কী উদ্দেশ্যে, কিসের সংলাপ, জানতে চায় আ.লীগ
কী কারণে, কী উদ্দেশ্যে, কিসের কারণে সংলাপে বসতে চায় বিএনপি, তা আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ও দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এরপর তারা ভেবে দেখবেন বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংলাপে বসবেন কি বসবেন না।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় জরুরি জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানান। খালেদা জিয়ার এমন আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার মুঠোফোনে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জাতীয় সংলাপের আহ্বানের কড়া সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘কিসের জন্য, কী উদ্দেশ্যে সংলাপ? কার সাথে সংলাপ? আমরা যখন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছি তখন তো বিএনপি সংলাপে বসেনি। তখন তো সংলাপ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এখন আবার কিসের সংলাপ? সংলাপের কারণ আগে দেশবাসীর কাছে জানাক বিএনপি।’
তাহলে আওয়ামী লীগ কি বিএনপির সংলাপের আহ্বানে সাড়া দেবে না, এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, তারপর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, বিএনপির সঙ্গে ভবিষ্যতে সংলাপে বসবে কি বসবে না। কী কারণে সংলাপ, তা জানলে হয়তো সরকার সংলাপের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেও পারে, নাও নিতে পারে।
অন্যদিকে বিএনপি নেত্রী খালদা জিয়া সরকারকে সংলাপে বসার আহ্বান জানানোর এক দিন আগে গত বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপনও এমন আহ্বান জানান। তার আগে লন্ডন সফরে বিদেশের মাটিতে অবস্থান করে দেশের চলমান সংকট নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। সে ব্যাপারে গত বুধবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়ার ওই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে।
গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনে গোটা জাতি না হেসে পারেনি। যে খালেদা জিয়া এই দেশের যুদ্ধাপরাধী, খুনি, অগ্নিসংযোগকারী, ঘাতক-দালাল, চোর-বাটপারদের নিয়ে জোট গঠন করেছিলেন, সেই তিনি এখন আবার কাকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়তে চান? সেই ঘাতকদের সঙ্গে কখনো ঐক্য হতে পারে না, আওয়ামী লীগও করতে চায় না। আর খালেদা জিয়া এই জাতীয় ঐক্য গড়তে চান কার স্বার্থে, এটা জাতি জানতে চায়।’
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির আয়োজনে ‘ডিআরইউ লেখক সদস্য সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির জাতীয় সংলাপের প্রস্তাবে অনাগ্রহ প্রকাশ করে খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এখন টেমস নদীর তীর থেকে ঢিল ছোড়া হচ্ছে। বিদেশের মাটিতে বসে বিক্ষিপ্ত ঢিল ছুড়ে কি সরকার পতন সম্ভব হবে? জাতীয় সংলাপ এভাবে হবে না। সংলাপ করতে হলে পরিবেশ রাখতে হবে। কারা লেখক, পুলিশ, বিদেশি হত্যা করছে? এভাবে কী সংলাপের পরিবেশ হয়? যোগ্যতা, শক্তি, সাহসের প্রমাণ দিতে হয়। সংলাপের জন্য যোগ্যতা, সাহস লাগে। সেটা তারা দেখাতে পেরেছে? তাদের সঙ্গে সংলাপ করব, তারা কে? যারা সংলাপ চায়, তারা পরিবেশ রাখে।
একই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকার ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে যোগাযোগ করার কথা বলেন।
তবে এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, বিএনপি ও সরকারবিরোধীরা আগামী জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের রায় কার্যকর বাধাগ্রস্ত করার জন্যও তারা উঠেপড়ে লেগেছে। এর কারণ উল্লেখ করে নেতারা আরো জানান, খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেভাবে দলত্যাগ করা শুরু করেছে; এটাকে অন্য দিকে মোড় ঘুরাতে না পারলে বিএনপি থেকে নেতা-কর্মীদের আরো সরে যাওয়া শুরু হতে পারে। এই কারণে হঠাৎ করেই তারা সরকারের প্রতি জাতীয় সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে। এখন তারা নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে সরকারের সঙ্গে ‘সংলাপ-সংলাপ’ লেখার রাজনীতি করতে চায়। কারণ খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নীতিনির্ধারক অনুধাবন করছে যে, নিকট অতীতে দলের ভুল সিদ্ধান্ত, নেতিবাচক রাজনীতি, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাসহ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় বাইরে থাকার কারণে তাদের নেতা-কর্মীরা দলবিমুখ হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যে তারা দলের এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আগামী দিনে সরকারকে বিভিন্ন অপকৌশলে পর্যুদস্ত করে মাঠ গরম করতে চায়।
এদিকে শুক্রবার খালেদা জিয়ার সংলাপের প্রস্তাবকে ‘রাবিশ’ আখ্যায়িত করেছেন অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত। সিলেটে অনুষ্ঠিত ‘স্কাই মিনি ম্যারাথন’ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। রাইজিংবিডি
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন