একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে ২০ কোটি টাকার ফুলের ব্যবসা
বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস, সরস্বতী পূজা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে রমরমা ব্যবসা করেছেন দেশের ফুল ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, শুধু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে গত তিনদিনে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ কোটি টাকার ফুল কেনাবেচা হয়েছে। সারা দেশে এর পরিমাণ ২০ কোটি টাকা ছাড়াবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ফেব্রুয়ারি মাসকে ফুল ব্যবসার মৌসুম বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এ মাসের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান ঘিরে ফুলের ব্যবহার বাড়ে। তবে এবার অন্য বছরগুলোর চেয়ে ফুলের চাহিদা একটু বেশি বলেই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় চলতি বছর বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠান উদযাপনে মানুষের মধ্যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।
বছরের অন্যান্য সময়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, নবীনবরণ, স্টেজ সাজানো, গাড়ি-বাড়ি সাজানোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুল ব্যবহার হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে বিশেষ অনুষ্ঠানগুলো থাকায় ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। আর চাহিদা বাড়লে ফুলের দাম বাড়ে।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য
শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া বলেন, ‘ফুল কিনি বেশি দামে। তবে তেমন বেশি দামে বিক্রি করতে পারি না। অন্য সময় ২৬ ইঞ্চি ফুলের ডালার দাম এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা থাকে। এখন এক হাজার টাকা দাম বললে ক্রেতারা বেশি মনে করছে। আসলে কাঁচামাল কিনতেই ব্যয় হয় বেশি। ৮০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা দামের ফুলের ঢালা আছে। তবে এক হাজার টাকা দামের ঢালাগুলোই বেশি বিক্রি হয়।’
তবে ফুলের ক্রেতা হামিদুর রহমান বলেন,‘আমি এক সপ্তাহ আগে একটি শ্রদ্ধাঞ্জলির ডালা অর্ডার করেছিলাম ৮০০ টাকায়। এখন এটি এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার ফুলের দাম অনেক বেড়েছে।’
শাহবাগে ফুলের বাজারে রজনীগন্ধা, গাঁদা, জারবেরা, কেলোনজরা, চন্দ্রমল্লিকা, লাল ও সাদা গোলাপ, ভুট্টা, বেলি, কামিনী, সূর্যমুখী, ডায়মন্ড, গরম ফেনিয়া, রতপুসুটি, টুনটুনি, জিপসি, স্টারকলি, ডালিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল বিক্রি হয়। তবে বেশ কয়েকটি ফুল আবার একাধিক রঙের।
বাংলাদেশে সাধারণত সারা বছরই ফুল উৎপাদন হয়। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়কে ফুল উৎপাদনের মৌসুম ধরা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, সারা দেশেই কমবেশি ফুল উৎপাদন হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হয় যশোরে। জেলাটির গাঁদা ও সাদা রজনীগন্ধার মান ভালো। সাভারের গোলাপ ভালো হয়। এ ছাড়া ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও ঢাকার আশপাশের জেলায়ও ফুল চাষ হয়।
শাহবাগের ফুলের পাইকারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো হওয়ায় উৎসব অনুষ্ঠান ভালোভাবে পালিত হচ্ছে। এতে ফুলের চাহিদা বেশি বেড়েছে। এ মাসের শুরুতে ফুলের যে দাম ছিল, এখন তার চেয়ে অনেকটা বেড়েছে।’
শাহবাগে শনিবার রাতে মানভেদে প্রতি হাজার গাঁদা ফুল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, প্রতিটি গোলাপ ১৫ থেকে ২০ টাকা ও প্রতিটি গ্লাডিওলাস ১২-১৫ টাকায় পাইকারি হিসেবে বিক্রি হয়।
পাইকারি ব্যবসায়ী ও শাহবাগ ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ফুলের দাম মূলত উৎসবের ওপর নির্ভর করে। যেমন : ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদা বাড়ে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে গাঁদার চাহিদা বাড়ে। উৎসবে ফুলের চাহিদা ও দাম বাড়লেও খুচরা ব্যবসায়ীদের তুলনামূলক লাভ কমেছে। এসব দিবসে মহল্লায় মহল্লায় অনেকেই ফুল বিক্রি করেন। এতে খুচরা বিক্রির দোকান ও ফুলের বাজারে চাহিদা সেভাবে বাড়েনি। তবে এবার কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছে।’
শাহবাগের ফুলের আড়তকে রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার ধরা হয়। এখানে ৫২টি পাইকারি ও শতাধিক খুচরা ফুলের দোকান রয়েছে। রাজধানীর দ্বিতীয় ফুলের বাজার আগারগাঁওয়ে। এ ছাড়া ফার্মগেট, মিরপুরসহ আরো কয়েকটি এলাকায় ফুলের বাজার রয়েছে।
বাড়ছে ফুলের উৎপাদন
ফুল ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত ফুল দিয়েই অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ সম্ভব। তবে বিশেষ উৎসবে ফুলের চাহিদা বাড়লে থাইল্যান্ড, ভারত, চায়না থেকে ফুল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে চায়না রোজ, মাম, কারনেশেন, জারবেরা, হোয়াইট রোজ, ইয়েলো রোজ রয়েছে। তবে আগামী দুই বছরের মধ্যে এসব ফুলও আমদানির প্রয়োজন হবে না। দেশেই উৎপাদিত হবে।’
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি বাবুল প্রসাদ বলেন, ‘ভাষা দিবস ঘিরে দেশে আনুমানিক ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। তবে এ দিবসে ফুলের ব্যবহার টাকায় পরিমাপ করতে গেলে শুধু এর পরিমাণ আরো বাড়বে। কারণ অনেকেই নিজের বাগানে উৎপাদিত ফুল দিয়ে ভাষা দিবস পালন করে। শুধু শাহবাগেই ফুল বেচাকেনার পরিমাণ গত তিন দিনে ৮-৯ কোটি টাকার। আর সারা দেশেই টুকিটাকি ফুল কেনাবেচা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামেও ফুল বেচাকেনার একটি বড় বাজার রয়েছে। সেখানেও অনেক টাকার ফুল বিক্রি হচ্ছে।’
বাবুল প্রসাদ আরো বলেন, ‘আগে ভাষা দিবস শুধু ঢাকায় গুরুত্ব দিয়ে পালন হতো। এখন তো সারা দেশেই এর বড় আয়োজন হচ্ছে। অন্য যেকোনো দিবসের চেয়ে ভাষা দিবসে ফুলের ব্যবহার বাড়ে। এবার ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। দামও ভালো যাচ্ছে। কৃষকরাও ফুলের ভালো দাম পাচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের অর্থনীতিতে ফুল ব্যবসার অবদান বাড়ছে। সারা দেশের প্রায় পাঁচ লাখ লোক সরাসরি এ ফুল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। দেশে ফুলের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও রয়েছে সরকারি উদাসীনতা। সরকার উদ্যোগ নিলেই সম্ভাবনাময় এ খাতে আরো বেশি বিনিয়োগ করবে অনেকে।
ফুল রপ্তানি নিয়ে ইপিবির তথ্য
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) ফুল রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৯০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৮ কোটি টাকা।
ইপিবির মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ফুল রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ দশমিক ৩২ শতাংশ কম। কিন্তু গত অর্থবছরের (২০১৪-১৫) একই সময়ের চেয়ে এর পরিমাণ প্রায় ৭ শতাংশ বেশি।
বাবুল প্রসাদ বলেন, শুধু শাহবাগে ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনে চার থেকে সাড়ে চার কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। সারা দেশের হিসাব করতে গেলে দুইদিনে এর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো। তবে একই পরিমাণ বিক্রি হয়েছে শুধু ভাষা দিবস ঘিরে। ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি দেশে বিপুল পরিমাণ ফুল বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনে গোলাপ বা আরো তিন চার ধরনের ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। একটি দুটি ফুল বা ফুলের তোরার বেশি কেউ কেনেন না। সব শ্রেণির মানুষ এসব দিবস তেমন পালন করেন না। কিন্তু ভাষা দিবস সারা দেশেই বিপুল উৎসাহে পালিত হয়। ফলে চাহিদা বাড়ে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন