কক্সবাজারে বাধা পেয়ে রোহিঙ্গারা ঢুকে পড়ছে চট্টগ্রামে
পুলিশের কড়া পাহারা গলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার হওয়া নারী-পুরুষরা ঢুকে পড়ছে চট্টগ্রাম মহানগরে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগরের কয়েকটি স্থানে দলবদ্ধ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের দেখেছেন স্থানীয় লোকজন। যাদের খাবার ও টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্যও করেছেন তারা।
৮০ এর দশক থেকেই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়। কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাদের দুটি ক্যাম্পও আছে। এসব ক্যাম্পে ৩০ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা থাকলেও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানে বহু মানুষের প্রাণহানি, নির্যাতন, বাড়িঘরে আগুন দেয়ার পর আবার বাংলাদেশের দিকে রোহিঙ্গাদের ¯্রােত বাড়ছে। তারা প্রধানত কক্সবাজারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে সেখানে বিজিবির কড়া পাহারা থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে অনেকেই। এ কারণে ঘুরপথে রোহিঙ্গারা এখন চট্টগ্রামের দিকে চলে আসছে।
খাবারের অভাবে শরীরের চামড়া ফুড়ে উঠা হাড্ডিসার নারী-পুরুষ ও শিশুর মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সময় তোলা সেলফি অনেকে গোঁজে দিয়েছেন ফেসবুকে। যা নিয়ে সরব ফেসবুকের বাসিন্দারা। চট্টগ্রামের লোকজনের এমন ভালবাসা পেলেও রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ যাতে নগরীতে ঢুকতে না পারে সেজন্য গত নভেম্বরের শেষ দিকে সতর্কতা জারি করে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
সিএমপির কমিশনার ইকবাল বাহার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে বিজিবির কড়া পাহারা থাকায় এবং রাখাইন রাজ্য থেকে আসা শত শত রোহিঙ্গাবাহী নৌকা ফেরত দেওয়ায় সীমান্তের জঙ্গলপুর্ণ এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এতে তাদের সহযোগিতা করছে সীমান্ত সংলগ্ন কিছু বাংলাদেশি দালাল।’
রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামে প্রবেশের খবর নিশ্চিত হওয়ার পর চট্টগ্রামের প্রবেশ দ্বার শাহ আমানত সেতু ও চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকার কালুরঘাট সেতু এলাকায় পুলিশের কড়া পাহারা বসানো হয়। এমনকি নগরীর সিটি গেট এলাকায়ও এ ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়। এ জন্য স্থানগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘তা সত্ত্বেও চট্টগ্রামে রোহিঙ্গা নাগরিক প্রবেশের খবর আমরা পেয়েছি। যারা চট্টগ্রামে কীভাবে প্রবেশ করল এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাচ্ছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। হয়তো অল্প সময়ের মধ্যে এ বিষয়টি আপনাদের জানাতে পারব।’
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রামে ইতেমধ্যে ১৫-২০ জন রোহিঙ্গা সদস্যের একাধিক দল প্রবেশ করেছে। যারা সড়ক ও সাগরপথে চট্টগ্রামে প্রবেশ করেছে। তাদের প্রবেশের পেছনে স্থানীয় দালালচক্রের যোগসাজশ রয়েছে। যারা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামে প্রবেশে সহযোগিতা করেছে। এভাবে সংঘবন্ধ একাধিক রোহিঙ্গা সদস্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা এখন গা ঢাকা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত রোববার বিকেলে ২২ জনের একটি রোহিঙ্গা মুসলিম দল আশ্রয়ের খোঁজে চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লা এলাকায় এসে উঠে। এদের মধ্যে ১১ জন নারী, আটজন শিশু এবং তিনজন পুরুষ। তারা বন্দরনগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ গেইটে অবস্থান নেয়। তাদের দেখতে স্থানীয় লোকজন ভিড় জমায়।
তাদের হাড্ডিসারশূণ্য শরীর দেখে অনেকে খাবার কিনে দেন। আন্দরকিল্লা জামে মসজিদে নামাজ পড়তে আসা বই ব্যবসায়ী হারুন জানান, ‘এখানে আসা রোহিঙ্গারা গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে না খেয়েছিল। তাই তাদের কলা, পাউরুটি, বিস্কিট কিনে দিয়েছি। অনেকে হোটেল থেকে ভাত কিনে খাওয়ার জন্য টাকা পয়সাও দিয়েছে।’
এই ব্যবসায়ী জানান রোহিঙ্গারা তাকে বলেছেন, নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন সীমান্ত থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে এ দেশে এসেছে দালালদের মাধ্যমে। প্রত্যেকে ২০ হাজার টাকা করে দালালদের দিয়েছে। এ দেশে আসার পর কক্সবাজারের উপকূলের কুতুবপালংয়ে তারা কয়েকদিন ছিল। সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সহায়তায় তারা চট্টগ্রাম পর্যন্ত এসেছে।
সেই চক্রটি টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামগামী একটি বাসে তুলে দেয় রোহিঙ্গাদের। তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২৮০ টাকা করে ভাড়া নেয়। বাসটি তাদের নগরীর সিনেমা প্যালেস এলাকায় নামিয়ে দেয়। পরে তারা আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ গেইটের সামনে অবস্থান নেয়।
রোহিঙ্গা নারী মোছাম্মৎ নাছিমা খাতুন আমাদের জানান, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে তারা সাগর পাড়ি দিয়ে এ দেশে আসেন। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর দালালের পরামর্শে তাঁরা চট্টগ্রামের পথে যাত্রা করেন।
ওই নারী এ সময় মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, সেখানে রোহিঙ্গা পুরুষদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। তাঁরা নির্যাতনের মুখে নৌকা দিয়ে হাতিমারা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।
আনোয়ারা বেগম নামের আরেক নারী জানান, তাঁর স্বামীকে কেটে ফেলা হয়েছে। ছেলেকে আগুনে ফেলে দেয়া হয়েছে। মা-বাবা আর শ্বশুর-শাশুড়িকেও মেরে ফেলা হয়েছে। পরে এক ভাইয়ের সহায়তায় তিনি রাখাইন থেকে চলে আসেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে এ দেশে আসছে। খবর পেয়ে পুলিশ আন্দরকিল্লা এলাকায় পৌছানোর আগেই তারা গা ঢাকা দিয়েছে। খোঁজে পেলে তাদের গ্রেপ্তার ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
জবিতে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির দাবি ছাত্রশিবিরের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ডোপ টেস্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির দাবি জানিয়েছেবিস্তারিত পড়ুন
এক হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগকে একীভূত করার অনুমোদনবিস্তারিত পড়ুন
একই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ডাক তাবলিগের দুই পক্ষের
নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছে বাংলাদেশেবিস্তারিত পড়ুন