এ্যানি-টুকুর প্রতি অনাস্থা, ছাত্রদলে বিভক্তি!
দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রদলের সাবেক দুই সভাপতি বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি (বর্তমানে কারাবন্দি) ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নিয়ন্ত্রণে চলছে ছাত্রদল। তাদের বুদ্ধি-পরামর্শেই গঠিত হয় ছাত্রদলের কমিটি। এতদিন এই দুই প্রাক্তন নেতার বিরুদ্ধে কোনো অসন্তোষ বা ক্ষোভ দেখা না গেলেও এবার প্রকাশ্যে এ দুই নেতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে ছাত্রদলের একটি গ্রুপ। তারা সম্প্রতি এ্যানি-টুকুর প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবর একটি চিঠিও দিয়েছে।
ছাত্রদলের এ গ্রুপটির অভিযোগ, সম্প্রতি গঠিত হওয়া ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটেছে। যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি অনেক ত্যাগী নেতাকে। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হওয়া অনেক ছাত্রনেতাকেও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বানানো হয়েছে। আর এ সবই ঘটেছে এ্যানি ও টুকুর ইশারায়। এসব কারণে সংক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এ্যানি-টুকুর প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে নয়াপল্টস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে। তাদের দাবি এভাবে ব্যর্থ ও অযোগ্য নেতাদের নিয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হলে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম বেগবান করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, শুধু ছাত্র রাজনীতিই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে নজিরবিহীন ও সর্ববৃহৎ একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয় ছাত্রদলের। গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ৭৩৬ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুমোদনক্রমে ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় পর সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন। এর পর থেকে অবমূল্যায়নের শিকার হওয়া এবং যথাযথ পদ না পাওয়া নেতারা বিক্ষোভ করেন বিএনপি কার্যালয়ে।
এ ধরনের বিক্ষোভের পর বিএনপি ও ছাত্রদলের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছে ছাত্রদলের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য এ বিক্ষোভের পেছনে সরকারী দলের ইন্ধন থাকতে পারে। আবার দায়িত্বশীল অনেকে বলছেন, ছাত্রদল বড় সংগঠন। অপ্রাপ্তিবোধ, অভিমান থেকে এ ধরনের ক্ষোভ জন্ম নিতেই পারে। আর সে ক্ষোভের প্রকাশ দোষের কিছু নয়। এসব দ্রুতই মিটমাট হয়ে যাবে।
এ্যানি-টুকুর প্রতি ছাত্রদল নেতাকর্মীদের এখনো আস্থা আছে জানিয়ে বিএনপির এ মহল বলেছে, কারাবন্দী এ্যানির মুক্তির দাবিতে ছাত্রদল দেশব্যাপি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। এখনো বিভিন্ন জায়গায় তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে।
২০১৪ সালে ১৫৩ সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রদলের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর সংগঠনটির পদবঞ্চিত নেতারা নয়াপল্টনে কয়েক দফা বিক্ষোভ দেখায়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগে আংশিক কমিটি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যেতে পারেনি। সর্বশেষ ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ
কমিটিতে বিভিন্ন স্তরের পদবঞ্চিত, অসন্তুষ্ট ও ত্যাগী নেতাদের রাখা হয়। এর পরও কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ হয়েছে নয়াপল্টনে। এমনকি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগসহ বিএনপির কার্যালয়ে জিয়াউর রহমানের মুর্যাল ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। এর পরপরই বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এর পেছনে ইন্ধনদাতা হিসেবে সরকারকে দায়ী করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বাংলামেইলকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ের অযোগ্য নেতাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। অনেক ত্যাগী নেতাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এ জন্য আমরা বিক্ষোভ করেছি। কিন্তু রুহুল কবির রিজভী আহমেদ তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিলে এ পরিস্থিতি নিরসন সম্ভব হতো।’
বিষয়টি নিয়ে রিজভী আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো সাংগঠনিক বিষয়, ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ আছেন, এগুলোই তারাই দেখুক।’
ছাত্রদলের পরিস্থিতি সম্পর্কে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘একটা কমিটি করলে যে কোনো সংগঠনে প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বিক্ষুব্ধতা থাকতেই পারে। ছাত্রদল একটা বৃহত্তম রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। এখানে সবাইকে সন্তুষ্ট রাখা যাবে না। সঙ্গত কারণেই বিক্ষুব্ধতা হলো তাদের চাওয়া না পাওয়ার একটা অভিমান। সেটা তারা প্রকাশ করছে। যদিও কাজটি ঠিক হয়নি।’
ছাত্রদলের এ পরিস্থিতি নিরসনে আপনাদের কোনো উদ্যোগ আছে কিনা জানতে চাইলে মিলন বলেন, ‘এতো বড় সংগঠনে অবশ্যই উদ্যোগ আছে। ছাত্রদলের সাংগঠনিক নেত্রি আছেন আমাদের চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। তারা এটা দেখবেন।’
আপনারা যারা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রয়েছেন তাদের এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে দায়িত্ব ভাগ করা হয়নি। আমাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে যতটুকু করার সবই করবো। সংগঠনকে গতিশীল করতে আমাদের যখন যে ভূমিকা রাখতে হয় তা তো করিই।’
আগামীতে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক পদে আলোচনায় রয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল এবং আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল। ছাত্রদলের এ পরিস্থিতি নিয়ে আজিজুল বারী হেলাল বাংলামেইলকে বলেন, ‘ছাত্রদল বাংলাদেশের বৃহৎ সংগঠন। সরকারের বিবর্তনমূলক আইন এবং সরকারের চাপের কারণে ছাত্রদলের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। ৭৩৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির বিষয়টা স্বাভাবিক। আমাদের সংগঠন বড়। সংগঠনে অনেকদিন কমিটি হয় না। এ কারণে বড় কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে সবাইকে রাখা হয়েছে। কমিটিতে যারা এসেছে সবাই যোগ্য।’
এ্যানি-টুকুর ব্যাপারে অনাস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য এ ঘটনায় সরকারের কিছুটা ইন্ধন রয়েছে বলে মনে হয়। তাছাড়া কমিটি হলে এরকম একটু-আধটু হয়। এটা শুধু ছাত্রদলের নয়, ছাত্ররাজনীতির একটা কালচারই এটা। এসব অসন্তোষকে আমি বড় করে দেখি না।’
কমিটি নিয়ে যেভাবে অসন্তেষ প্রকাশ পাচ্ছে তা ছাত্রদলের জন্য সুখকর কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ‘শুধু ছাত্রদল নয়, যে কোনো ছাত্ররাই সব সময় প্রতিবাদী হয়। কমিটি নিয়েও এরকম ছোটখাট ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগসহ বড় সংগঠনে এসব অসন্তোষ থাকে। এটাকে আমি স্বাভাবিক ধরে নিই ‘
ছাত্রদলের পরিস্থিতি সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়া দরকার কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে কোনো উদ্যোগ নিতে হবে। কমিটি হয়েছে। কিছু অসন্তোষ হয়েছে। তাদেরকে আমাদের সাংগঠনিক নেত্রি বেগম খালেদা জিয়া আশ্বস্ত করেছেন। এখন সবাই মিলে কাজ করলে সামনে ভালো কমিটি করা যাবে। এখন আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সরকার বিরোধী আন্দোলন ত্বরান্বিত করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদলের সহবস্থান নিশ্চিত করা। এখন একটা দখলদার শক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে রেখেছে। আমাদের নিজস্ব যে গন্ডগোল এটাকে বড় করে দেখলে চলবে না।’
ছাত্রদল পরিস্থিতি নিয়ে সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর বক্তব্য নেয়ার জন্য যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন