কিছু দিন বন্ধ থাকলেও আবার বেড়েছে সীমান্ত হত্যা
সীমান্ত হত্যা কমেছে- ছয় দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এমন বক্তব্য এক অর্থে সঠিক, আবার এক অর্থে ভুলও। চারদলীয় জোট সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের তুলনায় আওয়ামী লীগের দুই আমলে সীমান্ত হত্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। তবে গত চার বছরের তুলনায় চলতি বছর তা আবার বেড়ে গেছে।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী –বিএসএফ একাধিকবার সীমান্ত হত্যা ধীরে ধীরে শূন্যে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করেও তা রাখেনি। আবার সীমান্তে বাধ্য না হলে বুলেট ব্যবহারের বদলে রাবার বুলেট ব্যবহারের অঙ্গীকার করেও তারা তা ভুলে গেছে।
ফলত সমালোচনা আর দেশি-বিদেশি চাপ সত্ত্বেও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যা থামছেই না। এ ক্ষেত্রে চলতি বছর আগের চারটি বছরের তুলনায় আরও বেশি ছিল প্রাণঘাতি।
আগের চার বছরের তুলনায় চলতি বছর সীমান্তে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে হিসাবে চলতি বছর ভারতীয় সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৫ জন বাংলাদেশি। একই সংস্থার হিসাবে যা ২০১৪ সালের চেয়ে ১২ জন বেশি। ওই বছর এই সংখ্যাটা ছিল ৩৩।
আরেক মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর হিসাবে, ২০১৩ সালে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহতের সংখ্যা ছিল ২৯ জন। ২০১২ সালে ৩৮ জন আর ২০১১ সালে ৩১ জন। ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৪ জন, আর ২০০৯ সালে ৯৬ জন। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের আট বছরে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ৩৪৬ জন বাংলাদেশি নিহত হয়। অর্থাৎ এই সরকারের আমলে প্রতি বছর গড়ে ৪৪ জন করে নিহত হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুই বছরে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় মোট ১৮২ জন। এর মধ্যে ২০০৮ সালে ৬২ জন এবং ২০০৭ সালে ১২০ জন নিহত হয়।
জোট সরকারের আমল
গত চারটি সরকারের মধ্যে সীমান্তে সবচেয়ে বেশি হত্যা হয় বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে। তাদের শাসনামলে ২০০৬ সালে ১৪৬, ২০০৫ সালে ১০৪, ২০০৩ সালে ৪৩, ২০০২ সালে ১০৫ ও ২০০১ সালে ৯৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়। অর্থাৎ এই পাঁচ বছরেই নিহত হয় ৪৯৩ জন। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৯৯ জন।
শূন্যে নামানোর চেষ্টায় বিজিবি
বিজিবি এক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সীমান্ত হত্যা এ বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেড়েছিল। তবে এই মাস থেকে তা কমে এসেছে। গত চার মাসে তিনজনের হত্যার খবর পাওয়া গেছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সেপ্টেম্বরে বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের বৈঠক এবং স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর হত্যা কমতে শুরু করেছ।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা বন্ধে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। এরই মধ্যে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসছে। সামনে সামনে আরও কমবে।’
তবে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, সীমান্ত হত্যা বেশি বা কম সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূ্র্ণ নয়। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এটা বন্ধ হয়নি, চলমান রয়েছে। এটাকে শূন্যে নিয়ে আসার বিষয়টিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।
নুর খান বলেন, সবসময়ই সীমান্তে হত্যার বিষয়টি নিয়ে অবহেলা করা হয়। বিএসএফ সদস্যদের বিচারহীনতার করণেই এটা ঘটে চলেছে। অনেক সময়ই তারা সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করছে না।
এক প্রশ্নের জবাবে নূর খান বলেন, ‘ইমপিউনিটির সুযোগ যেন বিএসএফ না নিতে পারে সেই ব্যবস্থা করা দরকার। এছাড়া সীমান্তে যৌথ মহড়া থাকা উচিত। চোরাচালান বন্ধে দেশের অভ্যন্তরেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কোনো অবস্থাতেই নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করা যাবে না, সেই নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করা।’ সর্বোপরি আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মর্যাদাকর অবস্থান নেয়া দরকার বলেও মনে করেন নূর খান।
জানতে চাইলে সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ জামির জানান, সীমান্ত হত্যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আমাদের সীমান্ত দিয়ে ভারতে কেউ প্রবশে করলে তাদের তো গুলি করা হয় না। কিন্তু ভারতের সীমান্তে কেউ প্রবেশ করলেই গুলি করা হয়। এটা ঠিক নয়। বরং যে ব্যক্তি প্রবেশ করে তাকে আইনের আওতায় নিতে পারে বিএসএফ। সেটা না করে হত্যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
গত ২০ ডিসেম্বর পিলখানায় বিজিবি দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশী নিহতের ঘটনা আমাদের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজিবির প্রচেষ্টায় বিএসএফের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারের ফলে সীমান্তে নিহতের ঘটনা কমে এসেছে।’
দায় আছে বিজিবিরও
বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে বাংলাদেশিদের ওপর বিএসএফের গুলি বরাবরই এক আলোচিত ঘটনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, গরু চোরাচালান করতে গিয়ে খুন হয় বাংলাদেশিরা। কাঁটাতারের বেড়া কেটে বা বেড়া ডিঙিয়ে পার হওয়ার সময় গুলি করে বিএসএফ।
গত এক দশকে বিএসএফ এবং বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে প্রায় প্রতিটি বৈঠকেই সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়েছে। এমনকি প্রাণঘাতি বুলেটের বদলে গুলি ছুড়তে বাধ্য হলে রাবার বুলেট ছোড়ার কথাও একাধিকবার জানিয়েছে বিএসএফ। কিন্তু এর কোনো অঙ্গীকারই রাখা হয়নি।
সীমান্ত হত্যার জন্য প্রধানত দায়ী করা হয় গরু চোরাচালানকে। ভারত সরকার গরু চোরাচালান বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও এই চোরাচালান বন্ধ হয়নি। আর বিজিবিও এই বিষয়টিকে চিহ্নিত করলেও প্রকারান্তরে বাংলাদেশ গরু চোরাচালানকে উৎসাহিত করে।
চোরাচালান করে গরু আনা হয় ক্যাটেল বিট বা খাটালে। সেখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্ক পরিশোধ করলে সে গরু বৈধতা পেয়ে যায়। বিজিবি নিজেও এই চোরাচালান বন্ধের ওপর জোর দিয়েছে নানা সময়। কিন্তু এই খাটাল বা শুল্ক নিয়ে চোরাচালান করে আনা গরু বন্ধে কোনও উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গরু এভাবে শুল্ক দিয়ে বৈধ করা উচিত না। আমিও মনে করি এটা বন্ধ হওয়া উচিত। আমরা এই চেষ্টা করবো।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
উপদেষ্টা মাহফুজ: সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন,“গণ-অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থেবিস্তারিত পড়ুন
বড় ব্যবধানে অ্যান্টিগা টেস্টে হারলো বাংলাদেশ
চতুর্থ দিনেই অ্যান্টিগা টেস্টের ফল কোন দিকে গড়াচ্ছে, তা নির্ধারণবিস্তারিত পড়ুন
কিশোরগঞ্জে মা-বাবা ও ২ সন্তানের মরদেহ উদ্ধার
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় একই পরিবারের চার জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেবিস্তারিত পড়ুন