সব বাসই সিটিং ॥ যাত্রীরা দুর্ভোগে
কিছুতেই থামছে না বাড়তি বাস ভাড়া আদায়
ওমর ফারুক : ‘মামা, ওঠা যাবে না, নামেন-নামেন। দেখছেন না গেট লাগানো। জোর করে উঠছেন কেনো? আমাদেরটা সিটিং সার্ভিস। অতিরিক্ত যাত্রী না ওঠানো মালিকের নির্দেশ। আগে তো সিটিং ছিলো না। হঠাৎ এ অবস্থা কেনো? আরে, জানেন না, ভাড়া বেড়েছে’? বাড়তি ভাড়া যতোদিন না প্রচলিত হচ্ছে, ততোদিন সিটিং চলবে। স্বাভাবিক হলে আবার আগের মতো যেতে পারবেন।’ এতে আপনার লাভ কী? আর বলবেন না। আমাদের আরো লস। আগে, ওবিল সই হলে রাস্তা থেকে কিছু যাত্রী ওঠাতে পারতাম। তাতে কিছু পয়সা হাতে আসতো। এখন সেটি হচ্ছে না। বেতনও বাড়েনি। বড় কষ্টে আছি-মামা। সব সময় আমাদেরই লস। এখন আপনি নামেন। রাস্তায় মালিক সমিতির লোক আছে। কেউ দাঁড়িয়ে আছে দেখলে উল্টো আমাকে জরিমানা করবে। আপনি শিক্ষিত মানুষ হয়ে আমাকে লস করাবেন না।’ রাজধানীর চিড়িয়াখানা, ফার্মগেট ও গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী সব চেয়ে লোকাল সার্ভিস বলে পরিচিত তানজিল পরিবহনের কন্ডাকটর মাসুদ হোসেন ও এক যাত্রীর মধ্যে এভাবেই কথা বলতে শোনা যায়।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পর রাজধানীর বাস মালিকদের দাবির মুখে প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারি নির্দেশ না মেনে ঘোষণার পর থেকে অধিকহারে ভাড়া আদায় করছে বাস মালিক কর্তৃপক্ষ। যে যার মতো তালিকা টানিয়ে এক প্রকার জোর করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। প্রশাসনের চোখের সামনে বাস মালিক কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন অধিক ভাড়া আদায় করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কারণ খুঁজতে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহু সদস্যের রাজধানীতে এক বা একাধিক বাস ও মিনিবাস আছে। ভাড়া বৃদ্ধিতে এখন তাদের পোয়াবারো। সে কারণে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা নিরাপদ দূরত্বে থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়কে তারা উৎসাহিত করছে। ফলে সব বাসই এখন সিটিং সার্ভিসে পরিণত হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ফিটনেস বিহীন বাসও সিটিং সার্ভিসে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর সুপার লোকাল বলে পরিচিত ৭ নম্বর, ৮ নম্বর, ৯ নম্বর বাসও এখন সুপার সিটিং সার্ভিস।
গতকাল সকাল ৯ টা। রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরে হাজারো অফিসগামী যাত্রীর ভিড়। বাসের জন্য অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। কারো বিক্ষিপ্ত হয়ে জোরপূর্বক বাসে ওঠার চেষ্টা। কিন্তু পর্যাপ্ত বাস কোথায়। যে কয়টা আছে তার প্রতিটিরই গেট লাগানো। একটি বাস স্ট্যান্ডে এলে তাতে ওঠার জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। দু’একজন উঠতে পারলেও অধিকাংশের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে অফিস টাইম পার হলেও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীর সংখ্যা কমতে দেখা গেলো না। বরং বাড়লো। হঠাৎ মহাখালীগামী একটি লেগুনা বাসস্ট্যান্ডে এসে থামতেই অনেকে ছুটে এলো। দেখতে-দেখতে লেগুনা ভরে গেলো। ভেতরে জায়গা না থাকলেও বাঁদুড়ের মতো ঝুলতে দেখা গেলো চার থেকে পাঁচজনকে। অবস্থা দেখে মনে হলো, যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটবে।এরই মধ্যে শোনা গেল বেশি ভাড়া নেয়ার কথা। আগের ১৫ টাকা ভাড়া, করা হয়েছে ২০ টাকা। জানতে চাইলে লেগুনার গায়ে সাটানো চার্ট দেখিয়ে কন্ডাকটর বলেন, কোনো কথা হবে না। অভিযোগ থাকলে ওখানে নম্বর আছে মালিককে ফোন করেন। আমাকে ২০ টাকা দিতে হবে।
গত শনিবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বহু মানুষকে বাসের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কারণ মতিঝিল, গুলিস্তানের সব বাসই গেট লক হয়ে রাজধানী বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে। বহু চেষ্টা করে বাসে উঠতে না পেরে অনেককে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। অনেকে বলেন, বেশি ভাড়া আদায়ের কৌশল হিসেবে মালিক পক্ষ সব বাসকে সিটিং বানিয়েছে। এতে অল্প কিছু যাত্রী বাসে ওঠার সুযোগ পেলেও অধিকাংশ বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। কেউ অভিযোগ করেন- বাস মালিকদের সিন্ডিকেট রাস্তায় বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। যাতে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ে বেশি ভাড়া দিতে বাধ্য হয়। বিআরটিএ কর্মকর্তারাও এই সুযোগে বহু টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিছু অসাধু কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে ভাড়ার চার্ট পরিবর্তন করে নতুন করে বেশি ভাড়ার চার্ট দিয়েছে। গত কয়েকদিনে একই বাসে বিআরটিএ স্বাক্ষরিত দুই ধরনের চার্ট দেখা গেছে। আগে যে দূরত্ব ২১ টাকা ছিল এখন তা ২৪ টাকা করা হয়েছে। এতে যাত্রীরা প্রতিবাদ করেও সুবিধা করতে পারছে না। প্রতিবাদ করলেই চার্ট দেখিয়ে বলছে, সরকারি ভাড়া ২৪ টাকা, সিটিং সার্ভিস সেবা দেয়ার জন্য নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত দু’তিন টাকা। বাস মালিকদের সমিতির সাবেক কর্মকর্তা স্বাধীন হোসেন ভোরের ডাককে বলেন, পয়সা খরচ করলে সবই সম্ভব। বিআরটিএ-এর যেসব কর্মকর্তা মাঠে ভাড়া তদারকির কাজ করছে তারা টাকার বিনিময়ে চার্টও পরিবর্তন করছে। তিনি বলেন, এখন রাজধানীতে আমার ১৯টি বাস চলাচল করে। এর সবই সিটিং। বেশি ভাড়া নিলেও সেবার মান বাড়ানো হয়েছে। যাত্রীরা চাইলে এই মান দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব। মালিকদের অধিকাংশই এখন রাস্তায় থেকে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিআরটিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউই এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, যে কোনো মূল্যে সরকারকে বাস ভাড়া কমাতে হবে। তা-না হলে অসাধু মালিক পক্ষ অধিকহারে ভাড়া আদায় করবে। সরকার উদ্যোগী হয়ে এখনই বাস ভাড়া না কমালে আর কমানো সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাময়িক বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেবিস্তারিত পড়ুন
কমলা হ্যারিসের ভোটের প্রচারণায় বাজবে এ আর রহমানের গান
আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসেরবিস্তারিত পড়ুন
উপদেষ্টা আদিলুর: পূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না
দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেবিস্তারিত পড়ুন