একেকটি ভোট হোক একেকটি অন্যায়ের প্রতিবাদ, নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি খালেদা জিয়া
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব ধরনের ভয়-ভীতি ও উসকানি উপেক্ষা করে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে ‘ধানের শীষ’ প্রতীককে জয়যুক্ত করার জন্য পৌনে পাঁচ লাখ ভোটারের প্রতি আহ্বান রেখেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
‘নৌকা’ আর ‘ধানের শীষের’ মর্যাদার এ লড়াইয়ে ময়দানে প্রচার শেষ হওয়ার একদিন আগে আজ সোমবার এক বিবৃতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ নির্বাচনে একেকটি ভোট হবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একেকটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ট প্রতিবাদ। তাঁর আশা, ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জবাসী ‘নীরব ভোট-বিপ্লব’ করবে।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই নির্বাচনে আমরা নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট আইনজীবী, সজ্জন ও সাহসী ব্যক্তি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছি। পরীক্ষিত ও যোগ্য ব্যক্তিদের কাউন্সিলার পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের পৃথক পৃথক মার্কা রয়েছে। তবে মেয়র পদে আমাদের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের মার্কা ‘ধানের শীষ’।’’
“এই ‘ধানের শীষ’ মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘ধানের শীষ’। এই প্রতীক বিএনপির প্রতীক, আমার প্রতীক। এই ‘ধানের শীষ’ সন্ত্রাস ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের। এই ‘ধানের শীষ’ শান্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতীক। এই ‘ধানের শীষ’ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সংহত করা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার রক্ষার প্রতীক।’’
খালেদা জিয়া বলেন, “আমি আশা করি, নারায়ণগঞ্জবাসী আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘ধানের শীষে’ ভোট দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন খানকে মেয়র নির্বাচিত করবেন। আমি অনুরোধ জানাই, আমাদের মনোনীত কাউন্সিলার প্রার্থীদেরও একইভাবে নির্বাচিত করবেন।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জের অধিবাসী এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা জুলুম, নির্যাতন, গুম, খুন, হামলা, মামলা, হয়রানি, দখল, দলীয়করণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসসহ নানা ধরনের অন্যায়ের শিকার।’
‘আপনাদের এক-একটি ভোট হবে এসবের বিরুদ্ধে এক-একটি বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। আমি আশা করি, আপনারা নারায়ণগঞ্জে ২২ ডিসেম্বর নীরব ভোট বিপ্লব ঘটাবেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন আশা করেন, ‘দল-জোটের নেতাকর্মী ও জনগণ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সাহস ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন এবং নির্বাচনী ফলাফল শেষে বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরবেন।’
আগামী ২২ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বাইরে আরো পাঁচজন মেয়র পদপ্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন।
এখানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনেরও এ প্রচারে অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
বিষয়টি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মামলা মোকদ্দমার হাজিরা, শারীরিক অসুস্থতা ও অন্যান্য ব্যস্তবতা ও সমস্যার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমার পক্ষে সশরীরে এই নির্বাচন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জবাসীর মাঝে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের দল-জোটের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আপনাদের আমার সালাম ও অনুরোধ পৌঁছে দিয়েছেন।’
এই নির্বাচনের বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে দলীয় চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিএনপি ও ধানের শীষের পক্ষে নারায়ণগঞ্জে এরই মধ্যে যে জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা জেনে আমি আনন্দিত। আমার আবেদন ভোটের বাক্সে এই সমর্থনের প্রতিফলন ঘটান। নতুন ভোটার, মা-বোন, মুরুব্বীয়ান এবং হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাগরিকসহ সবার প্রতি আমার আবেদন সময়মতো ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্ভয়ে ভোট দিবেন এবং অন্যদেরকেও উৎসাহিত করবেন। মনে রাখবেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং আপনাদের ভোট দেওয়ার ও অন্যান্য অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং শান্তি স্থাপনে এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বিএনপি এই নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেই দাবি আমলে নেয়নি। আজকে খালেদা জিয়ার বিবৃতিতে এই প্রসঙ্গটিও আসে।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড এবং গুম, খুন ও সন্ত্রাসের কারণে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষদের আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হয়। সে কারণে আমরা দাবি করেছিলাম, নির্বাচন চলাকালীন আপনারা যাতে পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন এবং কোনো রকম হুমকির মুখে পড়তে না হয়, তার জন্য সেনা মোতায়েন করা হোক। আমাদের দাবি মানা হয়নি।’
‘তবে এখন পর্যন্ত সরকার সমর্থিতদের দ্বারা বিরোধীদলের প্রার্থীদের কিছু ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও বড় রকমের কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি। আমি নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ, ক্ষমতাসীন দল এবং সর্বোপরি ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, ভোটের দিন এবং এর আগে পরে পুরো নারায়ণগঞ্জে যেন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন পরিবেশ বজায় থাকে’, বিবৃতিতে যোগ করেন খালেদা জিয়া।
নাসিক নির্বাচনে একজন মেয়রের সঙ্গে ২৭টি সাধারণ ও নয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে। মেয়র পদে সাতজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ১৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নাসিকে ২৭টি ওয়ার্ডে ১৭৪টি কেন্দ্র ও এক হাজার ৩০৪টি বুথ রয়েছে। মোট চার লাখ ৭৯ হাজার ৩৯২ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪১ হাজার ৫১৪ জন এবং নারী ভোটার দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৮ জন।
দলীয় মনোনয়নে প্রথম ভোট হচ্ছে নাসিকে। আগামী ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন