খাদিজাকে দেখতে গিয়ে আইসিইউতে তোলা আলোচিত সেই সেলফি নিয়ে মুখ খুললেন নারী নেত্রীরা

খাদিজা বেগম নার্গিস । গত সোমবার দুপুর পর্যন্ত যিনি ছিলেন সুস্থ ও স্বাভাবিক। তিনি এখন রয়েছেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তার বেঁচে থাকার জন্য এখন ভরসা শুধু ওপরওয়ালাই। গত সোমবার খাদিজা কলেজে গিয়েছিলেন পরীক্ষা দিতে । পরীক্ষাও শেষ করলেন। ফিরছিলেন বাড়ি। কিন্তু বাড়ি ফেরা হলো না তার। শিকার হলেন বখাটে বদরুলের হামলার। ধারালো অস্ত্র দিয়ে বদরুল তাকে নির্মমভাবে কুপিয়েছে।
তাকে উদ্ধার করে সিলেটে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সিলেট থেকে মঙ্গলবার আনা হয় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। এখানে দ্বিতীয় দফায় তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। ‘তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে’ জানিয়ে ডাক্তাররা বলছেন, পর্যবেক্ষণের ৭২ ঘণ্টা পার না হলে কিছুই বলা যাবে না। ইতিমধ্যে সেই সময়ের অর্ধেকেরও বেশি পেরিয়ে গেছে। কিন্তু অবস্থার উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই। তাই খাদিজার স্বজনরা মনে করছেন, তার বেঁচে থাকার জন্য ওপরওয়ালাই এখন ভরসা। শুধু স্বজনরা না, যারা খাজিদার কথা শুনেছেন, তারা সকলেই তাকিয়ে আছেন ওপরওয়ালার দিকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খাদিজার সুস্থতার জন্য অসংখ্য মানুষের আকুল প্রার্থনা।
এদিকে এই ঘটনার পর মারাত্মক আহত খাদিজাকে আইসিইউ’র ভেতরে দেখতে গিয়ে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন সরকারদলীয় কয়েকজন নারীনেত্রী।
তবে এই সমালোচনার জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তারা। ছবিগুলো সেলফি ছিল না দাবি করে সাবিনা আকতার তুহিন, এমপি বলেছেন, নারীসমাজ যে খাদিজার পাশে আছে সেটা বোঝানোর জন্যই তারা ছবিগুলো ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন।
সাংসদ তুহিন তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন: ‘আমার গতকালের স্ট্যাটাসের জন্য যদি আমার কোনো ভুল হয়ে থাকে এবং কেউ মর্মাহত হয়ে থাকেন আমি এ ব্যপারে দুঃখিত। আমি মেয়েটা মারা গেছে বলে যে গুজব ছড়িয়ে পরে আমার বান্ধবী মিরা স্ট্যাটাস দেয় বোন খাদিজা ক্ষমা করিস লিখে। আমাদের ছবি দেয়ার উদ্দেশ্য কেবল আমরা নারী সমাজ খাদিজার পাশে আছি এটা বোঝানোর জন্য আর ও বেঁচে আছে এটা জানানোর জন্য। আমার স্ট্যাটাসে বদরুলের ফাঁসি চেয়ে নির্মম ঘটনার নিন্দা করে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে। আমার যদি ভুল হয়ে থাকে তবে আমি ক্ষমা পার্থী। আমরা সব নির্যাতিত নারী সমাজের পাশে আছি থাকবো।’
স্কয়ার হাসপাতালে ওই ছবিগুলোতে এমপি তুহিনের সঙ্গে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অপু উকিল এবং যুব মহিলা লীগের নেত্রী কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি।
অনলাইনে সমালোচনার মুখে মুক্তি তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘অপু দিদি, তুহিনসহ আমার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আসলে খাদিজাকে দেখতে যেয়ে তার অবস্থার কিছু তথ্য সবাইকে জানানোর অংশ হিসেবে যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি পোস্ট করা হয়েছিল। তবে ছবিটা দেখে অনেকেই ভুল বার্তা পেয়েছেন। অনেকে ছবিটি দেখে মর্মাহত হয়েছে…. আমি খুবই দুঃখিত! সবাই বিষয়টা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন; দয়া করে ভুল ব্যাখা দিবেন না। আমাদের উদ্দেশ্য আসলে সে রকম কিছু ছিল না। আমরা চেষ্টা করেছিলাম মানুষকে তার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানানোর।’
কারণ উল্লেখ করে তিনি আরো লিখেছেন, খাদিজাকে নিয়ে নানা জায়গা থেকে গুজব ছড়াতে থাকে খাদিজা মারা গেছেন এই বলে। কিন্তু মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অসীম করুণাময়ের কৃপায় বোনটি এখনো আমাদেরকে আশার আলো দেখিয়ে বেঁচে আছে। সৃষ্টিকর্তা বোনটিকে সুস্থ করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিক এটাই একমাত্র প্রার্থনা। আমরা মানবতার পক্ষে আর দোষী সন্ত্রাসীদের বিপক্ষে।’
নেত্রীরা এভাবে দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিলেও তাদের অনেক সমর্থক ‘সেলফি কাণ্ডের’ পক্ষেই বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
রুবিনা মিরা নামে একজন লিখেছেন: ‘বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করতে হবে….. এটা যেন আজ নিয়মে এসে দাঁড়িয়েছে। একটা ছবি দেখেই কিছু মনগড়া কথা লিখে দিলেই যেন আহামরি কিছু হয়ে গেল!! অথচ ঐ ছবিটার পেছনের যে নিগূঢ় সত্য, ব্যথা – বেদনা সেটা কেউই চাক্ষুষ করলেন না। গতকাল আমি একটা স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম বোন আমাকে ক্ষমা কর……. এখানে কয়েকজন লিখেছেন…. খাদিজা এখনো বেঁচে আছে। তাই মানবতার জন্যই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম খাদিজাকে দেখতে…. ওর নির্যাতনের বীভৎসতা সহ্য করতে পারব না বিধায় আমি নিচে রয়ে গেলাম আর বললাম যেন ছবি তুলে আনে… যেহেতু গতকাল আমার ভুল হয়েছিল। এ জন্যই ছবিটা তুলেছিল।…… এই হল ঘটনার মূল, অথচ এটাকে নিয়ে এত নাটক শুরু করল প্রথম আলোসহ কিছু লোক!! আমি প্রশ্ন করতে চাই…. মানবতা আজ কোথায়?? যারা মরণাপন্ন মেয়েটার চিকিৎসার খোঁজ খবর নিয়ে তার আরো উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করল, তাদের কি অপরাধ,,,,,,,, বলবেন কি, সুধীসমাজ …….!?!?!?!?’
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে কান্না থামছে না খাদিজার মা মনোয়ারা বেগম ও দাদি আকলিমা বেগমের। একমাত্র মেয়ের করুণ পরিণতিতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। বুধবার দুপুরে খাদিজার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট-বড় সবাই খাদিজার জন্য উদ্বিগ্ন। আত্মীয়-স্বজনরা তার বাড়িতে ভিড় করেছেন। কেউ কেউ দু’হাত তুলে তার সুস্থতার জন্য দোয়া করছেন। পাশাপাশি হামলাকারীর ফাঁসির দাবিও করেন তারা। খাদিজার দাদি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই দাবি, আমার খাদিজাকে যেভাবে কুপিয়ে জখম করেছে, সেভাবে কুপিয়ে মারা হোক বদরুলকে।’
মা মনোয়ারা বেগম জানান, পরীক্ষার দিন ভালো করে খেয়েও যায়নি মেয়েটি। যাওয়ার সময় বলেছিল পরীক্ষা দিয়ে এসে খাবে। তার আর খাওয়া হয়নি। এ কথা বলেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি।
জন্মের পর এই প্রথম খাদিজা টানা তিনদিন বাড়ির বাইরে রয়েছে বলে জানান তার চাচাতো ভাই নূর আহমদ। তিনি জানান, মামার বাড়ি কাছে থাকায় তার বোন সকালে গেলে বিকালে বাড়ি চলে আসত। চাচাতো বোন নাদিয়া ছিল তার নিত্যসঙ্গী। বোনের এ অবস্থায় নাদিয়াও বারবার মূর্ছা যাচ্ছে। একটু পরপর চিৎকার করে ‘কই গেলে বোন’ বলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
নূর জানান, খাদিজার বড় ভাই শাহীন আহমদ চীনে ডাক্তারি পড়ছে। পরিবারের ইচ্ছে ছিল খাদিজাকে ব্যারিস্টার বানানোর। খাদিজার হামলাকারী বদরুল ৬ বছর আগে কিছুদিন তাদের বাড়িতে লজিংয়ে ছিল। ওই সময় খাদিজার ছোট ভাইবোনদের পড়াত বদরুল। এক সময় খাদিজার ওপর নজর পড়ে তার। বিষয়টি পরিবারের লোকজন টের পেয়ে তাকে বিদায় করে দেন। খাদিজার চাচা এমসি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র আবদুল কাইয়ুমসহ গ্রামবাসী হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তারা খাদিজার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন।
সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের হাউসাগ্রামের সৌদি প্রবাসী মাসুক মিয়ার মেয়ে খাদিজা বেগম নার্গিস। মাসুক মিয়া স্থানীয়।
ইতিমধ্যে তারা হামলাকারী বদরুলের ছবিসংবলিত লিফলেট ছাপিয়ে তার ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। এলাকাবাসীর উদ্যোগে আজ সকাল ১০টায় স্থানীয় আউশা পয়েন্টে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার বিকালে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে খাদিজার ওপর হামলা চালায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ও শাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক বদরুল আলম। বদরুল ছাতক উপজেলার মুনিরজ্ঞাতি গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদবিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকবির ম্যুরাল থেকে কালি মুছে দিল উপজেলা প্রশাসন
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালে কালি দিয়ে মুখবিস্তারিত পড়ুন

ফখরুল: ইউনূস–মোদির বৈঠক আশার আলো দেখাচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন