কথা রাখেননি সোহাগ-জাকির!
কথা রাখেননি ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। দায়িত্ব নেয়ার পর গত চার মাসে কয়েক দফায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা বললেও এখনো সে প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি তারা। ফলে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতীম এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচিত হওয়ার একমাসের মধ্যে কার্যনির্বাহী কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ঘোষণা দিয়েছিলন নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু গত চারমাসেও তারা কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সূত্র জানায়, গত ২৬ জুলাই ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সোহাগ ও জাকির। এরপর তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঘোষণা দেন একমাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেবেন। কিন্তু একমাস পার হলেও তারা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি। আগস্ট মাসের শেষের দিকে তারা ঘোষণা দেন সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটি দেয়া হবে। সেবারও তারা কমিটি দিতে না পেরে নভেম্বর পর্যন্ত সময় নেন। কিন্তু বারবার কথা দিয়েও তারা কথা রাখতে পারেননি। পূর্ণাঙ্গ হয়নি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি।
এরমধ্যে অবশ্য গত ৫ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর পাঁচদিন ধরে ঘটনা করে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপ্রার্থীদের বায়োডাটা সংগ্র করেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু তার প্রায় দুইমাস পরও কমিটি দিতে না পারায় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
কেন্দ্রের পদ-প্রত্যাশী অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ বিষয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘তারা বারবার তারিখ দিচ্ছেন অথচ এখনো কিছুই হয়নি। শেষতক কেমন কমিটি হয় তা নিয়ে সবাই খুব উদ্বেগের মধ্যে আছে।’
পদ-প্রত্যাশী আরেক একজন ছাত্রনেতা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘দেখা যাবে নানা অপকর্মে অভিযুক্ত কেউ কেউ কমিটিতে পদ পেয়ে যাবেন আর যারা পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী কর্মী তারা পদবঞ্চিত থেকে যাবে।’
জানা গেছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি হওয়ার কথা ২৫১ সদস্য বিশিষ্ট। এরমধ্যে সহ-সভাপতি ৪১ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ১০ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হবেন ১০জন। কিন্তু ২৬ জুলাইয়ের সম্মেলনে আজিজুল হক রানাকে সহ-সভাপতি, আসাদুজ্জামান নাদিমকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মোবারক হোসেনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে মোট ৫ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি শিগগিরই দেয়ার কথা বলে সম্মেলনের ইতি টানা হয়।
কমিটিতে পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে প্রথম থেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন পদ-প্রত্যাশীরা। প্রায় প্রতিদিনই সোহাগ-জাকিরের বাসায় ধর্ণা দিচ্ছেন অনেকে। এছাড়া এ দুই নেতা ক্যাম্পাসে আসলে সবাই হাজিরা দিতে এবং হাত মেলাতে লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে নেতাকর্মীদের বহর নিয়ে দুই নেতার আড্ডাস্থলে নিয়মিত ভীড় জমাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই পাচ্ছেন বিশাল ‘প্রটোকল।’
পদ পেতে মরিয়া অভিযুক্তরাও: এরমধ্যে অতীতে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকা ছাত্রলীগের কয়েক জন নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত এসব নেতাদের প্রতাপও কম নয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সংগঠনের সাধারণ নেতাকর্মীরা।
এছাড়াও গঠনতন্ত্রে অবিবাহিত ও নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে কমিটি গঠন করার কথা বলা হলেও বেশ কয়েকজন বিবাহিত নেতা কমিটিতে পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। এরমধ্যে আছেন সাবেক কেন্দ্রীয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল পর্যায়ের কয়েকজন নেতা। অভিযোগ উঠেছে অনেক পদ-প্রত্যাশী নেতার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে বহু আগে।
জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবারও প্রভাব থাকবে সাবেক নেতাদের। যদিও সোহাগ-জাকির শুরু থেকেই বলে আসছেন তারা কেবল যোগ্যদেরই পদায়িত করবেন। তথাপি ‘বড়ভাইদের’ শেষপর্যন্ত কতটুকু উপেক্ষা করতে পারেন সেটিই দেখার অপেক্ষায় আছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।
ছাত্রলীগের বক্তব্য: কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন
বাংলামেইলকে বলেন, ‘কমিটি খুব শিগগিরই দেয়া হবে। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি।’
এতোদিনেও কমিটি দিতে না পারা ব্যর্থতা কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যর্থতা বলা যাবেনা, কারণ আমরা তো বসে নেই। দশ হাজার ‘সিভি’ জমা পড়েছে, সবগুলো দেখতে হচ্ছে।’
অভিযুক্তদের পদায়নের সম্ভাব্যতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের কমিটিতে আনা হবে না। সবাই তো সিভি দিতে পারে, আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি কার ইমেজ কেমন।’
ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির বলেন, ‘কোনো সিন্ডিকেটের প্রভাব নেই। আমরা দু’জনেই সবগুলো সিভি দেখছি। তবে বড় ভাইরা আমাদের পরামর্শ দিতেই পারেন।’
জানতে চাইলে সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগও শিগগিরই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে জানিয়ে বাংলামেইলকে বলেন, ‘অভিযুক্ত কেউ ছাত্রলীগের নেতা হতে পারবেন না।’
ছাত্রলীগে কখনোই কোনো সিন্ডিকেট ছিল না এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না জানিয়ে সোহাগ বলেন, ‘আমরা কেউই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইনি। সামনেও হবে না।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন