কল্যাণপুরে নিহতদের একজন নোয়াখালীর শিবিরকর্মী যোবায়ের
নোয়াখালী: রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহত নয় জনের মধ্যে একজন নোয়াখালীর শিবির কর্মী যোবায়ের হোসেন বলে জনিয়েছে তার পরিবার। ওই তরুণ গত ২৫ মে থেকে নিখোঁজ হয়। আর ১২ জুলাই তার বিষয়ে সুধারাম থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বাবা আবদুল কাইয়ুম।
যোবায়েরের বাড়ি নোয়াখালীর পশ্চিম মাইজদি গ্রামে। স্থানীয়ভাবে সবাই তাকে শিবির কর্মী হিসেবেই চিনত। নোয়াখালী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষে পড়তেন যোবায়ের।
তার বাবা আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমার পরিবারের কেউ জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জড়িত না। কিন্তু চাচাতো ভাই বাহাদুর আমার ছেলেটিকে শিবিরে ঢুকিয়েছে, তার জন্যই আজ এই পরিণতি হলো।’ বাহাদুর এখন কোথায় আছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি যোবায়েরের বাবা।
আবদুল কাইয়ুম জানান, ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে থানায় আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেও পুলিশ তার বিষয়ে কোনও খোঁ দিতে পারেনি।
জানতে চাইলে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, ‘কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের ছবি দেখে তার মা-বাবা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন এদের মধ্যে তার ছেলে যোবায়ের আছে। পুরোপুরি নিশ্চিত হতে তারা ঢাকায় যাবেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, যোবায়েরের বিরুদ্ধে এর আগে নাশকতার কোনও অভিযোগ ছিল না তাদের থানায়। বলেন, সাধারণ ডায়েরি করার পর তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল।
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার ইউসুফ আলী বলেন, ‘নিহত জঙ্গিদের কারও বিষয়ে পরিচয় পাওয়া গেছে, এটা কেউ এখনও আমাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি। তবে নানা সূত্র থেকে বিভিন্ন তথ্য পাচ্ছি। এগুলো যাচাই করা হচ্ছে।’
রাজধানীতে এক আলোচনা সভা শেষে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, তারা বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছেন তবে যাচাইবাছাই না করে কারো পরিচয় প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না।
কল্যাণপুরে নিহতদের মরদেহ রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। সেখানকার কর্মকর্তারা জানান, এদের কারও স্বজন এখন পর্যন্ত হাসপাতালে যোগাযোগ করেননি।
গত সোমবার কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়ি হিসেবে পরিচিত ভবনের পঞ্চম তলায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে গোলাগুলিতে সন্দেহভাজন নয় জঙ্গি নিহত হয়।
রাতেই পুলিশ এই নয় জনের ছবি প্রকাশ করে তাদের বিষয়ে তথ্য চায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে এই ছবি দেখে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে যোবায়েরের পরিবার।
কল্যাণপুরের ওই বাড়ি থেকে আহত অবস্থায় আটক হয় রাকিবুল হাসান হাসান ওরফে রিগ্যান নামে এক তরুণ। তার বাড়ি বগুড়ায়। এক বছর আগে শিবির নিয়ন্ত্রিত মেডিকেল কোচিং সেন্টার রেটিনায় ভর্তি হওয়ার পর নিখোঁজ হন তিনি।
ওই বাড়িতে থাকা এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, পুলিশের অভিযান শুরুর পর জঙ্গিরা ‘মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী’, ‘এই তাগুদ সরকার বেশিদিন টিকবে না’, ‘তোমাদের আছে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, আমাদের আছে ইমানের জ্যাকেট’- এ জাতীয় স্লোগান ও বক্তব্য দেয়। এর বেশ কিছু স্লোগান জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবির কর্মীদের কাছে জনপ্রিয়।
গত ১ জুলাই গুলশানের অভিজাত রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজান বেকারি এবং ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের অদূরে জঙ্গি হামলার পর জানা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কিছু তরুণ এবং তাদের স্বজনরা নিখোঁজ রয়েছে। তারা দেশ-বিদেশে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়েছে বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ফিরে আসার আকুতি জানিয়ে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফেরেনি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নোয়াখালীতে অস্ত্র ঠেকিয়ে কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগ
নোয়াখালীর সদর উপজেলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে সতের বছর বয়সী এক কিশোরীকেবিস্তারিত পড়ুন
ভিক্ষুকে সয়লাভ নোয়াখালীর শহর
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী এখন ভিক্ষুকের শহরে পরিণত হয়েছে। যদিওবিস্তারিত পড়ুন
নোয়াখালীতে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ
পেট্রলবোমা হামলার মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাবিস্তারিত পড়ুন