এক প্রবাসীর স্ত্রীর নিঃসঙ্গতা অতঃপর…!
বাংলাদেশের প্রবাসীদের সংখ্যা অনেক। এসব প্রবাসীদের অধিকাংশই পুরুষ। তাদের মধ্যে অনেকের পরিবার সামলাতে হচ্ছে তাদের স্ত্রীদের। স্বামী ছাড়া স্ত্রীদের সংসার চালানো খুব সহজ নয়। ফলে পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়। তাছাড়া দূরে থাকার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে দেখা দিচ্ছি টানাপোড়েন। অনেকে বুঝে উঠতে পারেন না এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিৎ। ভুক্তভুগী এক প্রবাসীর স্ত্রী জানতে চেয়েছেন এর সমাধান। আর তার উত্তর দিয়েছেন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।
প্রশ্ন: আমি ২৭ বছরের একজন নারী। ছয় বছর হলো বিয়ে করেছি। আমাদের পাঁচ বছর বয়সী একটা কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের আগেই আমার স্বামীর আরব আমিরাতে চাকরি হয়। বিয়ের সময় সে ছুটিতে দেশে আসে। বিয়ের কিছুদিন পরই সে আবার আরব আমিরাতে চলে যায়। সে যে চাকরি করে তাতে করে আমাদের নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি যৌথ পরিবারের সঙ্গে থাকি। তিন বছর আগে একটি চাকরি নিয়েছি। ঘরের টুকিটাকি খরচ, মেয়ের দেখাশুনা এবং ছোট ছোট খরচগুলো আমাকেই করতে হয়। ছোটখাটো ব্যাপারগুলো আমি খুব সুন্দরভাবেই সমাধান করে আসছি। কিন্তু ইদানিং খুব বিষণ্নতায় ভুগছি, একাকীত্ব অনুভব করছি।
এদিকে, আমার স্বামীকে দেশে ফিরে আসতে বলতে পারছি না। কারণ বাড়ির জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে আরও তিন বছর লেগে যাবে। আমি যা আয় করি, পরিবারের খরচ চালানোর পর একটা পয়সাও বাঁচানো সম্ভব হয় না।
ইদানিং লক্ষ্য করছি, আমার আচরণে বেশ পরিবর্তন এসেছে। অল্পতেই রেগে যাচ্ছি, মেয়ের সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলছি। এই ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণ আমার পছন্দ নয়। সত্যিই এর থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছি। কারো কাছ থেকেই এই ব্যাপারে সহযোগিতা পাচ্ছি না। খুব একা অনুভব করছি।
প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ মনোরোগ চিকিৎসক নেয়ামত বাওয়া। উ:- আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। পরিবারকে ভালো রাখার জন্য আপনি কঠিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার কষ্টের ব্যাপারটি বুঝতে পারছি। একহাতে সন্তান বড় করা অনেক কঠিন একটি ব্যাপার। আপনাকে আর্থিক দায়িত্ব নেয়ার পাশাপাশি পরিবারের টুকিটাকি কাজগুলোও করতে হয়। যা আপনার হতাশা ও একাকীত্বের অন্যতম কারণ।
স্বামী অনুপস্থিতিতে স্ত্রীর রাগ, হতাশা, উদ্বেগ, একাকীত্ব ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর এই যোগাযোগ শূন্যতা শারীরিক ও মানসিক চাপ তৈরি করে। আপনি মনে করছেন, ঋণের কারণে আপনার স্বামী ঘরে ফিরে আসতে পারছেন না। সবকিছু সত্ত্বেও আপনাকে এই পরিস্থিতির দায়িত্ব নিতে হবে। আপনার জন্য বিষয়টি কঠিন হতে পারে, এখানে আপনার মেয়ের বিষয়টি আমলে আনা উচিত। সে তার বাবাকে ছাড়াই বড় হচ্ছে। আপনাকে আগে নিজের দায়িত্ব নিতে হবে, পরে পরিবার। এখানে কিছু টিপস দেয়া হলো যা আপনাকে এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে:
আপনার সঙ্গীকে জড়িত করুন: পরিবারের সঙ্গে আপনার সঙ্গীর জড়িত হওয়াটা খুব দরকার। সে দূরে চলে গেলেও পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ব ভুলে গেলে চলবে না। এই ব্যাপারটি আপনাকে সহায়তা করবে, সে দূরে চলে গেলেও আপনার মনে হবে সে পাশেই আছে।
স্বামীর সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটান: যদিও দুজন পৃথিবীর দুই প্রান্তে থাকেন, তবুও যখনই সময় পাবেন আনন্দের সঙ্গে কথা বলুন। দূরত্বের সীমাবদ্ধতা কাটাতে ভিডিও কল করতে পারেন। সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সমস্যার সমাধানকারী হন: যেকোনো পরিস্থিতি সামলানোর দক্ষতা অর্জন করুন। এটি আপনার স্বামীকে চিন্তামুক্ত রাখবে এবং নিজেও আত্মবিশ্বাসী হবেন। বিশ্বাস এবং সম্পর্ক দুটোই মজবুত হবে।
সাহায্য নিন: পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে যতখুশি সাহায্য নিন। তাতে করে আপনার বোঝা কমে আসবে এবং অবসন্ন কম হবেন। যখনই সমস্যায় পড়বেন কাছের কারো পরামর্শ নিন।
মেয়েকে পর্যাপ্ত সময় দিন: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মেয়ের জন্য বরাদ্দ রাখুন। তার সঙ্গে খেলাধুলা করুন, তার কথা শুনুন, সাপ্তাহিক ছুটিতে বেড়াতে নিয়ে যান। আপনার মেয়ের জন্য ভালোবাসা এবং স্বাস্থ্যকর বাড়ির পরিবেশ তৈরি করুন।
শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তুলুন: শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে যদি ভালো বোঝাপড়া গড়ে তুলতে পারেন তাহলে সংসার যুদ্ধে আপনি অর্ধেক জয়ী হয়ে গেলেন।
আর্থিক বিষয়ে দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলুন: টাকাপয়সা নিয়ে দুশ্চিন্তা গ্রহণযোগ্য কোনো সমাধান দিতে পারে না। আয়ের মধ্যেই চলার চেষ্টা করুন। পরিকল্পনামাফিক খরচ করুন। আপনার চাপ কমে আসবে।
আত্মনির্ভরশীল হন: অন্যের ওপর নির্ভর না করে আতœনির্ভরশীল হন। কারো সহযোগিতা চেয়ে যদি না পান তাহলে নিজের কাজটি নিজেই করার চেষ্টা করুন। দেখবেন তাতে করের আপনার আত্মবিশ্বাসও বহুগুণে বেড়ে গেছে।
উপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করার পরও যদি পরিস্থিতি সামলাতে কষ্ট হয় তাহলে কোনো মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এতে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আপনার জন্য সহজ হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন