঙ্গে তারা দাঁড়িয়ে আছে তাদের চুমু দেয়ার পালা আসার জন্য। যে দেয়ালটির পাশে এই কিশোর-কিশোরী দাঁড়িয়ে আছে, সেই দেয়ালটি লাল রঙে রঞ্জিত। আর কে না জানে, লাল রং হলো ভালোবাসায় সৌভাগ্যের প্রতীক। মার্টিন তার বিশতম জন্মদিনে নিজের প্রেমিকার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে পরবর্তী জীবনে সৌভাগ্যের প্রত্যাশায়।
জন্মদিনের উপহার হিসেবে আলেজান্দ্রো মার্টিন তার প্রেমিকা অ্যাকভেডোকে নিয়ে এসেছে গুয়ানাজুয়াতো শহরে। যদিও মেক্সিকোর সান লুইস পটাসিতে তাদের বসতি। শুধুমাত্র প্রেমকে মহিমান্বিত করার জন্য তারা নিজ জেলা থেকে এত দূরের শহরে এসেছে। মার্টিন তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলে, ‘এই স্থানটির সম্পর্কে অনেকের মুখেই আমরা শুনেছি। অনেক মানুষই আমাদের এখানে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাই আজ এখানে আসা।’
এই অঞ্চলের ঐতিহ্য অনুযায়ী তারা একে অপরকে চুমু দিয়েছে কি না জিজ্ঞেস করা হলে লজ্জ্বিত প্রেমিক-প্রেমিকা সমস্বরে বলে ওঠে ‘না’। অবশ্য কয়েক মিনিট পরেই তাদের সেই কাঙ্ক্ষিত সময় এসে যায় চুমু দেয়ার। এরকম বহু নর-নারী অপেক্ষা করে আছে ঈশ্বরকে সাক্ষী রেখে প্রিয়জনের ঠোঁটে ঠোঁট রাখার। পরিবার-সমাজ কিংবা সংস্কৃতি তাদের কোথায় নিয়ে যাবে তারা কিছুই জানে না। কিন্তু তবু নিজেদের সম্পর্কের স্বীকৃতিটুকু দিতে তারা মিলিত হতে চাইছে একে-অপরের সঙ্গে।
মার্টিন ও অ্যাকভেডোর মতো আমার প্রেমিকা পওলিনাকে নিয়ে আমিও যাই গুয়ানাজুয়াতো এবং তাকে নিয়ে বিখ্যাত চুমুর জগতে পৌঁছায়। নানান বয়সের মানুষ একে-অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। একটি সরু গলির পাশের দেয়ালে ঠেস দিয়ে আমাদের মতো অনেক নর-নারীই দাঁড়িয়ে আছেন নিজেদের সময় আসার অপেক্ষায়। নির্দিষ্ট স্থানে চুমু দেয়ার পরে অপর একটি সরু গলি দিয়ে বের হয়ে যেতে হয়, সেখানে গেলে দেখা যায় অনেক নারী পুরুষ একে-অপরের ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁট মিশিয়ে আলিঙ্গনরত অবস্থায় রয়েছে। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য, যেখানে প্রতিদিন হিংসা-হানাহানি আর সংঘর্ষের বলি হয়ে অগুনতি মানুষ মারা যাচ্ছে।
চুমুর জগতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে অনেক স্বপ্রণোদিত গাইডের দেখা মিলবে। তাদের মুখেই শোনা যাবে অ্যানা ও কার্লোসের করুণ প্রেমকাহিনী। কোনো এক গাইডের ভাষায়, ‘অ্যানা ছিলেন খুব ধনী স্প্যানিয়ার্ড, যিনি ওই ব্যালকনির বা দিকে বাস করতেন। ভ্যালেন্সিয়িানার কাছাকাছি একটি খনিতে কাজ করতেন গরিব কার্লোস। এক রাতে অ্যানার বাবা এই দুই প্রেমিক-প্রেমিকাকে সরু ব্যালকনির দেয়ালের পাশে চুম্বনরত অবস্থায় দেখে ফেলে। ওই দৃশ্য দেখার পর ক্ষুব্ধ বাবা সাফ জানিয়ে দিলেন, আর যদি এমন দেখা যায় তাহলে তিনি তার মেয়েকে হত্যা করবেন। পরবর্তী দিন অ্যানা ও কার্লোস আবারো পরস্পরকে চুমু দেয় এবং বাবার কাছে ধরা পড়ে যায়। তখন ক্ষুব্ধ বাবা তার মেয়েকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন।’ যদিও কিছু গল্পকার এমনও জানান যে, অ্যানাই ব্যালকনি থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন এবং ঘাড় ভেঙে মারা যান। যা-ই হোক, ঘটনাটি এরকম যে সমাজের ধনী-গরিব, জাত-পাত ইত্যাদি বিভেদ আগেও যেমন ছিল, আজও তেমন আছে। তাই তো যুগে যুগে সময়ের ফেরে নতুন নতুন করুণ প্রেমের কাহিনী আমাদের হৃদয়কে সিক্ত করে।
এমন প্রেমিক-প্রেমিকা পাওয়া যাবে না যারা চুমুর জগতে গিয়েছেন কিন্তু একে-অপরকে চুমু দেননি। অবশ্য এর পেছনেও একটা ছোট্ট কারণ আছে। যদি কেউ ওই স্থানে দিয়ে চুমু না দেয় তাহলে আগামী সাত বছর তার জীবনে দুর্ভাগ্য নেমে আসবে। আর যদি চুমু দেয় তবে পরবর্তী পনেরো বছর তাদের সুখে শান্তিতে কাটবে। আর কে সেধে সেধে জীবনে দুর্ভাগ্য নিয়ে আসতে চায়। সবচেয়ে বড় কথা, পৃথিবীতে যত পর্যটনকেন্দ্র আছে তার সবগুলোই মানুষের দৃষ্টিসীমা পর্যন্তই বিদ্যমান। কিন্তু মেক্সিকোর এটাই একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র যেখানে পর্যটকদেরও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে যেতে হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন