একাত্তরের দোসরদের জন্য পাকিস্তানের মায়াকান্না চলছেই
মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের ফাঁসি কার্যকর এবং রায় নিয়ে বারবারই ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করে আসছে। এ জন্য একাধিকবার বাংলাদেশে তাদের দূতকে সতর্ক করলেও কাজে আসেনি। এর আগে নিমাজী ও কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের পর দেশটির প্রতিক্রিয়া স্পষ্টতই ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর শামিল। দুটি ঘটনাতেই দেশটির হাইকমিশনারকে ডেকে সতর্ক করে বাংলাদেশ। তার পরও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ এবং সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের পরও সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে পাকিস্তান।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বলছেন, নিজামী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, সাকা চৌধুরীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্ত্র ধরেছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে। শত-হাজার-লাখ বাঙালি হত্যা করে তাদের ‘মনিব’ পাকিস্তানিদের সুদৃষ্টি অর্জনের চেষ্টায় রত ছিলেন যুদ্ধকালীন নয়টি মাস। দোসরদের এই কীর্তির কারণে ৪৪ বছর পরও কৃতজ্ঞ পাকিস্তান। এই কৃতজ্ঞতা থেকেই পাকিস্তান সরকার নানা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে বলেও মনে করেন তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বলেন, পাকিস্তানের এমন বিবৃতি প্রমাণ করে তারা এখনও বাংলাদেশের বিষয়ে ৭১ সালের অবস্থানে আছে। তাদের এমন বিবৃতি ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও আন্তর্জাতিক আইনের আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক আইনের পরিপন্থি।এ কারণেই সরকারের পক্ষ থেকে সেদেশের হাইকমিশনকে তলব করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, এ বিবৃতির পাকিস্তান প্রমাণ করলো সাকা ও মুজাহিদ বাংলাদেশের নাগরিক ছিল না। কার্যত পাকিস্তানের প্রতি তারা অনুগত ছিল।
প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুানালের মাধ্যমে যে বিচার হয়েছে তা ছিল স্বচ্ছ। যেখানে আসামিকেও পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেয়া হয়। তাই এ স্বচ্ছবিচার নিয়ে কে কি বললো সেটা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই। অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পাকিস্তানের নাক গলানোর কিছু নেই।
প্রবীণ এ সাংবাদিক বলেন, ৭১ সালের পাকিস্তানের চিহিৃত যে ১৯৪জন যুদ্ধাপরাধী ছিল যাদের নিজ দেশে বিচার করবে বলে সিমলা চুক্তি করে নিয়ে গেছে। কিন্তু পাকিস্তান তাদের বিচার করেনি। আমি তাদের বিচারের দাবি করছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি এসকল চিহিৃত যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করতে পাকিস্তানের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে।
এর আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরও উদ্বেগ জানিয়েছিল পাকিস্তান। সেই সময়ে ফাঁসির রায় কার্যকরে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় এবং সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যে রাখেন।
এমনকি দেশটির সরকারকে বাংলাদেশ আক্রমণের আহ্বানও জানিয়েছিল পাকিস্তান জামায়াত। দেশটির আরো অনেক রাজনীতিকই কাদের মোল্লা ইস্যুতে বাংলাদেশের সমালোচনা করে।
সেই সময়ে পাকিস্তান হাইকমিশনার আফরাসিয়ার মেহদী হাশমী কোরেইশিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এসব বিষয়ের ব্যাখ্যা চেয়ে কড়া ভাষায় কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখার আহবান জানানো হয়। সেই সঙ্গে তাকে একটি কূটনৈতিক পত্রও দেয়া হয়েছিল।
যদিও এর পরেই সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাসনিম আসলাম বলেন, ‘পাকিস্তানের পার্লামেন্টে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর নিয়ে গৃহীত নিন্দা প্রস্তাব বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নয়।’ তাঁর মতে, ‘বাংলাদেশে যা ঘটেছে, অবধারিতভাবে সেটা দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। পার্লামেন্টে কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করার মানে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নয়।’
এখানেই শেষ নয়, এরপর জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাদ ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের কড়া সমালোচনা করে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলি খান তখন বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার জামায়াতে ইসলামীর নেতার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ার অপপ্রয়োগ ঘটিয়েছে, আইনকে ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে।…বাংলাদেশে যা ঘটছে তা যদিও দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়, তবু ১৯৭১ ও তার পরবর্তী ঘটনাবলি-সংক্রান্ত বিষয়গুলো থেকে পাকিস্তান দূরে সরে থাকতে পারে না। সেই দুঃখজনক ঘটনাবলির প্রায় ৪৫ বছর পরেও বাংলাদেশ সরকার অতীতেই বাস করছে এবং সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ‘‘ক্ষমা করো এবং ভুলে যাও” নীতিটি সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করছে বলে মনে হচ্ছে।…বাংলাদেশ সরকার কেন অতীতের কবর খুঁড়ে পুরোনো ক্ষতগুলো উন্মোচনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে তা বোধগম্য নয়।’
নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের সমালোচনার প্রতিবাদে তৎকালীন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আহমেদ হুসাইন দায়ুকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। এ সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানকে ‘নাক গলাতে’ বারণ করে তাঁর কাছেও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের নেতা নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের খবরে ওই বছরের ১ নভেম্বর এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলী গভীরভাবে শোকাহত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
আরেক যুদ্ধাপরাধী আজীবন কারাদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত গোলাম আজমের মৃত্যুতে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে গায়েবানা জানাজা পড়েন সে দেশের জামায়াতের নেতা-কর্মীরা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে ‘আজীবন বন্ধু’স্বীকৃতি দেয় দেশটি।
গোলাম আযমের গায়েবানা জানাজা পড়ান পাকিস্তান জামায়াতের আমির সিরাজুল হক। জানাজার সময় তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক গোলাম আযমের শাহাদতে আমরা গর্ববোধ করি। ঢাকার কারাগারে নির্যাতনমূলক পরিবেশে গোলাম আযমের শাহাদত বরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরাউন শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকারের স্থায়ী পতনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেছে’। ঢাকাটাইমস
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন