কারাগারে যেভাবে ২২ বছর কেটেছে ফজলু মিয়ার
১৯৯৩ সালের জুলাইয়ে জেলে যান, আর বের হন গত ১৪ অক্টোবর। তিনি সিলেটের ফজলু মিয়া। কারা অভ্যন্তরেই কেটে গেছে তার ২২টি বছর। তাও বিনা দোষে, বিনা অপরাধে!
আদালত সূত্র অনুযায়ী, ১৯৯৩ সালের ১১ জুলাই সিলেট মহানগরীর কোর্টপয়েন্ট থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ফজলু মিয়াকে আটক করেন ট্রাফিক পুলিশের তৎকালীন সার্জেন্ট জাকির হোসেন। পরে মানসিক স্বাস্থ্য আইনের ১৩ ধারায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। একাধিকবার জামিন পেলেও জিম্মাদার না থাকায় বেরোতে পারেননি কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠ থেকে।
প্রায় যুুবক বয়সে জেলে যাওয়া ফজলু সেখান থেকে বের হলেন বৃদ্ধ হয়ে! এই চার দেয়ালের মধ্য থেকে মুক্ত হাওয়ায় বেরিয়ে আসাটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না ফজলু মিয়ার। এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তিনি। অনেক চেষ্টার পর মুখ খুললেন তিনি।
বললেন, ‘আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমি ভেবেছিলাম জেলের মধ্যেই হয়তো আমার মৃত্যু হবে। এ জন্য জেলকে আপন করে নিয়েছিলাম।’
নিজের বাবার ভিটা দেখতেও ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। যদিও সিলেটের দক্ষিণ সুরমার তেতলি ইউনিয়নের ধরাধরপুর গ্রামের মওলা মিয়া ফজলুকে পালকপুত্র হিসেবে বড় করেছেন। বর্তমানে তিনি বেঁচে নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকাকালীন সত্যিই সবার কাছে আপন হয়ে উঠেছিলেন ফজলু মিয়া। কারাগারের বন্দি থেকে শুরু করে কারা কর্মকর্তা সবাই তাকে ‘ফজলু মামা’ বলে ডাকতেন।
কয়েক দিন আগে জেল থেকে জামিনে বেরিয়েছেন সিলেট মহানগর ছাত্রদল নেতা লিটন আহমদ। ফজলু মিয়ার সঙ্গে একই ওয়ার্ডে চার মাস ছিলেন তিনি।
লিটন আহমদ জানান, কারাগারে সবাই খুব পছন্দ করতেন ফজলু মিয়াকে। সবাই ফজলু মামা বলে ডাকতেন তাকে। যারাই কারাগারে যেতেন, তারা সবাই ধীরে ধীরে ফজলু মামার ভক্ত হয়ে যেতেন। জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই তাদের কাপড়চোপড় তাকে দিয়ে যেতেন।
তিনি আরো জানান, ফজলু মামা সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতেন। প্রতিদিন সকালে গোসল করতেন। নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করতেন। ফজর আর জোহরের নামাজের পর উচ্চ স্বরে দরুদ পড়তেন। প্রায় সময়ই বিভিন্নজনের দিয়ে যাওয়া স্যুট-টাই পরে কারাগারের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়াতেন। মন চাইলে যে কারো সঙ্গে ষোল গুটি বা তিন গুটি খেলতেন। হেরে গেলে বিমর্ষ হতেন তিনি।
লিটন আহমদ জানান, অনেক কয়েদিই ফজলু মামার কাছে দোয়া চাইতে আসতেন। তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করতেন। তবে যাদের চুল লম্বা থাকত, তাদের দোয়া করতেন না তিনি। কারাগারে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নাম ধরে ধরে দোয়া করতেন ফজলু মামা।
কারাগারে সবাই ফজলু মামার গান শোনার জন্য পাগল ছিলেন। সবাই মিলে অনুরোধ করলে গান গাইতেন ফজলু মিয়া। বেশির ভাগ সময়ই ‘সব সখিরে পার করিতে নেবো আনা আনা, তোমার বেলায় নিব সখি তোমার কানের সোনা সখি গো…’ এই গান গাইতেন তিনি।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘ফজলু মিয়া একজন সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। কারাগারের সবার সঙ্গেই ছিল তার আন্তরিক সম্পর্ক। সবাই পছন্দ করতেন তাকে। ফজলু মামা বলে ডাকা হতো তাকে।’
গত বুধবার আদালত থেকে জামিন পান ফজলু মিয়া। মূলত, তার একসময়ের সহপাঠী সিলেটের দক্ষিণ সুরমার তেতলি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন রাসেল জিম্মাদার হওয়ায় ফজলু মিয়াকে জামিন দেওয়া হয়।
কামাল উদ্দিন রাসেল বলেন, ‘ফজলু মিয়াকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। বছর তিনেক আগে জানতে পারি, তিনি মারা গেছেন। কিন্তু গত কয়েক দিন আগে তিনি কারাগারে আছেন জানতে পেরে তার জামিনের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করি। শেষ পর্যন্ত সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতের বিচারক জহুরুল হক চৌধুরী আমার জিম্মায় তাকে মুক্তি দেন। তার জামিনের বিষয়ে সহযোগিতা করেছে বেসরকারি সংস্থা ব্লাস্ট।’
তিনি বলেন, ‘ফজলু মিয়াকে তেতলি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বাদশা মিয়া নিজের বাড়িতে রাখতে চেয়েছিলেন। তবে তেতলি ইউপি চেয়ারম্যান ওসমান আলী আগ্রহ সহকারে তার জিম্মায় নিয়েছেন ফজলুকে। আমি নিয়মিত খোঁজ রাখছি। আজ শনিবার বিকেলে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক তার চিকিৎসা চলবে।’
কামাল উদ্দিন রাসেল জানান, বর্তমানে ফজলু মিয়া শান্ত আছেন। কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা নেই তার মধ্যে। হেঁটে বেড়াচ্ছেন গ্রামে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

সিলেটে মোহসিন আহমেদ চৌধুরীর বাসভবনে হামলা ও ডাকাতি
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আওয়ামী লীগ নেতা মোহসিন আহমেদ চৌধুরীর সিলেট শহরেরবিস্তারিত পড়ুন

সিলেটের জঙ্গি নেতা আব্দুল বারি ও শামসু জামিনে মুক্ত
নিজস্ব সংবাদদাতা: শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিবাদী সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এরবিস্তারিত পড়ুন

সিলেটে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
দ্বিতীয় দফার বন্যায় সিলেট অঞ্চলে সাত লক্ষাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দি।বিস্তারিত পড়ুন