ক্লান্ত লাগে সব সময় ?

দীর্ঘমেয়াদি অবসাদগ্রস্ততা বা ক্লান্তি এমন একটি অবস্থা, যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়ার পরও ক্লান্তি দূর হয় না। মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রমের কারণে এটি আরো জটিল আকার ধারণ করে এবং এর কারণে স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। অনেকে এটাকে বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেসন বলে মনে করেন। এটা কিন্তু বিষণ্ণতা নয়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় দেড় ভাগ লোক এ অবস্থায় আক্রান্ত। আশি দশকে মনে করা হতো এ সমস্যাটি ৩০-৪০ বয়স্ক উচ্চবিত্তদের রোগ। কারণ, এ সময় এ অবস্থায় আক্রান্তদের বেশির ভাগই ছিলেন উচ্চবিত্ত। পরে অবশ্য ধারণার পরিবর্তন হয়েছে, সব বয়সের সব বিত্তের রোগ এটি। তবে ২৫-৪৫ বছরের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। মেয়েরা পুরুষের তুলনায় দুই থেকে চার গুণ বেশি আক্রান্ত হন। এ রোগে আক্রান্তরা তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধাগ্রস্ত হন, কমে যায় উৎপাদন। এতে তাঁরা হতাশায় আক্রান্ত হন। ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেন সমাজ থেকে। বিষণ্ণতা এ সময় এসে জড়িয়ে নেয় তাঁদের। হতাশা-বিষণ্ণতার বলি হন অনেকেই।
এ রোগ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাপী ১২ মে ‘বিশ্ব দীর্ঘমেয়াদি অবসাদ সচেতনতা দিবস’ পালন করা হয়।
দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি বা অবসাদের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে গবেষকরা বেশ কিছু কারণ চিহ্ণিত করেছেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—আয়রন ঘাটতিতে রক্তস্বল্পতা, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকা, অ্যালার্জি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিকমতো কাজ না করা, সিস্টেমিক ইনফেকশন, হাইপোথ্যালামাস-পিটুইটারি-অ্যাড্রেনাল ডিসফাংশন, রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকা, পুষ্টিঘাটতি ইত্যাদি। তবে মনে করা হয় বেশ কিছু কারণে এ রোগ প্রকাশ পায়। এর মধ্যে ইনফেকশন অন্যতম। এ ছাড়া মানসিক চাপ, বংশগতি, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, বয়সও জড়িত।
এ রোগটির নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নেই। মাঝেমধ্যে ফ্লুর মতো লক্ষণ দিয়ে প্রকাশ পায়। তবে ফ্লু যেমন কিছুদিন পর আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়, এটি কিন্তু থেকে যায়। সাধারণত বেশ কয়েক বছর এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এমনকি ১৪ বছরও। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এ রোগ নির্ণয়ে কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছে। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অবসাদ বা ক্লান্তি, যা পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে সারে না ও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করে, এর সঙ্গে যদি আটটি উপসর্গের কমপক্ষে চারটি উপস্থিত থাকে, সেগুলো হলো : ১. অমনোযোগ, ২. গলায় ক্ষত, ৩. ব্যথাযুক্ত লিম্ফনোড, ৪. মাংসপেশির ব্যথা, ৫. একাধিক অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ৬. মাথাব্যথা, ৭. ঘুমে সমস্যা—ঘুম আসতে দেরি হওয়া, বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া বা অনেকক্ষণ ঘুমানোর পরও ফ্রেশ মনে না হওয়া, ৮. হালকা ব্যায়াম বা পরিশ্রমের পর ব্যাপক ক্লান্তি অনুভব করা।
এ উপসর্গগুলো বিভিন্ন রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। হাইপোথাইরয়ডিজম, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়া বা নাক ডাকা, দীর্ঘমেয়াদি রোগ—শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যানসার, মেজর ডিপ্রেসিভ ইলনেস রোগের সঙ্গে এ রোগের উপসর্গের মিল অনেকে। তাই এ রোগ নির্ণয় করা বেশ কষ্টকর। এ জন্য বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অন্য রোগগুলো এ তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়। তাই অনেকে মনে করেন, এত টেস্ট করার পরও তাঁর কোনো রোগ ধরা পড়ল না। তাই তাঁরা আরো বেশি মনঃকষ্টে ভোগেন। ভাবেন, তাঁদের অনেকে বড় রোগ হয়েছে।
যেহেতু এ রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায় না, তাই এটির সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাও নেই। তবে লক্ষণগুলো দমিয়ে রাখতে মানতে হবে কিছু নিয়ম। অতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রমের কাজ করা যাবে না। প্রতিদিন একটি সময় বের করে শিথিল করতে হবে নিজেকে। লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। মেডিটেশন করতে পারেন। ভালোলাগা বইগুলো পড়তে পারেন। হাসুন প্রাণ খুলে।
ভালো না লাগলেও ভালো লাগানোর চেষ্টা করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। শুরুতে যতটুকু ব্যায়াম করলে ভালো লাগে বা শরীর ক্লান্ত হয় না, ততটুকু করুন। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়ান।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। ঘুমে বাধা সৃষ্টি হয় এমন কোনো কাজ করবেন না। ঘুমের ঘর হোক শব্দমুক্ত ও আলোমুক্ত। দুচিন্তা, রাগ-ক্ষোভ নিয়ে ঘুমাতে যাবেন না। সুষম খাবার খান। কফি, মদ, মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খাবেন। ধূমপানকে না করুন চিরতরে। প্রয়োজনে মানসিক থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ সেবন করতে পারেন।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন

হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন