এবার পরিচালকের ব্যাপারে যা বললেন অভিনেত্রী মিমি!
আন্তর্জাতিক নারী দিবস? হ্যাঁ, ৮ মার্চের একটা পোশাকি নাম আছে বটে। তবে সেটা ক’জন নারী জানেন বলুন তো? এই যে আপনি পড়ছেন, আপনি জানেন সেটা মানছি। তবে আমার বাড়ির কাজের বুয়া, বা মাত্র আট বছরে পরিবারের মধ্যেই যৌন লালসার শিকার হওয়া মেয়েটি- তারা জানে কি? উত্তরটা সম্ভবত নেগেটিভ।
তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সেলিব্রেশন শুধুই একটা কাগুজে দিনে আটকে নেই বোধহয়। এই লেখাটা লিখতে বসে বছর পাঁচেক আগের কথা খুব মনে পড়ছে। আমি জলপাইগুড়ির মেয়ে। কলকাতায় পড়তে পড়তে শুরু হয় আমার স্ট্রাগল। তখন পকেটমানির জন্য কাজ শুরু করি। আমার প্রথম সিরিয়াল ‘চ্যাম্পিয়ন’। সিরিয়ালটা ছয় মাসের মতো চলে বন্ধ হয়ে যায়। মাসে ১৫ হাজার টাকা পেতাম। সেটাই তখন অনেক।
তাতে আমার হাতখরচা, হোস্টেলের খরচ চলে যেত। আসলে নিজের ইচ্ছেতে বাড়ির বাইরে এসেছিলাম। তাই কখনও চাইনি বাবা-মা আমার খরচা চালাবেন। একটা কথা কি জানেন, আমাকে কলকাতায় সারভাইভ করার জন্য খাটতে হয়েছিল। বাবা-মা এমবিএ পড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি এই প্রফেশন বেছে নিয়েছিলাম। তাই কলকাতার বাইরের মেয়েদের জন্য এটা একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ। আসলে কলকাতায় বাড়ি থাকলে একটা মরাল সাপোর্ট পাওয়া যায়। ঘুম থেকে উঠে হরলিক্সটাও নিজেকে করে খেতে হয়।
ঘুমতে যাওয়ার সময় ভাবতে হয়, কাল ব্রেকফাস্ট কী খাব? সে সময়ের কথা ভাবলে নারী স্বাধীনতা, আন্তর্জাতিক নারী দিবস এ সব নিয়ে আলোচনা আমার হাস্যকর মনে হয়। জানেন, এমনও সময় গিয়েছে, আমার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স জিরো হয়ে গিয়েছিল। ট্যাক্সি করে লুক টেস্টে যাওয়ার মতো ক্ষমতা ছিল না।
‘বাপি বাড়ি যা’র সময়ও অটোতে করে গিয়ে ওয়ার্কশপ করেছি। মা বলত বাড়িতে বসে থাকলে কেউ ভালো কাজ দেবে না। সব সময় একটা কথাই জানতাম, আই হ্যাভ টু স্ট্রাগল। তবে আই অ্যাম ভেরি ফোকাসড অ্যাবাউট মাই ক্যারিয়ার। রানাদা, সুদেষ্ণাদি আমাকে প্রথম ‘গানের ওপারে’র জন্য বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ), ঋতুদার কাছে নিয়ে যায়। তার পর শুরু করেছিলাম সেই স্বপ্নের জার্নি। তবে ফিনান্সিয়াল যতই খারাপ অবস্থা হোক টাকার জন্য কখনও যা খুশি কাজ করিনি।
‘গানের ওপারে’র পর অন্তত ৫০টা ফিল্ম ছেড়েছি। কারণ ওগুলোর গল্প প্রায় একই রকম ছিল। মেয়ে হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে আরও একটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলাম। কারও নাম বলতে চাই না, তবে অনেকে বলেছিল তুই হিরোইন মেটিরিয়াল নোস। তুই পারবি না। তোর দ্বারা হবে না। তখন তাদের মুখের ওপর কিছু বলিনি।
কিন্তু সেটাই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। গর্ব করছি না, তবে এটাও ঠিক, সে দিন ওই কথাগুলো আমাকে শুনতে হয়েছিল বলেই আজ আমি এখানে। এটাও ঠিক, হিরোইন হওয়াটা কঠিন। হয়ে যাওয়ার পর সেটা মেনটেন করা আরও কঠিন। মুশকিল হচ্ছে, আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে আমরা যারা বড় বড় কথা বলি, তারাই কিন্তু সুযোগ পেলেই মেয়েদের যে ভাবে খুশি অপমান করি, তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি। আমার সঙ্গে এমনই একটা ঘটনা ঘটেছিল।
‘চ্যাম্পিয়ন’-এর সময় একটা ফিল্মের অফার পেয়েছিলাম। তখন কাস্টিং কাউচের কবলে পড়েছিলাম। না! কাস্টিং কাউচ বোধহয় বলা যাবে না। সে সময় রিহার্সাল করতে গিয়ে আমার পরিচালক মিসবিহেভ করেছিলেন। একটা নন এসি রুমে রিহার্সাল করতাম। একদিন দুপুরে হঠাৎই ঘরের জানালা বন্ধ করে দিল।
আমি তো ভাবছি, জানালা কেন বন্ধ করল? কোনোদিন তো করে না! আর তার পরই রিহার্সালের নামে মিসবিহেভ করেছিল। তখন এতটা ছোট ছিলাম যে, বুঝতেই পারিনি কী হতে চলেছে। তবে একটা খারাপ কিছু যে হবে, তেমন একটা সিক্সথ সেন্স কাজ করেছিল। এক মিনিট আসছি বলে পালিয়েছিলাম। আর যাইনি সেখানে। এখন বিভিন্ন পেশার মেয়েদের মধ্যে একটা প্রবণতা দেখি। এই লেখাটা যে মেয়েরা পড়বেন বা পড়বেন না সকলকে একটা অ্যালার্ম দিতে চাই।
একটা মানসিকতা বেশির ভাগের মধ্যেই তৈরি হয়েছে, আই হ্যাভ টু বি আ হিরোইন। আই ক্যান ডু এনিথিং ফর ইট। আসলে মেয়েরা এখন ওভার অ্যাম্বিশাস। এই মানসিকতা হলে ভালো-মন্দ চিন্তা করার ক্ষমতাটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই মেয়েদের একটা অনুরোধ, প্লিজ চোখ, কান, নাক, মুখ সব খুলে রেখে কাজ কর। কয়েক মাস আগে লেকটাউনের একটা ঘটনায় আমি প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছিলাম। সে নিয়ে খবরও হয়েছিল। অনেকে ওই ঘটনাটা নিয়ে আমাকে নানা প্রশ্ন করেন।
আজ এখানে খোলাখুলি একটা কথা শেয়ার করি আপনাদের সঙ্গে। ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় ওটা হেডলাইন হওয়ার দরকারই ছিল না। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ সবারই করা উচিত। জলপাইগুড়িতে কারও একটু ধাক্কা লাগলেও অন্তত ৫০টা লোক চলে আসে। জানেন, ক্লাস ইলেভেনে আমার একবার গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। মামা গাড়ি চালাচ্ছিল। বাড়ি থেকে তিন ঘণ্টা দূরে আমাদের অ্যাক্সিডেন্টটা হয়। ওখানে বাড়ির লোক পৌঁছনোর আগেই ওখানের লোকরাই আমাদের সব ব্যবস্থা করেছিল।
আমি এটা দেখে বড় হয়েছি। তাই প্রতিবাদ করতে আমি দুইবার ভাবিনি। এমন ঘটনা আবার আমার সামনে হোক তা চাইব না। তবে যদি এমন হয়, তা হলে আমি আবার প্রতিবাদ করব। অনেকে জানতে চান, আমি মানুষটা কেমন? মেয়ে হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে কেমন? আমি মধ্যপন্থী নই। স্পষ্টবাদী। ডমিনেটও করি না। আবার ডমিনেটেড হতেও পছন্দ করি না। আসলে আমার পরিবারের মধ্যে নারী-পুরুষের এই পার্থক্যটা দেখিনি।
আত্মীয়দের মধ্যে অনেক মহিলাই তাঁদের স্বামীদের থেকে উঁচু র্যাংকে কাজ করেন। কিন্তু কোনো ইগো সমস্যা হয়নি। বরং তাঁরা বেস্ট ফ্রেন্ড। এই ব্যালান্সটা খুব জরুরি। এটা দেখে আমি বড় হয়েছি। তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবস বললে আলাদা করে আমার কিছু মনে হয় না।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সমুদ্র পাড়ে দুর্গারূপে নওশাবা
শুধু ঈদ কিংবা পূজা নয়, বিশেষ ধর্মীয় দিন উপলক্ষে ফটোশুটেবিস্তারিত পড়ুন
শুল্কমুক্ত গাড়ি খালাস করেছেন সাকিব-ফেরদৌস, পারেননি সুমনসহ অনেকে
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করাবিস্তারিত পড়ুন
আলোচিত নায়িকা পরীমনির পরিবার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানতেন?
গভীর রাতে সাভারের বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরেরবিস্তারিত পড়ুন