‘ওরা খাবার দিতো না, লাথি দিতো, মুখে থুতু দিতো’
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শাহীনবাগ এলাকার শামসুন্নাহার বেগম মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের চাহিদা মেটাতে তিনি প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে যান।
সেখানে একটি বাসায় গৃহ-শ্রমিক হিসেবে প্রায় আড়াই বছর কাজ করেন তিনি। কিন্তু বেতন দেওয়া হয়েছে মাত্র নয় মাসের। প্রায় নিয়মিতভাবেই তাকে মার খেতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ” ওরা ভালো খাবার দিতো না। ওরা যা খেতে পারতো না তাই খেতে দিতো। আর ভাষা বুঝতে সমস্যা হলেই মার দিতো। লাথি দিতো। মুখের ওপর থুতু দিতো। ”
নির্যাতন সহ্য করেও কাজ করেছেন, কখনো চলে আসার চেষ্টা করেন নি? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, তাদের পাসপোর্ট ছিল মালিকের হাতে। সুতরাং পালানোর কোনও সুযোগ ছিল না।
শামসুন্নাহার বেগম জানান, যৌন হয়রানির হুমকিতেও ছিলেন তিনি। বেশ কয়েকবার তাকে এ ধরনের হামলার চেষ্টা চালান কুয়েতি পরিবারটির একজন অতিথি।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহ-শ্রমিক হিসেবে যাওয়া এই ধরনের শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
অভিবাসী গৃহ-শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় এবং যথাযথ বেতন কাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে দাবি করেছে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়ে তারা বলেছে, অভিবাসী গৃহ-শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকা আরও জোরদার করতে হবে।
অভিবাসন বিষয়ে ঢাকায় আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের একদিন আগে এই বিবৃতি দিল সংস্থাটি। তবে এমন দাবিকে মানতে রাজি নয় বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ” এমন ছোটখাটো ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটে।
তবে অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের বেতনের বিষয়টিতে তাদের কিছু করার থাকে না কারণ তাদের জানিয়ে সব শ্রমিক বিদেশ যায় না।
শ্রমিকদের পাসপোর্ট আটকে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, “এমন দু-একটি ঘটনার কথা শুনেছি তবে সংখ্যা খুব কম। ”
তবে মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডব্লিউর একজন কর্মকর্তা মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, যেসব দেশ থেকে আগে এই শ্রমিকরা যেত সেসব দেশ শ্রমিকদের অধিকার এবং বেতনের বিষয়ে অনেক সোচ্চার হওয়ায় এখন পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, বাংলাদেশের মত দেশগুলো থেকে স্বল্প বেতনে শ্রমিক নিতে চাইছে বিভিন্ন দেশ। কিন্তু সেখানে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা তাদের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ সেগুলো নিতে পারেনি। ”
তিনি আরো বলেন, যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যে গৃহ-শ্রমিক হিসেবে নারীদের কাজের হার বাড়ছে, তাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও বাড়ছে।
ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকার উদাহরণ তুলে ধরে সংস্থাটি বলছে, এই দেশগুলোকে অনুসরণ করে বাংলাদেশও প্রবাসী গৃহ-শ্রমিকদের নিরাপত্তা আরও বাড়াতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে সৈৗদি আরব জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে নারী শ্রমিক পাঠানোর হার বেড়ে গেছে।
মানবাধিকার সংস্থাটির হিসেবে, শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক লাখের বেশি নারী শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যে গেছেন।
উল্লেখ্য, ঢাকায় তিন দিনব্যাপী অভিবাসন বিষয়ক সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৫৫০’র বেশি প্রতিনিধি যোগ দেবেন বলে বলা হচ্ছে। এদিকে এই সম্মেলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সরকার বলছে, আরও কয়েক হাজার নতুন শ্রমিক বিদেশে পাঠানো সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কুড়িগ্রামে ভয়াবহ বন্যায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী
কুড়িগ্রামে টানা ৬ দিন বন্যায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মানুষজনবিস্তারিত পড়ুন
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন এমডি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগ দিয়েছেন সাবেকবিস্তারিত পড়ুন
কক্সবাজারে পাহাড় ধসে প্রাণ গেল মসজিদের মোয়াজ্জেম ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর
কক্সবাজারে পাহাড় ধসে মারা গেলেন মসজিদের এক মুয়াজ্জিন এবং তারবিস্তারিত পড়ুন