এক্কা-দোক্কা আর কানামাছি হয়না এখন খেলা
আরিফুর রাজু: স্মৃতির পাতা উল্টালেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে শৈশবের দুষ্টু-মিষ্টি ভরা কত শত স্মৃতি। বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে মাঝ নদীতে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা এবং সেই মাছ দিয়ে ‘ঝোলাই ভাতি’ রান্না। আহ! কতইনা আনন্দের ছিল ছোট বেলার সেই দিন গুলো। এছাড়া স্কুল ছুটির পর বন্ধুরা মিলে হরেক রকমের খেলাধুলা বিশেষ করে গোল্লাছুট, কানামাছি, হা-ডু-ডু, বৌছি, দাঁড়িয়া বান্ধা, কুত-কুত, সাতচারা, ডাংগুলি, এক্কা-দোক্কা আরও কত কি খেলাধুলা চলতো তার কোন হিসেব নেই। মূলত এ দেশের জনপদের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নাম না জানা হরেক রকমের খেলা। কিন্তু কষ্টের বিষয় হচ্ছে সময় পরির্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ অতিহ্যবাহী খেলাগুলো। শহর তো দূরের কথা গ্রাম-গঞ্জের মাঠেও এখন আর এসব খেলা খুব বেশি চোখে পড়ে না। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ৪০ টি গ্রামীণ খেলাধুলা নিয়ে গভেষণা করেছিলেন ইংল্যান্ডের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান। তাদের গভেষণা উঠে এসেছে বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলাধুলা বিশেষ করে হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্ধা, কুতকুত এক্কা-দোক্কা খেলাধুলা সমূহ শিশুদের মনন বিকাশ এবং শরীরকে ফিট রাখতে অনেকটা সাহায্য করে। আর আমরা কিনা এর মর্যাদা দিচ্ছিনা।ঠিক যেমন দাঁত থাকতেও দাতের মর্যাদা না বুঝার মত। গ্রাম-গঞ্জ থেকে দিনের পর দিন এসব ঐতিবাহী খেলা গুলো উঠে যাওয়ার কারণ হিসেবে সৃজণশীল মানুষ গড়ার আন্দোলন ‘আলোর মিছিল’ এর নির্বাহী পরিচালক জুবায়ের আল মাহমুদ রাসেল বলেন, ‘বর্তমান সময়ে গ্রাম অঞ্চলের যুবক ও স্কুল পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়েছেন। তারা ইন্টারনেট ব্যাবহারের মাধ্যমে সুফলের চেয়ে কুফলের দিকে নিজেদের নিয়ে যাচ্ছেন। তার মতে, ‘শুধু কি গ্রামীণ খেলাধুলা বিলীন হয়ে যাচ্ছে? যুবক তরুণ সমাজের হাতের মুঠোয় থাকা ইন্টারনেট আসক্তির ফলে আন্তর্জাতিক মানের খেলাধুলা বিশেষ করে ক্রিকেট-ফুটবলও বেশ একটা আয়োজন হয়না গ্রামের মাঠে।’ গ্রাম গঞ্জ থেকে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা উঠে যাওয়ার কারণটা একটু ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করলেন সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম। তার মতে, ‘বর্তমান সময়ের বাবা- মা তাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকে কম্পিউটার এবং স্মার্ট ফোন কিনে দিয়ে প্রযুক্তি নির্ভর করে ফেলছেন। যার ফলে আমাদের দিন দিন আমাদের দেশের প্রত্যান্ত গ্রাম অঞ্চলের ঐতিহ্যগুলো ধ্বংসের মুখে চলে যাচ্ছে।’ তিনি আরো যোগ করেন, ‘ এখন আর তরুণ-যুবকদের মাঠে গিয়ে কষ্ট করে খেলতে অথবা খেলা দেখতে হয়না। কম্পিউটারেই তারা তাদের অবসর সময়টুকু কাটিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন রকমের গেমস এবং মুভি দেখে। এছাড়া ডিস এ্যান্টিনা এবং বিদেশি চ্যানেলের আধিপত্য তো রয়েছেই। ছোট বেলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার কথা তুলতেই মুচকি হাসি দিলেন প্রাইভেট ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র সজিব। তুলে ধরলেন ছোট বেলার খেলাধুলা আর দুষ্টোমি নিয়ে তার মজার তথ্য। ছোট বেলায় বন্ধুরাসহ ফুটবল কেনার চাঁদা দেয়ার জন্য মায়ের মাটির ব্যাংক থেকে টাকা চুরির গল্প থেকে শুরু করে বাদ যায়নি বৃষ্টিতে ভিজে অসুখ বাধানো গল্পও। সজিবের মতে, এখনকার মা-বাবা, অভিবাবকরা তাদের ছোট ছেলে মেয়েদের মন মানসিকতাকে রোবটের ন্যায় করে ফেলছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠলেই কাঁধে বড় পরিসরের একটা ব্যাগ উঠিয়ে দিয়ে স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া আবার স্কুল ছুটি হলে প্রাইভেট টিউটরকে দিয়ে পড়তে বসানো। অবশেষে সজিব মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা কিঞ্চিত হাহাকার নিয়ে আক্ষেপের সূরে বলেন, ‘সত্যি সময়ের গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অতীত ঐতিহ্য।’ বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলাকে তখনই টেকানো সম্ভব হবে যদি এই সব খেলা গুলোকে একত্রিত করে সরকারের পক্ষ থেকে ক্রীড়া ফেডারেশনের আয়ত্তায় নিয়ে আসা যায়। তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও বর্তমান প্রজন্মের যুবকরা জানতে পারবে আমাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে। আর তাছাড়া বর্তমান প্রজন্মের পরিবারবর্গকে তাদের সন্তানদের ইন্টারনেট এবং স্মার্ট ফোনে ভিডিও গেমস আসক্তি থেকে দূরে সরিয়ে নিজ দায়িত্বে তাদের ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েও কিছুটা উপকৃত হওয়া সম্ভব হবে। লেখক: সাংবাদিক
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কল-কারখানায় কোনো শিশুশ্রম নেই: প্রতিমন্ত্রী
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, প্রতিষ্ঠানিকবিস্তারিত পড়ুন
বেনাপোলের কিশোরী জোনাকির মরদেহ যশোরে উদ্ধার
যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়া মডেল মসজিদের পাশে একটি পুকুর থেকেবিস্তারিত পড়ুন
শিশুর স্কুল থেকে শেখা বদভ্যাস থামাবেন যেভাবে
স্কুল থেকে শিশুরা জীবনের দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকে। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নিয়মকানুনবিস্তারিত পড়ুন