এখন কী করবেন বাবুল আক্তার?
চট্টগ্রামের মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর দীর্ঘ সময় যোগাযোগের বাইরে থাকলেও এখন ঢাকায় তার শ্বশুরের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
গতকাল ৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর থেকেই বাবুল আক্তারের সঙ্গে গণমাধ্যম যোগাযোগ করতে পারছিল না, খোঁজ পাচ্ছিল না। এ নিয়ে আজ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বাবুল আক্তার ঢাকার বনশ্রীতে তার শ্বশুর বাড়িতে ফিরেছেন।
তবে এখন বাবুল আক্তার কী করবেন এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন এবং বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া দুজনেই জানিয়েছেন, তার (বাবুল) বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এমন দাবি আগেও করেছেন অবসরপ্রাপ্ত এই দুই পুলিশ পরিদর্শক।
বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বাবুল আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, আমি শ্বশুর বাড়িতে আছি।
বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বুধবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-কে বলেন, ‘সে (বাবুল) দুপুরে ফিরে দোতালায় অবস্থান করছেন। তার সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি উপরের সিদ্ধান্ত। তবে এর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
মোশাররফ আরও বলেন, ‘রাতে সে এক তার আত্মীয়ের বাসায় ছিল, তবে কোন আত্মীয়ের বাসায় ছিল, তা জানি না।’
বাবুলের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া বলেন, ‘আল্লাহ পাক ফয়সালা করার মালিক। … দোষী না, তারপরও দোষী করার চেষ্টা হচ্ছে। এখন এটা মেনে নিতে হবে, কোনো উপায় নেই।’
বাবা ওয়াদুদ মাগুরা শহরের কাউন্সিলপাড়ায় থাকেন। চাকরি থেকে অব্যাহতির খবর পাওয়ার পর থেকেই বাবুল আক্তারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল না। বুধবার বিকেলে সমকাল-কে বলেন, ‘মঙ্গলবার চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর থেকে তার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই।’
বাবুল আক্তার তার স্ত্রী মিতু হত্যার সঙ্গে জড়িত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল ওয়াদুদ দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। তার দুটি বা্চ্চা রয়েছে। সুখের সংসার ছিল তার।’
সে কেন এ কাজ করবে- প্রশ্ন ওয়াদুদ মিয়ার। সে সময় তিনি দাবি করেন, বাবুল বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে।
তবে তিনি জানান, বাবুলের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যা মামলা হলে আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে। বিচারে সব ফয়সালা হবে। কেউ অপরাধ করলে তো তাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হয়, এটাই নিয়ম।
তিন মাস আগে চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতেই রয়েছেন বাবুল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) কামরুজ্জামান যুগান্তর-কে বলেন, তদন্তকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তবে কবে নাগাদ চার্জশিট দেওয়া যাবে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ বা তার সহযোগিতার প্রয়োজন থাকলেও এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে না। তদন্তের গতি প্রকৃতিই বলে দেবে কখন কী করা হবে।
গতকাল ৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাবুল আক্তারের ‘আবেদনের প্রেক্ষিতে’ তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে গত ২৪ জুন চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে এবং ৯ আগস্ট তা প্রত্যাহারে দুটি পৃথক আবেদন করেন এসপি বাবুল।
অব্যাহতি প্রত্যাহারের আবেদনে তিনি দাবি করেন, ‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাধ্য হয়ে আমি অব্যাহতিপত্র স্বাক্ষর করেছি। এটি আমি স্বেচ্ছায় দাখিল করিনি।’
এছাড়া বাবুল আক্তার ৪ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন) বরাবরে কাজে যোগদান করতে আরেকটি পত্র দেন। বাবুল আক্তারের এসব পত্রকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট হয় এক ধরনের জটিলতা। কারণ এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে সরকার অথবা বাবুল আক্তারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো মন্তব্য করেননি।
বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার পর গত ২৪ জুন রাতে তাকে পুলিশ সদর দফতরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর তাকে ২৫ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর শ্বশুরের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। তার ৩৮ দিন পর তিনি পুলিশ সদর দফতরে গিয়েছিলেন।
সেসময় গণমাধ্যমে খবরে বলা হয়েছিল, বাবুল আক্তার চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন ওই দিন রাতেই। তবে এনিয়ে নানা খবর বের হলেও সরকার কিংবা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সুষ্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি এ নিয়ে মুখ খুলেননি বাবুল আক্তার নিজেও। পরে পুলিশের মহা পরিদর্শক জানিয়েছিলেন, বাবুল আক্তার এখনও চাকরিতে আছেন।
মিতু হত্যার আগেই চট্টগ্রামে থেকে তাকে বদলি করে পুলিশ সদর দফতরে পদায়ন করা হয়। গত ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। পরদিন পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব, সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিআই)। তবে মামলার মূল তদন্তে আছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সরকারি হজ প্যাকেজ ‘প্রত্যাখান’ করে পাল্টা প্যাকেজ এজেন্সিগুলোর
সম্প্রতি আগামী বছরের জন্য হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।বিস্তারিত পড়ুন
সমালোচনার মুখে সাদ্দামের সাক্ষাৎকার স্থগিত করলো ‘ঠিকানা’
সমালোচনার মুখে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সাক্ষাৎকারবিস্তারিত পড়ুন
ফের মার্কিন মসনদে ট্রাম্প
ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডন্টে নির্বাচিত হয়েছেনবিস্তারিত পড়ুন