মানবতাবিরোধী অপরাধ
এক ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড, দুই ভাইয়ের যাবজ্জীবন
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের তিন ভাইয়ের মধ্যে একজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। অপর দুই ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ার-উল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।
রায়ে মহিবুর রহমান বড় মিয়ার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাঁর ছোট ভাই মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া ও পলাতক থাকা চাচাতো ভাই আবদুর রাজ্জাককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিট থেকে রায় পড়া শুরু করেন আদালত। পরে দুপুর ১২টার দিকে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়।
এ তিনজনের বিরুদ্ধে আনা চারটি অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগে মুহিবুরকে ফাঁসির দণ্ড এবং আরো তিনটি অভিযোগে ৩৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া মুজিবুরকে প্রথম অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং আরো তিনটি অভিযোগে ৩৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের চাচাতো ভাই আবদুর রাজ্জাককে প্রথম অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং বাকি তিনটি অভিযোগের জন্য ৩৭ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে তিন ভাইয়ের মধ্যে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও তাঁর ছোট ভাই মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
গত ১১ মে উভয়পক্ষের শুনানি শেষ হয়।
২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি একই মামলার আসামি মহিবুর ও মুজিবুরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নূর হোসেন। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তা শেষ হয়। এরপর ওই বছরই ২৯ এপ্রিল ধানমণ্ডি কার্যালয় সেফ হোমে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা।
২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তদন্তের স্বার্থে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে গ্রেপ্তারের আবেদন জানায় প্রসিকিউশন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২। এর পর ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ী এলাকা থেকে খাগাউড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও তাঁর ছোট ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে গ্রেপ্তার করে হবিগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ। ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁদের কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল। অন্য আসামি আবদুর রাজ্জাক পলাতক।
২০১৫ সালের ৩১ মে এ তিনজনের বিরুদ্ধে চার অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এর পর ২৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. আনোয়ার-উল হকের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
চার অভিযোগ
এক. একাত্তর সালের ১১ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে লাশ গুম করেন আসামিরা।
দুই. আসামিরা পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেজর জেনারেল এম এ রবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করেন।
তিন. একই দিন খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় আসামিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করে। পরে আল্লাত মিয়ার বোন বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
চার. একাত্তর সালের ভাদ্র মাসের যেকোনো একদিন আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালান আসামিরা। ওই নির্যাতনে পঙ্গু হন আনছার আলী।
২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজবিবি হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কগনিজেন্স-৪-এর বিচারক রাজীব কুমার বিশ্বাসের আদালতে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলাটি করেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে বানিয়াচং থানার পুলিশকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটি আদালত থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বানিয়াচং উপজেলায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে, ৩ জনে মৃত্যু
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রেবিস্তারিত পড়ুন
হবিগঞ্জে ট্রাক-প্রাইভেটকার সংঘর্ষে ৫ জন নিহত
হবিগঞ্জের মাধবপুরের হরিতলা বাদশা গেইট এলাকায় ট্রাক ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন
‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে’ গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে’ এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করাবিস্তারিত পড়ুন