কুমির আতঙ্কে গড়াই নদীর তীরে রাখা হচ্ছে ছাগল-হাঁস
কুষ্টিয়ার গড়াই নদীতে একাধিক কুমিরের “অস্তিত্ব মিলেছে”। ফলে আতঙ্কে নদীতে নামতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয় জেলে ও সাধারণ মানুষ। কুমিরদের বসে আনতে খাবার হিসেবে নদী তীরে বেঁধে রাখা হচ্ছে ছাগল, হাঁস। আর তা দেখতে প্রতিদিন নদীপাড়ে জড়ো হচ্ছে উৎসুক জনতা।
গত কয়েকদিন দিনভর নদীপাড়ে কুমির আতঙ্কের মধ্যেও ভিন্ন রকম আবহ দেখা যাচ্ছে স্থানীয়দের মধ্যে। কুমির দেখতে সব বয়সী মানুষের ভিড় গড়াই নদী সংলগ্ন জুগিয়া ভাঁটাপাড়ায়। পদ্মার প্রধান শাখা গড়াইয়ের বিশাল জলরাশি শুকিয়ে যাওয়ায় খালে পরিণত হয়েছে কোনো কোনো জায়গা। জুগিয়া ভাঁটাপাড়া এলাকার ঠিক কবরস্থানের নিচে একটি খালে স্থানীয়দের চোখে পড়ে তিনটি কুমির। দুটি ক্ষুদ্রাকৃতির আর একটি বেশ বড়। তা দেখে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের শেষ নেই। এলাকার মানুষের যেন ঘুম হারাম। গোসল কিংবা আনুষঙ্গিক প্রয়োজন মেটানোর পানির প্রধান উৎস এই নদী এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কদিন ধরে জেলেরাও জাল নিয়ে নামছেন না নদীতে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে নদীপাড়ে যে আবহ তৈরি হয়েছে তা চোখের পড়ার মতো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিরকে বাগে আনতে অভিনব পন্থাও অবলম্বন করছেন কেউ কেউ। কুমিরকে আকৃষ্ট করতে নদী তীরে বেঁধে রাখা হচ্ছে ছাগল, পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে হাঁস। তা উপভোগ করছে নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সব বয়সী মানুষ। কখন দেখা মিলবে কুমিরের, কখন ছাগল আর হাঁস গিলে খাবে তারা। নির্জন এলাকা হলেও কদিনের এমন পরিস্থিতিতে ওই এলাকায় যেন উৎসুক জনতার মিলনমেলা বসেছে। ঝালমুড়ি থেকে শুরু করে হরেক রকমের খাবার বিক্রেতারা জীবিকা নির্বাহে ব্যস্ত সেখানে।
নদীপাড়ের বাসিন্দা ষাটোর্ধ মিনু খাতুন জানান, খাবার পানি ছাড়া গোসলসহ প্রয়োজনীয় সব কাজই সারেন নদীর পানি দিয়ে। কিন্তু নদীতে কুমির দেখতে পাওয়ায় ভয়ে নামতে পারছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা চাঁদ আলী বলেন, “আগে কখনও এই নদীতে কুমির দেখিনি। এখন দেখা যাচ্ছে। চরম আতঙ্কে আছি।”
ঝালমুড়ি বিক্রেতা খাদিমুল ইসলাম জানান, তিনি একজন জেলে। নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু নদীতে কুমিরের দেখা মেলায় ভয়ে জাল ফেলছেন না নদীতে। তাই জীবিকার তাগিদে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন তিনি।
বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করেন শাহাবুদ্দিন মিলন। গড়াই নদীতে কুমিরের দেখা মেলায় তিনিও এসেছেন সেখানে। তবে হাতে করে নিয়ে এসেছেন একটি তরতাজা ছাগল। কুমিরের খাবার হিসেবে আনেন এই ছাগলটি। যেখানে কুমিরের দেখা মিলেছে তার ঠিক পাশেই খুঁটি গেড়ে বেঁধে রেখেছেন ছাগলটি। উৎসুক মানুষের আনাগোন দেখে ছোটাছুটি করছে ছাগলটি।
শাহাবুদ্দিন জানান, কুমিরের দেখা মেলায় এলাকার মানুষ বেশ আতঙ্কে আছেন। যেখানে কুমির রয়েছে সেখানে পানির কোনো প্রবাহ নেই। ছোট্ট জলাধারে পরিণত হয়েছে। খাবারের কষ্ট করছে কুমির। তাই কুমিরের খাবার হিসেবে একটি ছাগল কিনে এনেছি। অনেকেই আবার হাঁস এনে ছেড়েছে পানিতে। তবে বনবিভাগের উচিত এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের পাশে দাঁড়ানো।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “শুনেছি গড়াই নদীতে কুমিরের দেখা পেয়েছে স্থানীয়রা। এতে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু করণীয় নেই।”
সামাজিক বন বিভাগ কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাপস কুমার সেনগুপ্ত ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “মাসখানেক আগে বন্যার পানিতে হয়তো কোনোভাবে এই কুমির পদ্মায় এসেছে। এরপর শাখা নদী গড়াই নদীতে চলে এসেছে। কেননা পদ্মার উৎসমুখ থেকে গড়াইয়ের এই এলাকাটা মাত্র এক কিলোমিটার হবে। স্থানীয় লোকজনের দেওয়া বর্ণনা ও দেখা ছবিমতে কুমিরটি মিঠাপানির উপযোগী। এজন্য এই পানিতে থাকতে কুমিরটির কোনো সমস্যা হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “কুমিরের খাবারের কোনো সমস্যা হবে না। কাঁকড়া, ছোট ছোট মাছ, ঝিনুকসহ পানির ভেতর থাকা খাবার খেতে পারবে। তবে কুমিরটিকে বিরক্ত করলে সমস্যা হতে পারে। এজন্য নদী পাড়ে উৎসুক জনতার ভিড় কমাতে বলা হচ্ছে। এছাড়া পানি কমছে। হয়তো পানির স্রোতের সঙ্গে সে চলে যেতে পারে।”
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আড়াই বছর পর কারাগার থেকে বের হলেন পি কে হালদার
বাংলাদেশে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার ভারতেরবিস্তারিত পড়ুন
আয়কর রিটার্ন জমার সময় আবারও এক মাস বাড়লো
ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের ২০২৪-২৫ করবর্ষেরর আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আরওবিস্তারিত পড়ুন
বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হলো বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক মইনুলকে
বিদেশে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস-বিডিআরেরবিস্তারিত পড়ুন