রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

কলকাতায় কীভাবে শুরু হয় যৌনকর্মীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন

ভারতের কলকাতা শহরে ২০০১ সালের তেসরা মার্চ কয়েক হাজার যৌন কর্মী তাদের অধিকার আদায়ে এক বিরল সমাবেশের আয়োজন করেন। সেটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় যৌন কর্মীদের নিজ উদ্যোগে এধরনের প্রথম আন্দোলন এবং ওই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে এর পর থেকে প্রতিবছর তেসরা মার্চ পালন করা হয় যৌন কর্মীদের অধিকার দিবস হিসাবে।

যৌনকর্মীরা এই সমাবেশ আয়োজন করেছিলেন তাদের অধিকার এবং তাদের প্রতি বৈষম্যের বিষয়গুলো তুলে ধরতে। ভারতের একজন শীর্ষস্থানীয় এইচআইভি বিশেষজ্ঞ অনুষ্ঠানে ড: স্মরজিৎ জানা কলকাতার যৌনকর্মীদের সাহায্য করেছিলেন এই সমাবেশ আয়োজনে।

১৯৯০ থেকে ড: জানা কলকাতার যৌনকর্মীদের সাহায্য করে আসছেন। ১৯৯৫ সালে তার সহায়তা নিয়ে যৌনকর্মীরা গড়ে তোলেন দুর্বার মহিলা সম্বন্বয় কমিটি নামে একটি সংস্থা যাতে এর মাধ্যমে তারা তাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরতে পারেন।

ইতিহাসের সাক্ষী অনুষ্ঠানে তিনি বলছিলেন বিশ্বের অনেক দেশেই এই পেশাকে সামাজিক এবং আইনগতভাবে মেনে নেওয়া হয় না। তাই যৌনকর্মীরা এই মেলার মাধ্যমে চেয়েছিলেন তাদের পেশার কথা, তাদের জীবনের কথা এবং সমাজের অন্য পেশার মানুষদের মত তাদেরও অধিকারকে যে মর্যাদা দেওয়া উচিত তা তুলে ধরতে।

ওই সমাবেশের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মিলন মেলা’।

২০০১ সালের ঐ আয়োজনে সেদিন হাজির ছিলেন ভারতী দে নামে একজন যৌনকর্মী, যিনি ১৫ বছরের উপর যৌনকর্মী হিসাবে কাজ করেছেন।

তাদের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল তিন হাজারের উপর যৌনকর্মী । সঙ্গে ছিল তাদের সন্তানরা। তারা এসেছিল প্ল্যাকার্ড হাতে । ড: জানা বলছিলেন, “এটা ছিল তাদের জন্য একধরনের বিজয়। কারণ সেই প্রথমবার তারা নিজেরা তাদের ইস্যুগুলো তুলে ধরতে নিজেরাই একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।”

এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ একটি যৌনপল্লী – কলকাতার সোনাগাছিতে রয়েছে কয়েকশ বেশ্যালয়। ভারতে যৌনকর্মীদের পেশা আইনত বৈধ হলেও প্রকাশ্যে এ বিষয়ে প্রচার চালানো বা বেশ্যালয়ের মালিক হওয়া আইনসিদ্ধ নয়। যেটা যৌনকর্মীদের ব্যবসা চালানোর জন্য সমস্যা তৈরি করে।

প্রতিবছর তেসরা মে যৌন কর্মীরা তাদের অধিকার দিবস পালন করেন কলকাতায় প্রতিবছর তেসরা মে যৌন কর্মীরা তাদের অধিকার দিবস পালন করেন কলকাতায়

ভারতী দে বলছিলেন তিনি ছিলেন গ্রামের মেয়ে।

“ছোটবেলা বাবা মারা যাবার পর দাদারা চেয়েছিল বোনদের লেখাপড়া শেখাবে না- আমাদের বিয়ে দিয়ে দেবে। কিন্তু অনেক ফাইট করে আমি মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছিলাম। ক্লাস নাইন টেনে বই কেনা দাদারা বন্ধ করে দেওয়ায় আমি রেগুলারে পরীক্ষা দিতে পারিনি।”

তিনি বলেন পরীক্ষা দেবার পর কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে তিনি কসমেটিক সেলস্ গার্লের কাজ নেন। তার উদ্দেশ্য ছিল রেজাল্ট বেরনোর পর তিনি আবার পড়াশোনা করবেন। এর মধ্যে হাত খরচের জন্য এবং পাছে বিয়ে দিয়ে দেয় এই ভয়ে কাজ নিয়েছিলেন।

“কিন্তু সেটাতে যথেষ্ট পয়সা ছিল না। আমার যখন ২১ বছর বয়স, তখন একজন আমাকে বলল একটা কাজ আমি তোকে নিয়ে যাব। কররি? সে একজন রেড-লাইট এলাকার বাড়িওয়ালি ছিল।”

ওই বাড়িওয়ালি তাকে কাজ বোঝানোর পর জেনেশুনেই তিনি এই পেশায় আসেন, বলছিলেন ভারতী দে।

আর্থিক অস্বচ্ছলতা না থাকলেও ভারতী দে বলেছেন অন্যান্য কারণে কর্মজীবনে তাকে নানা অসুবিধায় পড়তে হয়েছে।

“মস্তানদের, পুলিশের, পাড়ার ছেলেদের, পলিটিকাল লিডার তাদের বিনা পয়সায় মেয়েদের কাছে যাওয়া, মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়া, এরকম প্রচুর জুলুম ছিল। যখন তখন মারধোর, অত্যাচার দেখার পর আমি মেয়েদের সংগঠিত করে বলতাম – চল একসঙ্গে ফাইট করি। কেন এই অত্যাচারগুলো হবে?”

ড: জানা বলছিলেন এছাড়াও সামাজিক জীবনে যৌনকর্মীদের বড় একটা সমস্যা ছিল তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করা।

“ছেলেমেয়েদের পড়ানো ছিল প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। এর কারণ সমাজ তাদের ভাল চোখে দেখত না এবং তারা ছিল বৈষম্যের শিকার।”

সমাজে তাদের এই কলঙ্কিত ভাবমূর্তি মুছতে যৌনকর্মীরা চেয়েছিলেন স্থানীয় লোকেরা এই মেলায় আসুক। তাদের আশা ছিল পাড়ার লোকজন যদি যৌনকর্মীদের সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ পায়, তাহলে হয়ত তাদের মন থেকে ভয় বা আশঙ্কা দূর হবে।

ড: জানা বলছিলেন এই মিলন মেলার উদ্দেশ্য ছিল সমাজের সব স্তরের মানুষদের সঙ্গে যৌন কর্মীদের মেলামেশার সুযোগ করে দিলে, যৌন কর্মীদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ হয়ত বদলাতে পারে।

“যৌনকর্মীদের যুক্তি ছিল তাদের কাজটাও একটা পেশা। তারাও কাজ করে খাচ্ছে। কিন্তু সমাজ তাদের মনে করে খারাপ- তারা পতিতা। সেই দৃষ্টিভঙ্গিটাই তারা চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছে। তারা সমাজকে তাদের অবস্থান বোঝাতে চেয়েছে। কেন তারা এই কাজ করছে – তাদের ইস্যু আর চ্যালেঞ্জগুলো কী? ”

এই সম্মেলনের আয়োজন হয়েছিল বিশাল এক স্টেডিয়ামে। কারণ সেসময়কার ক্রীড়ামন্ত্রী তাদের উদ্যোগকে সমর্থন করেছিলেন।

যৌন কর্মীদের সন্তানদের প্রতি সমাজের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধেও আন্দোলন করছেন যৌন কর্মীরা যৌন কর্মীদের সন্তানদের প্রতি সমাজের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধেও আন্দোলন করছেন যৌন কর্মীরা

ভারতী দে বলছিলেন সম্মেলনে অনেকের প্রশ্ন ছিল কেন তারা এই পেশায় এসেছেন।

“তারা জানতে চেয়েছিলেন কেন আমরা এই পেশায় থেকে শ্রমিকের স্বীকৃতি চাইছি। আমার বুঝিয়েছিলাম কেন আমরা এই পেশায় এসেছি।”

সম্মেলন চলেছিল চারদিন ধরে। প্রত্যেকদিন ছিল আলাদা আলাদা ইভেন্ট। ছিল আলোচনা- প্রদর্শনী। অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই এসেছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে, তবে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকেও যৌনকর্মীরা এসেছিলেন।

তাদের ইস্যু এবং চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েই তারা কথা বলেন চারদিনের ওই সম্মেলনে। ফুটবল স্টেডিয়ামে সামিয়ানা টাঙিয়ে নানাধরনের স্টল তৈরি করা হয়েছিল। সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ২৫ হাজার মানুষ।

ভারতী দে বলছিলেন সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র পরিচালক অনেকেই তাদের কথা শুনে তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন।

শহরের অনেক নামকরা সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র পরিচালক সম্মেলন শেষে বলেছিলেন সেই প্রথম তারা যৌনকর্মীদের কাজ এবং জীবন সম্পর্কে জেনেছেন, বলছিলেন ড: জানা।

“এমনকী সম্মেলনের শেষ দিনে ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি থেকে কলকাতায় এসেছিলেন শুধু এই সম্মেলনে ভাষণ দিতে। তিনি পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে যৌনকর্মীদের হয়রানির সমালোচনা করেছিলেন। তার এই বক্তব্য যৌনকর্মীদের সাহস জুগিয়েছিল,” বলেছিলেন ড: জানা। ভারতী দে বলছিলেন অন্যরা যেমন অর্থের জন্য অন্য পেশায় কাজ করেন, তারাও অর্থ উপার্জনের তাগিদেই এই পেশায় কাজ করছেন। আর পাঁচজন শ্রমিকের সঙ্গে তাই নিজেদের তফাৎ করতে রাজি নন ভারতী দে।

আর একথাটাই সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরে তারা অন্য শ্রমিকদের জন্য যেসব সুযোগ সুবিধা আছে তা আদায়ের জন্য আন্দোলনে নামার সাহস পেয়েছেন বলে জানালেন ভারতী দে। আর এই আন্দোলনের মাধ্যমে সুযোগ সুবিধা তারা আদায়ও করেছেন।

যৌনকর্মীদের সম্মেলন এখন হয় প্রতি এক বছর অন্তর। ২০০১ সালে চারদিনের ওই সম্মেলন শেষ হবার অল্প কিছুদিন পর তেসরা মার্চ তারিখটি আন্তর্জাতিক যৌনকর্মী অধিকার দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ওই সম্মেলন কলকাতার যৌনকর্মীদের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী একটা প্রভাব রেখেছিল।

ড: জানা মনে করেন এই সম্মেলন সাধারণ মানুষ এবং অবশ্যই নীতি নির্ধারকদের মানসিকতায় একটা পরিবর্তন এনেছিল।

“পরে সমীক্ষাতে দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গে যৌনকর্মীদের উপর পুলিশের হয়রানি এবং স্থানীয় গুণ্ডাদের অত্যাচার, চাঁদাবাজি কমে গেছে।”

ভারতী দে ২০১৩ সালে যৌনকর্মীর কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। এখন তিনি দুর্বার মাহিলা সম্বন্বয়ক কমিটির প্রধান , যে কমিটি পশ্চিমবঙ্গের ৭৫ হাজারের উপর ও যৌনকর্মীদের অধিকার আদায়ে কাজ করছে।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল

আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন

মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬

ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন

ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত

গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন

  • বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
  • একদিনে গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৫৭ ফিলিস্তিনি 
  • কানে ব্যান্ডেজ নিয়ে সম্মেলনে ট্রাম্প
  • ওমানে বন্দুকধারীর হামলায় মসজিদের কাছে   ৪জন নিহত
  • ট্রাম্পকে গুলি করা ব্যক্তি দলের নিবন্ধিত ভোটার
  • প্রেসিডেন্ট মাসুদকে সতর্কতা ইরানিদের 
  • ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে দেশের মানুষের আস্থা প্রয়োজন
  • ভারত আমাদের রাজনৈতিক বন্ধু, চীন উন্নয়নের : কাদের
  • ইসরায়েলে মুহুর্মুহু রকেট হামলা ইসলামিক জিহাদের
  • প্রথম বিতর্কের পর ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকছেন দোদুল্যমান ভোটাররা!
  • রেবন্ত রেড্ডি এবং চন্দ্রবাবু নাইডু বৈঠক নিয়ে নানা জল্পনা
  • স্টারমারের দুঃখ প্রকাশের পরও বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ক্ষোভ