এবার পেঁয়াজেও ফরমালিন!

সবজি, ফল ও মাছ-মাংসে ফরমালিন দিলে অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। তাই বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন প্রয়োগ করে যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক।
ফর্মালিন সাধারণত টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, পেপার, রং, কনস্ট্রাকশন ও মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। ফরমালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও মিথানল থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লিভার বা যকৃতে মিথানল এনজাইমের উপস্থিতিতে প্রথমে ফরমালডিহাইড এবং পরে ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়। দুটোই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
এবার পেঁয়াজেও ফরমালিন!
গত বৃহস্পতিবার ফরমালিন মেশানো সন্দেহে কক্সবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০০ বস্তা পেঁয়াজ জব্দ করেছেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোজাম্মেল হক রাসেলের নেতৃত্বে পরিচালিত এক ভ্রাম্যমাণ আদালত শহরের বড় বাজারে ‘ভাই ভাই স্টোর’ নামের একটি দোকানের গুদামে অভিযান চালিয়ে পেঁয়াজ জব্দ করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোজাম্মেল হক রাসেল কালের কণ্ঠকে বলেন, শহরের বড় বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় লক্ষ্য করা যায় ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজে এক প্রকার লাল রং মেশানো রয়েছে। দোকানি জানান, পেঁয়াজের পচন রোধে এবং দেশীয় লাল পেঁয়াজের মতো দেখানোর জন্যই এই রং মেশানো হয়।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের পচন রোধের কথা বলায় এটা ফরমালিন বলে সন্দেহ করে পুরো গুদামটি জব্দ করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা শেষেই যা করার তাই করা হবে।
এ ব্যাপারে ভাই ভাই স্টোরের মালিক আবু তাহের সওদাগর দাবি করেন, পেঁয়াজে লাল রং মেশানো অবস্থায়ই আমরা চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার থেকে কিনে এনেছি। সেখানে রং মিশিয়ে থাকতে পারে। আমি রং মিশাইনি।
আবু তাহের সওদাগর আরো জানান, রং মেশালে পেঁয়াজটা ভালো ও দেশি বলে মনে হয়। এ রকম রং মেশালে দামও ভালো পাওয়া যায়।
ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক
ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তাৎক্ষণিকভাবে ফরমালিন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কারবাইডসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে পেটের পীড়া, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, ডায়রিয়া, আলসার, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে।
ধীরে ধীরে এসব রাসায়নিক পদার্থ লিভার, কিডনি, হার্ট, ব্রেন সব কিছুুকে ধ্বংস করে দেয়। লিভার ও কিডনি অকেজো হয়ে যায়। হার্টকে দুর্বল করে দেয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
ফরমালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে। অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতাসহ অন্যান্য রক্তের রোগ, এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে। এতে মৃত্যু অনিবার্য।
মানবদেহে ফরমালিন ফরমালডিহাইড ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়ে রক্তের এসিডিটি বাড়ায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে।
ফরমালিন ও অন্যান্য কেমিক্যাল সামগ্রী সব বয়সী মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে। ফরমালিনযুক্ত দুধ, মাছ, ফলমূল এবং বিষাক্ত খাবার খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। কিডনি, লিভার ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট, বিকলাঙ্গতা, এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা দিন দিন কমছে।
গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।
এ ধরনের খাদ্য খেয়ে অনেকে আগের তুলনায় এখন কিডনি, লিভারের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগের সমস্যায় ভুগছেন। দেখা যাচ্ছে, কয়েক দিন পরপর একই রোগী ডায়রিয়ায় ভুগছেন, পেটের পীড়া ভালো হচ্ছে না, চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
ফরমালিন দূর করতে
সাধারণ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে খাদ্য থেকে ফরমালিন অপসারণ করা সম্ভব। ফরমালিন এক ধরণের জীবাণুনাশক। এটি শিল্পকারখানায় জীবাণুনাশক ও পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
অনেকেরই ধারণা ১৫ থেকে ২০ মিনিট বিশুদ্ধ পানিতে ডুবিয়ে রাখলে খাদ্যদ্রব্য থেকে ফরমালিন দূর হয় বা কমে যায়। প্রকৃতপক্ষে, এটি অতটা কার্যকর নয়।
কাঁচা অবস্থায় খাবার থেকে ফরমালিন অপসারণ করতে চাইলে পানির কল ছেড়ে তার নিচে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখতে হবে। কারণ কাঁচাসবজি ও ফলের ত্বকে অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্র রয়েছে। পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ফরমালিন আরও ভালোভাবে খাবারে মিশে যেতে পারে।
তাছাড়া আরও কিছু উপায়ে ফরমালিন দূর করা যায়।
ভিনিগার বা লেবুর রসে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রেখেও ফরমালিন কিছুটা দূর করা সম্ভব।
আগুনের তাপে ফরমালিন অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই রান্নার আগে ফরমালিন কমানোর পদ্ধতি ব্যবহার করে রান্না করলে খাবার পুরোপুরি ফরমালিন মুক্ত করা সম্ভব।
তবে কাঁচা খাওয়া হয় এমন সবজি ও ফল অবশ্যই উপরোক্ত পদ্ধতিতে ভালোভাবে ফরমালিন মুক্ত করে নিতে হবে। তানা হলে নানানরকম রোগের সম্ভাবনা থেকেই যায়।
ফরমালিন আইন, যাবজ্জীবনের বিধান
খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের ব্যবহার রোধে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন বা মজুদের দায়ে অনধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত সর্বোচ্চ ২০ লাখ ও সবনিম্ন পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান করা হয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদবিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকবির ম্যুরাল থেকে কালি মুছে দিল উপজেলা প্রশাসন
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালে কালি দিয়ে মুখবিস্তারিত পড়ুন

ফখরুল: ইউনূস–মোদির বৈঠক আশার আলো দেখাচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন