কর্তৃত্ব হারানোর শঙ্কায় তুরস্ক ও ইসলামের বিরুদ্ধে লেগেছে ইউরোপ: এরদোগান
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বলেছেন, গত সপ্তাহে তুর্কিমন্ত্রীদের যাত্রায় রোটারডামে বাধা দেয়ার পর নেদারল্যান্ডসের কোনো সিটিই আর কোনোভাবেই তুরস্কের ইস্তাম্বুল সিটির ‘সিস্টার সিটি’ হতে পারে না।
বুধবার সেন্ট্রাল আনাতুলিয়ান প্রদেশে আয়োজিত এক জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় তিনি ডাচ সিটির সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি বাতিল ও সম্পর্ক ছেদ করার জন্য ইস্তাম্বুলের মেয়রকে বলেন।
‘এই ধরনের নীচু মানসিকতার লোকজনের সঙ্গে আমাদের শহরের সিস্টার সিটির সম্পর্ক থাকতে পারে না’ বলেও উল্লেখ করেন এরদোগান।
প্রসঙ্গত, ইস্তাম্বুল পৌরসভার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে ২০০৫ সালে ডাচ রোটারডাম সিটির সঙ্গে ‘সিস্টার সিটিস’ নামে একটি যৌথচুক্তিতে স্বাক্ষর করে শহরটির কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে দুটি শহরের মধ্যে সাংস্কৃতিকসহ অন্যান্য বিষয়ে সম্পর্ক চলে আসছে।
এরদোগান আরো বলেন, তুরস্ক এবং ইসলামকে ভয় পেয়েই তুর্কিবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে ইউরোপ।’
‘ইউরোপের ভয়, তারা ক্রমেই কর্তৃত্ব হারাচ্ছে, তাই তারা ভীত এবং যা কিছু তাদের থেকে ভিন্ন সেটার প্রতি তারা ক্রমেই শত্রুভাবাপন্ন হয়ে উঠছে, বলেও যোগ করেন তিনি।
তিনি বসনিয়ার স্রেব্রেনিচা গণহত্যায় নেদারল্যান্ডস কুকর্মের সহকারিতা সম্পর্কে তার অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ডাচরা সেই ইহুদী, রোমান এবং এমনকি অতীতে খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন শাখার সম্প্রদায়দের অনুরূপ কুকর্ম করেছে।
‘গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও আইনের পাঠ কোন অধিকার ইউরোপের নেই। কেননা, তারা এখনো ফ্যাসিবাদের আত্মা ইউরোপের রাস্তায় ছড়াচ্ছে।’ উল্লেখ করেন এরদোগান।
‘আমরাই ইউরোপের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের সুরক্ষা বজায় রাখবো। যা ঐ মূল্যবোধ এখন আমাদের থেকে তাদের বেশি দরকার।’
এরদোগান তুরস্কের ব্যাপারে নেদারল্যান্ডসের দৈত্য নীতির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, কেন তোমরা তুরস্কের রেফারেন্ডামের ইয়েস ভোটের সমর্থকদের ক্যাম্পেইন বন্ধ করেছো?
তিনি জার্মান-স্যুইচ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ‘এগাইনস্ট এরদোগান’স ডিক্টেটরসীপ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রত্যাখ্যান করে এরদোগান বলেন, এখানে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিষয় জড়িত নেই। এখানে যা হচ্ছে তার সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার বক্তব্যে রেফারেন্ডামের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করেন।
প্রসঙ্গত, তুরস্কের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে আগামী ১৬ এপ্রিল দেশটির সরকার রেফারেন্ডামের আয়োজন করেছে। এতে ক্ষমতাসীনরা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে ‘ইয়েস’ ভোটের পক্ষে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে।
এরই অংশ জার্মানি ও নেদারল্যান্ডেসে প্রস্তাবিত সমাবেশ শোভাযাত্রা লক্ষ্য ছিল প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর ১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে ইউরোপে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক তুর্কিদের উৎসাহিত করা।
উদাহরণ স্বরূপ, জার্মানিতে তুর্কি বংশোদ্ভুত তিন মিলিয়নেরও বেশি মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে আনুমানিক ১.৪ মিলিয়ন তুর্কি নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য যোগ্য। কার্যত, তুরস্কের প্রবাসীরা দেশটির নির্বাচনে অন্যতম বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।
জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও নেদারল্যান্ডস জানিয়েছে, ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনায় আরো ইন্ধন জোগান হতে পারে। যদিও ফ্রান্সে একটি সমাবেশ হওয়ার পর দেশটির কর্মকর্তারা জানান, এ নিয়ে সেখানে কোন হুমকি ছিল না।
ডাচ শহর রোটারডামে সমাবেশে বক্তৃতা দেয়ার ওপর তুরস্কের দুই মন্ত্রীকে বাধা দেয়া হয়। তাদের একজনকে সীমান্ত দিয়ে জার্মানিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
রোটারডামে তুর্কি পতাকাবহনকারী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ জলকামান ও কুকুর ব্যবহার করেন।
এদিকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তুরস্কের ক্ষমতাসীনরা। তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের প্রধান মুখপাত্র কুরতোলমাস বলেন, ‘ডাচ কূটনীতিকদের বা দূতকে বহনকারী প্লেনকে আমাদের আকাশসীমা ব্যবহার কিংবা তুরস্কের ভিতরে ল্যান্ডিং করার অনুমতি দেয়া হবে না।’
ডাচ রাষ্ট্রদূত কিস করনেইলস ভ্যান রিজ বর্তমানে দেশটির বাইরে অবস্থান করছেন। তার অবর্তমানে উপরাষ্ট্রদূত দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি জানান, উচ্চ পর্যায়ের সব রাজনৈতিক আলোচনা স্থগিত করা হবে এবং একটি দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্ব থেকে নেদারল্যান্ডসকে প্রত্যাহার করার জন্য পার্লামেন্টকে পরামর্শ দেয়া হবে।
উপ-প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, যতক্ষণ না নেদারল্যান্ডস তার কর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত এই ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে।
এর আগে এরদোগান নেদারল্যান্ডকে একটি ‘ব্যানানা বা কলা প্রজাতন্ত্র বলে মন্তব্য করে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানান এবং ‘ইসলামফোবিয়া’ বা ইসলামভীতির জন্য পশ্চিমা এসব দেশগুলোকে দায়ী করেন।
এদিকে নেদারল্যান্ড ও জার্মানির এমন ভূমিকার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মহল। তারা এ ঘটনাকে ভিয়েনা কনভেনসনের লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করেছেন।
প্রসঙ্গত, বর্তমান বিশ্বে যে কয়টি দেশ উদীয়মান প্রভাবশালী দেশের তালিকায় রয়েছে, এর মধ্যে তুরস্ক অন্যতম। তুরস্ক ক্রমেই পরাশক্তিতে পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামপন্থী বলে পরিচিত একে পার্টি রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণের একের পর এক সংস্কারে দেশটি রাজনীতি ও অর্থনীতির দিক থেকে দেশটি অভুতপূর্ব উন্নতি লাভ করে। এমন কী একাধিক বার সেনা অভ্যুত্থানের ব্যর্থ প্রচেষ্টাও দেশটি অগ্রযাত্রাকে থামাতে পারেনি। ফলে দেশটি এখন পূর্ব-পশ্চিমা বিশ্বের পরাশক্তির জন্য অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ইউরোপ-এশিয়াসহ বিশ্বের নানা ইস্যুতে তুরস্কের নাক গলানোর বিষয়টিও তারা ভাল চোখে দেখেনি। এতে অনেকটাই নাখোশ পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো। এর ফলে তারা তুরস্কের রাষ্ট্র ক্ষমতার পরিবর্তনে নানাভাবে কাজ করে আসছে। এমন অভিযোগ খোদ তুরস্কের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের। গত বছরের ১৫ জুলাই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পেছনে পশ্চিমাদের যে হাত ছিল তা প্রকাশ্যে আনে ক্ষমতাসীনরা।
১৫ জুলাই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর সেভাবে সহযোগিতা কিংবা সমর্থন পায়নি তুরস্কের ক্ষমতাসীনরা। তাই তারা প্রকাশ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিল। সেই সঙ্গে তুরস্ক পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ক্রমেই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পূর্বের দিকে ঝুঁকছে। রাশিয়ার সঙ্গে নানামুখী সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে মগ্ন। এরই মধ্যে নতুন করে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।
আনাদোলু নিউজ এজেন্সি অবলম্বনে
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন