‘ও আল্লাহ আমার ইকবালরে কই নিয়ে গেলা’
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক মা সুফিয়া বেগম। ঢাকায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ছেলে ইকবাল হোসেনের মৃত্যুতে শুধুই কাঁদছেন আর বুক চাপড়াচ্ছেন। মঙ্গলবার ঘটনাটি জানার পর থেকেই কোনো কিছুই মুখে নেননি। বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে, তার একমাত্র ছেলে আর ফিরবে না। কথা ছিল ঈদের ছুটিতে ছেলে বাড়িতে আসবে। কিন্তু জীবিত নয়; লাশ হয়ে আসছে সেই ছেলে।
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ‘ইউটার্ন’ নির্মাণের জন্য সড়কে রাখা সিমেন্টের ব্লকে ধাক্কা লেগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় একটি তেল বোঝাই লরি (ট্রাক)। এ সময় তেল বোঝাই লরিটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠে। এ সময় পাশে এবং পেছনে থাকার একটি প্রাইভেটকারসহ আরও চারটি গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায় সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের লেবার ইকবাল হোসেনসহ দুজন।
অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ৮ জনকে উদ্ধার করে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। ইকবালের বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বর্ণি গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে। ইকবালের নিথর দেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
হতদরিদ্র পরিবারের ইকবাল বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। গ্রামে দীর্ঘদিন ভ্যানচালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। কিন্তু ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় বছরখানেক আগে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে পাড়ি দেন রাজধানী ঢাকার সাভারে। সেখানে বিভিন্ন পরিবহনে শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। পাশাপাশি স্ত্রী মঞ্জুয়ারাও স্থানীয় একটি গার্মেন্টস চাকরি করতেন। ১০ দিন আগে পাঁচ বছর বয়সী ইকবালের ছোট মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি চৌগাছাতে আসেন মা সুফিয়া বেগম। কথা ছিলো ঈদের দুদিন আগে ছুটি নিয়ে স্ত্রী বড় কন্যা নিয়ে গ্রামে আসবেন। কিন্তু ঈদের ছুটিতে নয়; জীবন থেকেই ছুটি নিয়ে ফিরছে ইকবালের নিথর দেহ। তাঁর পরিবারেরও চলছে মাতম।
ষাটোর্ধ বৃদ্ধা ইকবালের মা সুফিয়া বেগম আহাজারি করতে করতে বলেন, আমার ছেলেটা জন্ম থেকেই কষ্ট করেছে। অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তাই বছর খানিক আগের তার উপার্জনের ভ্যানটা বিক্রি করে সবাইরে নিয়ে ঢাকাতে গেছিল। সেখানে একটা বস্তিতে বাসা ভাড়া নিয়ে সবাই একসাথে থাকছিলাম। আমিও সেখানে থাকি। ঈদে সবার গ্রামে আসার কথা ছিলো; কিন্তু ঈদের সময় ছুটি গাড়ি পাওয়া যায় না। তাই ইকবালের ছোট মেয়েটাকে নিয়ে আমি ১০ দিন আগে গ্রামে এসেছি। ঈদের দুইদিন আগে ইকবাল ও তার বউ মেয়েকে নিয়ে গ্রামে আসার কথা ছিলো। ইকবালের ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে তিনি বলেন, ও আল্লাহ আমার ইকবালের কই নিয়ে গেলা। ইকবালের বদলে আমারে নিতে পারতা। এখন আমাদের কি হবে। তার বউ বাচ্ছাদের কি হবে। এই তোমার বিচার।’
ইকবালের বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, সেখানে আত্মীয়স্বজনের মধ্যে মাতম চলছে। তাঁদের কান্নায় প্রতিবেশী ও উপস্থিত কেউই কান্না চেপে রাখতে পারছিলেন না। সবাই তার ছোট মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে ঘিরেই নানা শান্তনা দিচ্ছেন ইকবালের প্রতিবেশি স্বজনেরা।
ইকবালের প্রতিবেশি স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আরিফুজ্জামান বলেন, ইকবলরা দুই ভাই-বোন। তার একটা বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। হতদরিদ্র পরিবারের সংসারে ইকবাল উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দায়দেনার কারণে সপরিবারে ঢাকাতে গিয়েছিল। কিন্তু তার সেই দায়দেনা পরিশোধ হওয়ার আগে মৃত্যু হলো। এখন তার পরিবারের কী হবে। কীভাবে চলবে তার স্ত্রী সন্তান ও বৃদ্ধ মা।
সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান হবি বলেন, সোস্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নির্মম এই মৃত্যুর খবর শুনে আমিও ব্যক্তিগত ভাবে মর্মাহত। বুধবার সকালে নিহতের পারিবারে গেছি কিন্তু এখানে তো তেমন কেউ থাকে না। জানতে পেরেছি সাভারেই নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন