কান ধরে দাঁড়াও: সাকিবকে কোচ
আজ সবাইকে একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই এ সময়কার জনপ্রিয় টাইগার তারকা সাকিব আল হাসানের খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুর একটি গল্প। সাকিবকে খুব কাছ থেকে দেখা এক ক্রিকেটবোদ্ধার মুখে স্মৃতিচারিত হওয়া গল্পটি লিখেছেন জহির উদ্দিন মিশু।
কিশোর বয়সে খানিকটা দুষ্ট, রাগী আর চরম ক্রিকেট অনুরাগী ছিলেন সাকিব। তখন সবে মাত্র বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছেন তিনি। ভর্তি হওয়ার প্রথম দেড় মাস ব্যাটিং অনুশীলনের কোনো সুযোগই পাননি সাকিব। মূলত সে সময় সাকিবকে একজন বোলার হিসেবে গণ্য করা হত।
কিন্তু মনের ভেতর প্রবল একটা ইচ্ছা সাকিবকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াতো। অবশেষে সেটার বহিঃপ্রকাশ হলো এভাবে-হঠাৎ একদিন জেদ করে সাকিব কোচকে বললেন, ‘স্যর আমি ব্যাট করতে চাই।’
কোচ মুখটা একটু ভার করেই বললেন, ‘কান ধরে দাঁড়াও।’ ছোট-বড় সবার সামনে মাঠের পাশে কান ধরে দাঁড়িয়ে গেলেন সাকিব। কিছুদিন পর শুরু হলো বিভিন্ন ক্লাবের খেলোয়াড় বাছাই প্রক্রিয়া। খবর এলো, স্ট্যান্ডবাই হিসেবে দলে সুযোগ পাচ্ছেন সাকিব। নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে টানা অনুশীলনে ব্যস্ত সাকিব।
রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে টুর্নামেন্ট শুরুর দিনক্ষণও চূড়ান্ত। উদ্বোধনী দিনে মাঠে নামবে সাকিবের দল। কিন্তু নতুন বলে ওইদিন একাদশে জায়গা হয়নি সাকিবের। দলও হারে বেশ বাজেভাবে।
পরের খেলায় দলে সুযোগ পেয়ে গেলেন সাকিব। পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার মঞ্চে সাকিবের সামনে অগ্নিপরীক্ষা। কারণ এখানে ভালো করলেই হাতে উঠবে বিকেএসপির বয়স ভিত্তিক দলে ঢোকার টিকিট।
মাঠে নেমে নিজের প্রথম বলেই তুলে নিলেন উইকেট। আর ব্যাট হাতে নেমে তৈরি করলেন এক নাটকীয়তা। প্রথম বলে বোল্ড হয়ে গেলেন সাকিব! কিন্তু নো বল! পরের বলে ক্যাচ তুলে দিলেন স্লিপের হাতে। কিন্তু ক্যাচ ড্রপ। তৃতীয় বলে বড় শট নিতে গিয়ে উড়ে গেল সাকিবের স্ট্যাম্প।
প্রথম দিন না পারলেও এরপর ঠিকই পেরেছিলেন সাকিব। ৫২ বলে ১০২ রান। সেদিন শুরুতে কিছু উইকেট পড়ে যাওয়ায় সাকিবকে আগেভাগেই নামিয়ে দেয়া হয়। নেমেই ঝড়ো ব্যাটিং। চার-ছক্কার ফুলঝুরি। বোলারদের বেধড়ক পিটুনি শুরু। সতীর্থরা প্রতি রানের সাথে সে কি চিৎকার।
সেই সাকিব আর আজকের সাকিবের মধ্যে যোজন যোজন পার্থক্য। ক্রিকেট বিশ্ব আজ এক নামে চেনে সাকিবকে। দেশ-বিদেশে চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। ঝুলিতে পুরছেন অসংখ্য রেকর্ড আর কীর্তি। রাঙাচ্ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটকেও। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করে দখল করেছেন সর্বোচ্চ চূড়া-বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি নিয়মিত দাপটের সঙ্গে খেলে যাচ্ছেন দেশের বাইরের বিভিন্ন জনপ্রিয় ঘরোয়া টুর্নামেন্টে-ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), ইংলিশ কাউন্টি, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (সিপিএল) থেকে শুরু করে পাকিস্তান সুপার লিগ পিএসএলেও।
এভাবে একের পর এক চলতে থাকে সাকিবের ব্যাটিং-বোলিং নৈপুণ্য। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে সাকিবের সুনাম। জাতীয় দলের বিভিন্ন খেলোয়াড়রাও ছুটে যান তাঁর খেলা উপভোগ করতে। ধীরে ধীরে নিজেকে আরও পরিণত করে তোলেন সাকিব। গায়ে জড়ান লাল-সবুজের জার্সি। হয়ে উঠেন ক্রিকেট বিশ্বের এক নন্দিত মহাতারকা।
বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম সাকিব আল হাসান। ২০০৬ সালে ২২ গজে পথচলা শুরু সাকিবের। একদিনের ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১৬৬ ম্যাচে ৪,৬৫০ রানের পাশাপাশি ২২০টি উইকেট শিকার করেছেন। টি-টোয়েন্টিতে ৫৭ ম্যাচ খেলে ঝুলিতে পুরেছেন ১,১৫৯ রান আর ৬৭টি উইকেট। সাদা পোশাকে খেলেছেন ৪৫টি ম্যাচ। রান ৩,১৪৬। আর উইকেট দখল করেছেন নিয়েছেন ১৬১টি।
লেখক: ক্রীড়া সাংবাদিক
সূত্র:ঢাকাটাইমস
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন