ওমর সানির চোখে এ কোন মৌসুমী…?
সময়টা উনিশ’শ তিরানব্বই। নির্মাতা দিলিপ সোমের ‘দোলা’র সেটে প্রথম দেখা দু’জনের। পরিচয়টা সেখানেই জমে উঠে। শর্ট শেষেই মুখোমুখি বসে পড়তেন দু’জনে। আলাপ-সালাপ করতেন। কথায় কথায় মুগ্ধতা বাড়ে। যে মুগ্ধতার শেষ নেই। দিনে দিনে কমতে থাকে দুরত্বটাও। পাশের মানুষটাকে মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু পাকাপাকিভাবে মনের বারান্দায় প্রবেশের আগেই শেষ হয়ে গেলো ‘দোলা’র শুটিং।
তারপর?
দু’জনের দেখা হয়না অনেকদিন। কথাও হয়না। মনের মাঝে গিজগিজ করে জমানো কথামালা। বুকের বামপাশটায় মোচড় দিয়ে উঠে। আসলে এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলনা! তারা প্রেমে পড়েছেন? প্রশ্নটা তখন বাতাসে উড়ছিল। উত্তরটা মিলছিলো না। এই সম্পর্কটা আসলে কি? না প্রেম, না বন্ধুত্ব। তার মাঝামাঝিতে ঝুলে আছে দু’জন। একে আসলে সংজ্ঞায়িত করা যায়না। ডাকসাইটে না হলেও ডেব্যু ফিল্ম ‘কিয়ামত থেকে কিয়ামত’ দিয়ে মৌসুমী উঠে এসেছেন প্রাদপ্রদীপের আলোয়। তার অভিনয়ের ঝলকানিতে মুগ্ধ ঢাকাই সিনেমার দর্শক। মৌসুমীর বিপরীতে কাস্ট করা হলো যে নায়ককে মানে সানি, তিনিও সম্প্রতি ‘চাঁদের আলো’ সিনেমায় ঠিকই নিজের জাত চিনিয়েছেন। পরিচালক দিলিপ সোমের নতুন সিনেমা এটি। নিখাঁদ প্রেমের গল্প। নায়ক-নায়িকাও রোমান্টিক হওয়া চাই। জুতসই জুটির সন্ধানে ডুব দিয়ে তুলে আনলেন হালের দুই উঠতি পাত্র-পাত্রি ওমর সানি-মৌসুমীকে।
পরবর্তীতে তারা যে বাস্তব জীবনেও পাত্র-পাত্রী হয়ে উঠবেন তা কী জানতেন সোম? সম্পর্ক ঝুলে থাকতে থাকতেই ছবিটা মুক্তি পেয়ে গেল। সুপারহিট! হাউসফুল! হুল্লোড় পড়লো দেশজুড়ে। সালমান-শাবনুরের বিপরীতে বাংলা সিনেমায় নতুন এক জুটির আবির্ভাব হলো। নির্মাতারা নড়েচড়ে বসলেন। ছুটলেন দু’জনের কাছে। তাদেরকে সিনেমায় টানতে আদাজল খেয়ে নামলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শাহ আলম কিরন, শওকত জামিল,দেলোয়ার জাহান ঝনটু, মালেক আফসারি, এ জে মিন্টু, মনোয়ার খোকন, ওয়াকিল আহমেদ, জীবন রহমান, নুর হোসেন বলাই, রায়হান মুজিব, হাফিজউদ্দিন, মমতাজুর রহমান আকবর, নাদিম মাহমুদ,মতিন রহমান, এম এম সরকার, দিলিপ সোমরা। রায়হান মুজিবের ‘আত্ম অহংকার’সহ আরো বেশ কটি সিনেমায় ফের একসঙ্গে তারা দু’জন। ঝুলে থাকা সম্পর্কটারও একটা গতি হলো। সংজ্ঞাহীন সম্পর্ক একটা সংজ্ঞায় দাড়ালো। সংজ্ঞার নাম ‘প্রেম’। প্রেমটা ছিল ছাইচাপা আগুনের মতো। বাইরে থেকে বুঝবার উপায় নেই ভেতরে কি চলছে! কিইবা জ্বলছে! প্রথমে তো কাকপক্ষীও টের পায়নি। ঘটনাটা চাউর হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে বিয়ে করে ফেললেন। তারিখটা ১৯৯৬ সালের ২ আগষ্ট। নতুন জীবন, সংসার। সংসারের মাঠে শুরু হলো নতুন ইনিংস। চলছে টেস্টম্যাচ। উইকেট ছাড়ার কোন তাড়া নেই। এক প্রান্তে সানী, আরেক প্রান্তে মৌসুমী। ব্যাটিং চলছে। রানও আসেছে। অপরাজিত কুড়ি। তাই তো! কুড়িটা বছর কাটিয়ে দিলেন অনায়াশে।
একটা ফ্যান, লাইট, মশারী, ছাদের নিচে। তাদের কোল আলো করে দু’ই সন্তান এলো। সন্তানরাও বড় হলো। নিজেদের বয়সও কম হলোনা। চল্লিশ ছাড়িয়েছেন দুজনেই। কিন্তু আজো ভালোবাসার কোন কমতি নেই। কানায় কানায় ভালোবাসায় পূর্ণ তাদের উত্তরার বাড়িটা। অনেকেই বলে আপনাদের মধ্যে নাকি ঝগড়া হয়না। কতোটা সত্য? মুচকি হেসে ওমর সানী জানালেন, ‘কে বলেছে ঝগড়া হয়না! আমরা তো প্রায়ই ঝগড়া করি। পেয়ারা নিয়ে ঝগড়া করি, কলা নিয়ে ঝগড়া করি!’ ঠিক কোন মন্ত্রে কুড়িটা বছর একসঙ্গে কাটিয়ে দিচ্ছেন? ‘শুধু বিশ্বাস’-বললেন সানী। বিয়ের পরে অনেক অভিনেত্রীই অকালে হারিয়ে গেছে। বন্দি হয়েছে সংসার কারাগারে। মৌসুমীর সমসাময়িকদের মধ্যে শাবনুরসহ এমন অনেকেই হারিয়ে গেছেন। কিন্তু মৌসুমী আজো মিডিয়ায় সরব। আর এর জন্য সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেন তার স্বামী। যেমনটি জানালেন সানী, ‘সুজাতাকে যখন আজিম সাহেব বিয়ে করলো তারপর কিন্তু সুজাতা আর মিডিয়াই আসেনি। নাঈমের সঙ্গে বিয়ের পর শাবনাজেরও একই অবস্থা। শাবনাজ অনেক গুণী শিল্পী। তাকে পৃথিবী থেকে এক রকম বিচ্ছিন্নই রাখা হয়েছে। কিন্তু আমি চাইনি মৌসুমী হারিয়ে যাক। চেয়েছি ও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করুক। কারণ ব্যক্তি মৌসুমী আমার স্ত্রী কিন্তু অভিনেত্রী মৌসুমী সারা বাংলাদেশের মানুষের।’ বরং অভিনয়ের জন্য মৌসুমীকে পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন সানী। ‘আমি ওর শারিরীক গঠনে খেয়াল রেখেছি।
দ্বিতীয় বাচ্চার নেয়ার সময় বলেছিলাম, তুমি ওয়াদা করো শরীর ফিট রেখে আবার অভিনয়ে ফিরবে তাহলে সন্তানটা নিতে পারো। ও আমার ওয়াদা রেখেছে। পরে আবার ফিরেছে অভিনয়ে।’ আপনার চোখে মৌসুমীর সবচেয়ে ভালো গুণ কি? ‘এমন মেয়ে সমাজে বিরল। সবাইকে সব পাত্রে রাখা যায়না। কিন্তু মৌসুমীকে যে পাত্রে রাখবেন সে পাত্রেই থাকবে। একজন প্রেসিডেন্টের সামনে কিভাবে কথা বলতে হবে সেটা যেমন জানে তেমনি একজন রিক্সাওয়ালার সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হবে সেটাও জানে।’ আর খারাপ গুণ? ‘অনেক ছবিতে আমি মৌসুমী একসঙ্গে সাইন করেছি। কিন্তু বিভিন্ন পলিটিক্সের কারণে ছবি থেকে আমি বাদ পড়ে যাই। তখন আমি ভেবেছিলাম মৌসুমীও হয়তো ছবি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবে। কিন্তু নেয়নি। কষ্ট পেয়েছিলাম।’ মা হিসেবে মৌসুমী কেমন? ‘সন্তানদের ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস। অতিরিক্ত ভালো ভালো না। এটা করতে গিয়ে সন্তানের যেন ক্ষতি না হয় সজাগ থাকতে হবে।’ আজ চিত্রনায়িকা মৌসুমীর ৪২ তম জন্মদিন। এর পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সমুদ্র পাড়ে দুর্গারূপে নওশাবা
শুধু ঈদ কিংবা পূজা নয়, বিশেষ ধর্মীয় দিন উপলক্ষে ফটোশুটেবিস্তারিত পড়ুন
শুল্কমুক্ত গাড়ি খালাস করেছেন সাকিব-ফেরদৌস, পারেননি সুমনসহ অনেকে
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করাবিস্তারিত পড়ুন
আলোচিত নায়িকা পরীমনির পরিবার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানতেন?
গভীর রাতে সাভারের বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরেরবিস্তারিত পড়ুন