ক্রিকেটাররা টাকার জন্য কেন খেলে?
সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা কথা খুব বেশিই শোনা যায়, ‘ক্রিকেটারদের মাঝে দেশপ্রেম নেই, তারা টাকার জন্য খেলে।’
সাকিব, মুস্তাফিজ আইপিএল খেলতে গিয়েছে। কেন? কারণ তারা টাকার জন্য খেলতে গেছে। সাকিব-তামিম-মাহমুদুল্লাহ পিএসএলে খেলতে গিয়েছে। কেন? কারণ তারা টাকার জন্য খেলতে গেছে। আনামুল হক বিজয় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে লাহোর গেছে। কেন? কারণ সে টাকার জন্য খেলতে গেছে।
অনেকে এই ‘টাকার জন্য খেলা’ টার্মটাকে অপমানজনক মনে করে, অফেন্ডেড হয়। এবং সেই সুযোগে অনেকেই এটাকে অপমান করার উপযোগী বেশ ধারালো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
আমার কাছে দুই ধরণের চিন্তাকেই বড় বেশি অদ্ভূত বলে মনে হয়। হ্যাঁ, তারা টাকার জন্যই খেলতে গেছে। এতে সমস্যাটা কোথায়?
একজন শিক্ষকের কাজ কি? ছাত্রদের শিক্ষা দেয়া। কিন্তু তিনি কি কাজটা বিনে পয়সায় করছেন? না, তার জন্য তিনি ন্যায্য সম্মানি পাচ্ছেন। একজন চিকিৎসকের কাজ কি? চিকিৎসা করা, মানুষের জীবন বাঁচানো। কিন্তু তিনি কি কাজটা এমনি এমনি করছেন? না, তিনিও এই কাজের বিনিময়ে অর্থলাভ করছেন।
এবার বলুন, একজন ক্রিকেটারের কাজ কি? ক্রিকেট খেলা। এটাই তার পেশা। এর বদলে কি সে টাকা আয় করবে না? অবশ্যই করবে। সৎ পথে, নিজের প্রতিভার বিনিময়ে টাকা আয় করা তো দোষের কিছু না।
তাহলে মুস্তাফিজ কেন টাকার জন্য আইপিএলে খেলতে গেল, সাকিব কেন টাকার জন্য আইপিএলে খেলতে গেল, তা নিয়ে আমাদের এত মাথাব্যথা কেন? একজন প্রফেশনাল ক্রিকেটার হিসেবে তারা তো সব জায়গায়ই খেলতে যাবে।
শুধু আবেগ দিয়ে বিষয়টা চিন্তা করলে হবে না।
আপনি বলতে পারেন, টাকার জন্য কেন খেলছে? কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, একজন ক্রিকেটার কতদিন টাকা কামাই করতে পারে? সাধারণত ক্রিকেটাররা ৩৫-৪০ বছরের মধ্যেই অবসর নিয়ে নেয়। পেসাররা তো আরও আগে। ৩০-৩২ এর বেশি বয়সেও খেলা চালিয়ে যেতে পারে খুব কম সংখ্যক পেসারই।
তাহলে আবার ভেবে দেখুন, সাধারণ চাকুরিজীবীদের ৬৫-৬৮ বছর পর্যন্ত একটা নিশ্চিত অর্থ উপার্জনের সংস্থান থাকে। কিন্তু ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে সেই বয়সসীমা অর্ধেকেরও কম।
আমাদের দেশে সাধারণত চল্লিশ বছর বয়সে একজন ব্যক্তি চাকরিতে উন্নতি করতে শুরু করে, তার প্রমোশন হয়, বেতন বাড়তে থাকে, জীবনে একটা স্থিতিশীলতা আসতে থাকে। অথচ ঐ বয়সেই ক্রিকেটাররা ‘বুড়ো’র তকমা গায়ে মেখে মাঠের বাইরে চলে যায়।
তাই যতদিন একজন ক্রিকেটারের বয়স আছে, ততদিন সে কেন খেলবে না? কেন টাকা আয়ের সুযোগগুলোকে কাজে লাগাবে না?
আপনি হয়ত জানেন না, যেই ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলার জন্য আমরা এত ঘটা করে ইংল্যান্ড যাচ্ছি, তারপর সেখান থেকে আয়ারল্যান্ড যাব, সেই ত্রিদেশীয় সিরিজে কিন্তু অন্যতম অংশগ্রহণকারী দল নিউজিল্যান্ড খেলবে একদমই অনভিজ্ঞ কিছু খেলোয়াড় নিয়ে। কেন? কারণ ওই সময় তাদের মূল খেলোয়াড়রা ব্যস্ত থাকবে আইপিএল খেলায়!
আমরা খামোকাই আমাদের ক্রিকেটারদের দোষ দিই। টাকার খোটা দিই। বলি ওরা কেন এত টাকা পায়, কেন বোনাস হিসেবে বাড়ি-গাড়ি পায়। একটা কথা কি জানেন? আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের বর্তমানে যে ম্যাচ ফি, তা জিম্বাবুয়ে বাদে অন্য সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের চেয়ে কম। এমনকি আফগানিস্তানের খেলোয়াড়রাও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আমাদের দেশের খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি টাকা পায়।
তাহলে শুধু শুধু দেশপ্রেমের বুলি আউড়ে কি হবে? আমাদের কাছে হয়ত ক্রিকেট মানেই দেশপ্রেম, কিন্তু ক্রিকেটারদের জন্য এটা আসলে পেশা। এই খেলাটার জন্যই তারা তাদের পুরো জীবন উৎসর্গ করেছে। বিনিময় তারা কি পাচ্ছে? দশ পনেরো বছর নিশ্চিন্তে টাকা ইনকাম করতে পারে তারা, কিন্তু তারপর তো তাদের সামনে আজীবনের বেকারত্ব। হাতেগোণা কয়েকজন খেলোয়াড়ই কোচ হয়, বোর্ড কর্মকর্তা হয় কিংবা ধারাভাষ্যকার হয়। বাকিদের খবর কি আমরা রাখি?
ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করি। গত কয়েকদিন আগে প্রায় সব গণমাধ্যমেই খবর এসেছে, মাশরাফি বিন মর্তুজা ইনজুরি আক্রান্ত সৈয়দ রাসেলের চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়েছে।
আমরা খবরটা শুনে আনন্দ পেয়েছি, মাশরাফির মহানুভবতার প্রশংসা করেছি। কিন্তু এই কথাটা কিন্তু আমাদের অধিকাংশের মাথাতেই আসেনি যে সৈয়দ রাসেলের মত একজন খেলোয়াড়, যে দীর্ঘ সময় জাতীয় দলকে সার্ভিস দিয়েছে, আজ তাকে কেন সামান্য কয়েক লাখ টাকা অন্য আরেকজনের কাছ থেকে ধার নিতে হয়?
কারণটা খুব সহজ, সে খেলোয়াড় হিসেবে খুব টপ লেভেলের কেউ ছিল না। মাঝারি গোছের ছিল। সেজন্য নিজে যেমন আর্থিকভাবে খুব একটা স্বচ্ছল হয়ে উঠতে পারেনি, তেমনি আজ বোর্ডের কাছ থেকেও কোন সাহায্য পায় না।
সাকিব-মুস্তাফিজদের হয়ত কখনো এমন দিন দেখতে হবে না। কিন্তু জাতীয় দলের ভেতরও এমন কিছু খেলোয়াড় আছে যারা সাকিব-মুস্তাফিজদের মত ‘সুপারস্টার’ নয়। দলে তাদের জায়গাও নিশ্চিত নয়। আজ আছে, কাল নেই এমন অবস্থা।
তারা এই সৈয়দ রাসেলের ঘটনা দেখে কি শিক্ষা পেল? তারা কি তাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল না? এখন তারা যদি নিজেদের সেরা সময় থাকতে থাকতেই ইনজুরি, ফিটনেস ইত্যাদির কোন তোয়াক্কা না করে ‘টাকার জন্য’ এই দেশে, ওই দেশে খেলতে চলে যায়, বা দেশের মধ্যেই এখানে-ওখানে ‘খ্যাপ’ খেলতে যায়, তাহলে কি আমরা তাদেরকে দোষারোপ করতে পারি? সেই নৈতিক অধিকার কি আমাদের আছে?
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন