গাজীপুরের মাঠ কাঁপানো ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে মানুষের মন কেড়ে নেন।
জীবনের প্রথম নির্বাচনেই মানুষের নজরে এসে পড়েছিলেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও নিজের চৌকষ পরিকল্পনা এবং দক্ষ নেতৃত্বের কারণে অনেকেই মজে যান তাঁর গুণাবলীতে। নাম তাঁর অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম।
২০০৯ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়েছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন সাড়ে তিন লাখ ভোটের ব্যবধানে। সেই নির্বাচনের ফল দেখে অনেকেই চমকে উঠেছিলেন।
একসময়ের মাঠ কাঁপানো ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ভাইস চেয়ারম্যান হয়েই মানুষের মনে নিজের জায়গাটি পোক্ত করে ফেলেন। নির্বাচিত হয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম থেকে ছাত্রলীগকে মুক্ত রাখতে গ্রহণ করেছিলেন নানা উদ্যোগ। সফলতাও পান। হয়ে ওঠেন মানুষের আস্থার প্রতীক।
এ ছাড়াও নিজেকে ঘুষ-দুর্নীতির বাইরে থেকেও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে রাস্তাঘাট মেরামত, মসজিদ মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুদান, সেবা ও আপদ-বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে দ্রুত বাড়তে থাকে তাঁর জনপ্রিয়তা। হয়ে ওঠেন সব বয়সী মানুষের নয়নমনি। জেলাজুড়ে পরিচিতি পান ‘ক্লিন ইমেজ’ নেতার খ্যাতি। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং সাধারণ মানুষের আইডলে পরিণত হন তরুণ জাহাঙ্গীর আলম।
পরবর্তীতে তিনি প্রথম চমক দেখান ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়ে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সিটি কর্পোরেশনজুড়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি। যাতায়ত ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, শপিংমল, চিকিৎসা ব্যবস্থা, যানজট, বাসস্থানসহ নগর উন্নয়নে একগুচ্ছ প্যাকেজ উপস্থাপন করে আরো এক দফায় নজর কাড়েন নগরবাসীর।
তাঁকে থামানোর জন্যে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা হন্তদন্ত হয়ে ওঠেন। তবুও পারেননি। ততক্ষণে তিনি আপামর জনসাধারণের কাছে হয়ে ওঠেন নয়নের মনি, প্রিয় থেকেও প্রিয়তর নেতা কিংবা স্বপ্নের মেয়র।
তবে তাঁকে সরতেই হয়। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ডেকে পাঠান জাহাঙ্গীরকে। নেত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারেননি। সেইদিনের মহানুভবতার উপহারও নেত্রী হাতেনাতে দিয়ে দেন তাঁকে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে হয়ে যান গাজীপুরের মতো দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মহানগরের সাধারণ সম্পাদক।
যদিও তাঁর নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া মেনে নেয়নি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অনেক মানুষ। তারা জাহাঙ্গীর আলমের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবিতে সে সময় মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও কাফনের কাপড় পড়ে আমরণ অনশনও করে।
আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটির জন্যে গাজীপুরকে বলা হয় দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ। কিন্তু ২০১৩ সালের ৬ জুলাইয়ের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ব্যাপক ভরাডুবি ও পরাজয় ঘটে। ওই পরাজয়ের জন্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা, কোন্দল এবং দলের সাংগঠনিক বেহাল অবস্থাকে দায়ী করেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
এসব বিবেচনায় পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট আজমতউল্লাহ খানকে সভাপতি এবং জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়। বিশেষ করে জেলার প্রভাবশালী নেতাদের হটিয়ে গাজীপুর মহানগরের জনপ্রিয় জাহাঙ্গীর আলমকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগরের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আয়তনে দেশের সবচেয় বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া তাঁর ছিল আরেকটি রাজনৈতিক চমক। দায়িত্ব গ্রহণের পর নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচি দিয়ে ঝিমিয়ে পড়া আওয়ামী লীগকে প্রাণের সঞ্চার করে চলেছেন তিনি। এতে শুধু গাজীপুর নয়, বেজায় খুশি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাজী ইলিয়াস জানান, জাহাঙ্গীর আলম একজন দূরদর্শী নেতা। তিনি ঝিমিয়ে পড়া গতিহীন আওয়ামী লীগে গতি ফিরিয়ে এনেছেন। দলের জন্যে যেভাবে সময় দেন, নেতাকর্মীদের কথা ধৈর্য্য সহকারে শোনেন, সত্যি তা বিরল। ত্যাগী ও কোনঠাসা নেতারও তাঁর নেতৃত্বে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
নেতাকর্মীরা জানান, আগামী সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমই মেয়র প্রার্থী। দলের নেত্রী সেভাবেই নির্দেশনা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরকে। তাই প্রতিটি ওয়ার্ডের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং সুখে-দুঃখে নেতাকর্মীদের পাশে থাকছেন। ঝিমিয়ে পড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জাহাঙ্গীরকে পেয়ে যেন চাঙা হয়ে উঠেছে।
আওয়ামী লীগ নেতা ছিদ্দিকুর রহমান জানান, দলের বাইরেও সাধারণ মানুষের কাছে জাহাঙ্গীর আলম ব্যাপক জনপ্রিয়। সততা ও নিষ্ঠার মডেল তিনি। দুর্নীতিবাজ, নেশাগ্রস্ত, ভূমিদস্যুদের স্থান তাঁর কাছে নেই। তাঁর নেতৃত্বে মহানগর আওয়ামী লীগে নতুনত্বের জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর কমিটি গঠন প্রক্রিয়াতেও চমক এনেছেন জাহাঙ্গীর আলম। প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিগত ও বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা ও পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচিতি উল্লেখ করে বায়োডাটা আহ্বান করে মহানগর আওয়ামী লীগ। শুরুতে জটিল মনে হলেও পরে এ পদ্ধতি সকল মহলে ব্যাপক সাড়া পায়। মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ নেতা নির্বাচনের এ পদ্ধতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা এসএম মোকসেদ আলম জানান, মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সফলভাবে শেষ করেও চমক দেখিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। হাজার হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে আয়োজিত কাউন্সিলটি ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে বড়। তাঁর বড় অর্জন, দলের নাম ভাঙ্গিয়ে দখলবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা বন্ধ করা। বেকার নেতাকর্মী সমর্থকদের কর্মসংস্থান এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা। ঘুষ-দুর্নীতর বিরুদ্ধে তিনি বরাবরের মতই সোচ্চার।
আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন মহি জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতি জাহাঙ্গীর আলমের ভালবাসা পাহাড় সমান। বঙ্গবন্ধুর প্রতি কোন অসম্মান সহ্য করতে পারেন না তিনি। ১৫ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে কর্মসূচি পালনের নামে চাঁদা ওঠানো একদম অপছন্দ তাঁর। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৫
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল মায়েরও
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন
গাজীপুরে স্ত্রীর পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩
গাজীপুরে স্ত্রীর পরকীয়ায় বাধা দিতে গিয়ে পোশাক শ্রমিক জিয়াউর রহমানবিস্তারিত পড়ুন
মা প্রবাসে থাকার সুযোগে প্রতিরাতে সৎ শিশুকন্যার উপর নিপীড়নকারী এক লম্পট পিতা গ্রেফতার
মা প্রবাসে থাকার সুবাদে ১১ বছরের শিশু কন্যাকে অব্যহতভাবে রাতেরবিস্তারিত পড়ুন