কক্সবাজারে কিশোরেরা অপহরণের শিকার হচ্ছে
উঠতি বয়সী কিশোরদের দেখা হয় পরিবারের ভবিষ্যত হিসাবে। তারাই গতর কেটে পরিবারের স্বচ্ছলতা আনে। তবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে অপহরণের শিকার হচ্ছে এই কিশোররা। আর অপহরণের শিকার এই ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী সন্তানকে ফিরে পেতে যে কোন অংকের মুক্তিপণ দিতেও রাজি থাকেন বাবা-মা।
অপহরণের একমাস ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও চকরিয়ার ছেলে বেলালকে উদ্ধার করা যায়নি। ১৭ বছরের কিশোর বাড়ির সামনে খেলার মাঠ থেকে নিখোঁজ হন।
বেলালের ফুফু বুলু আকতার বলেন, ‘শেষে বেলাল বিকেলে মাঠে খেলতে যায়। এরপর রাতে আর ফেরেনি। বাবা রফিকুল ইসলাম চারদিকে খোঁজ নিয়েও আর পাননি।’ মঞ্জুরুল আলম নামে দালাল ফোন দিয়ে জানিয়েছেন, বেলালাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এখন থাইল্যান্ডে আছে। ফেরৎ আনতে হলে আড়াই লাখ টাকা দিতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত বেলালের সঙ্গে কথা হয়নি পরিবারের কারও। মঞ্জুরুল যাই বলছে সেটাই বিশ্বাস করতে হচ্ছে’ বলেন তিনি।
নিখাঁজ বেলালের পরিবারের সদস্যরা জানান, দালাল মঞ্জুরুলকে বলা হয়েছে, যেন সামনা সামনি এ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু তিনি বিকাশ-এ মোবাইল ব্যাংকিং ছাড়া টাকা নেবে না।
বুলু বলেন, মঞ্জুকে ফোন দিলে গালি ছাড়া কথা বলে না। তার কথায় বোঝা যায়, সে বার্মিজ (মায়ানমারের নাগরিক)।
‘সন্তান হারিয়ে ভাই-ভাবির অবস্থা মৃতপ্রায়! এই টাকা দিতে হলে নিজেদের সর্বস্ব বিক্রি করলেও হবে না। আবার টাকা দিয়েও যে সন্তানকে ফিরে পাওয়া যাবে এরও কোন নিশ্চয়তা নেই’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন বেলালের ফুফু।
এভাবেই মানবপাচারকারী চক্রের হাত থেকে ছেলে বেলালকে ফেরত নিয়ে চলছে পরিবারের দরদাম। বাবা-মার বড় সন্তান বেলাল। স্থানীয় নিরিবিলি চিংড়ি হ্যাচারিতে পোনা সংগ্রহের কাজ করতেন ১৭ বছরের তৌহিদুল ইসলাম। তাকে মালয়েশিয়া পাঠাতে স্থানীয় নারী দালাল ফরিদা খাতুন বেশ কয়েকবার তার বাবা ইসমাইল প্রকাশ মনুকে বলেন। তবে মনু রাজি হননি।
মনু বলেন, আমি তখনই না করি।
তিন মাস আগে একদিন হঠাৎ করে আর তৌহিদকে আর খুজেঁ পাওয়া যাচ্ছে না। চারিদিকে খোজঁ করেও মেলে না সন্তানের সন্ধান। মনু বলেন, পরে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানান- ফরিদার লোকেরা আমার ছেলেকে নৌকায় ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।
তিনি জানান, থাইল্যান্ড থেকে ফোন আসে তৌহিদের। ফোনে কথা বলার সময় তাকে মারা হচ্ছিল। যাতে আমি কান্নার আওয়াজ বেশি করে শুনতে পাই। এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দিলে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়।‘স্থানীয় ইসলামী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে ওই টাকা পাঠানোও হয় মাবুদ সর্দার নামে এক দালালের কাছে। কিন্তু আজও ছেলের কোনো সন্ধান পাইনি’ বলেন মনু।
এদিকে ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা হালিমা খাতুন। সারাদিনই চুপ করে থাকেন। আর ক্ষণে ক্ষণে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। এদিকে গত ১৯ মে মঙ্গলবার জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে দালালদের হাত থেকে বেচেঁ ফিরেছেন ৫ ব্যক্তি। এদের সবারই বয়স ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
তারা জানান, আরো ৩১ জন দালালদের কাছে আটক আছেন। যাদের মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবারও জনপ্রতি ৭৫ হাজার টাকা করে বিকাশে মুক্তিপণ দিয়ে শাহপরীর দ্বীপে ফিরেছেন আরও ১৭ জন। তাদের উদ্ধার করে বিজিবি। উদ্ধার হওয়াদের সবার বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এরমধ্যে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের সংখ্যা রয়েছে ২০ জনের বেশি।
তৌহিদের বাবা মনু জানান, অপহৃত হওয়াদের বেশিরভাগের বয়স ১৮ এর বেশি বলা হলেও আসলে তা কম। কারণ ভোটার হওয়ার জন্যে জাতীয় পরিচয় পত্রে এখানে ১৬ বছর বয়সীদেরও বয়স ১৮ দেখানো হয়। দরিয়ানগরে উদ্ধার হওয়া সহোদর নূর ইসলাম ও সাদ্দামের বয়সও ১৮ এর নিচে। তাদের মা রাশিদা বেগম বলেন, অপহরণকারী কলিমুল্লাহ ও রহিমুল্লাহর বয়সও ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
‘দুই সন্তানের জন্যে আমি সর্বস্ব দিয়ে দিতে পারি জেনেই তাদের অপহরণ করা হয়েছে। সাদ্দাম মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। এই ছেলেটাকে আমি সারাক্ষণই চোখে চোখে রাখি,’ বলেণ তিনি।
এদিকে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, মানবপাচারে জড়িত দালাল ফরিদাকে এ ধরনের ঘটনায় বেশ কয়েকবার জেলে যেতে হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় তিনবার জেল থেকে জামিন পান তিনি। মানবপাচারের ঘটনায় ফরিদার বিরুদ্ধে থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। নিখোঁজ হওয়া তৌহিদের বাবা মনু বলেন, আমার ছেলেক ফিরে পেতে থানায় ফরিদার বিরুদ্ধে মামলা করবো।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন
সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১১বিস্তারিত পড়ুন
রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন