গাড়ির জন্য রাস্তা দরকার, তাই গাছ কাটা জমি দখল
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার হরিরামপুর-কান্দিপাড়া সড়কে প্রায় এক হাজার গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আনোয়ার কবীর চিশতী আজমেরী নামের এক ব্যক্তি রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে কেবল এলোপাতাড়ি অন্যের গাছই কাটেননি, জমি দখল ও স্থানীয় মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। ইউএনওর গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। কিন্তু অভিযুক্ত আনোয়ার কবীর চিশতী আজমেরীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ছাড়া আনোয়ার কবীর চিশতির বিরুদ্ধে পিস্তল দিয়ে গ্রামের লোকজনকে ভয় দেখানো ও নারীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগও উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলপুর উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার পাকা সড়ক হয়ে আরো দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পেরিয়ে কুঠরিকান্দা গ্রাম। এ গ্রামের মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে আনোয়ার কবীর চিশতী। তিনি অবশ্য ওই গ্রামে থাকেন না। তিনি থাকেন ঢাকায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চিশতীর গাড়িবহর গ্রামে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত যাবে। এ কারণেই তাঁর রাস্তা দরকার। আর সেই রাস্তার জন্যই অন্য মানুষের গাছ কাটা, জমি দখলসহ সব কুকর্ম করছেন।
কুঠরিকান্দা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রথমে গ্রামের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে নিজ বাড়ি পর্যন্ত প্রশস্ত রাস্তার জন্য জমি নেন আনোয়ার কবীর চিশতী। পরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রাস্তার দুই পাশের হাজারো মূল্যবান সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানার লাখ লাখ টাকার ফলদ ও বনজ গাছ কাটার পর আত্মসাৎ করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, অপকর্ম ঢাকতে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে কাটা গাছের গোড়া। আবাদি জমি দখলের পর পুকুরের নামে খানাখন্দ তৈরি করা হয়েছে যেন ফসল ফলানো না যায়।
গ্রামের নাসিরুদ্দিনের ২০০ শতাংশ, সবুজ মিয়ার ১২০ শতাংশ, দোস্ত মাহাম্মদ ফকিরের ১৪ শতাংশসহ অনেকের জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কুঠরিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক ও আব্দুর রশিদ, সবুজ মিয়া, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রুবিনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, কথায় কথায় আনোয়ার কবীর চিশতি ও তার লোকজন পিস্তল দিয়ে গুলি করার ভয় দেখিয়ে অপকর্মের প্রতিবাদকারীদের দমন করে রেখেছে।
সবুজ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘চিশতীর লোকজন বাড়িতে হামলা করে নারীদের বিবস্ত্র করেই থেমে থাকেনি, শিশু, নারী ও বৃদ্ধকেও মারধর করে আহত করেছে।’
সুবজ মিয়া জানান, চিশতীর ভয়ে তিনি এখন গ্রামছাড়া। তাঁর মতো অনেকেই চিশতী বাহিনীর হামলা ও মিথ্যা মামলায় পুলিশের আতঙ্কে ভয়ে রাতে বাড়িতে থাকেন না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফুলপুরের ইউএনও রাশেদ হাসান চৌধুরী বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। বিস্তারিত জেনে পরবর্তী করণীয় তিনি ঠিক করবেন।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ফুলপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেছেন, ‘অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। গ্রামবাসীর দাবি চিশতীকে গ্রেপ্তার করলে তারা স্বাভাবিক শান্তিপ্রিয় জীবনযাপনের সুযোগ পাবেন।’
এ বিষয়ে টেলিফোনে কথা হয় আনোয়ার কবীর চিশতী আজমেরীর সঙ্গে। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁর পক্ষে ব্যবস্থাপক দেলোয়ার কথা বলবেন। দেলোয়ার সব অভিযোগ অস্বীকার করে গাছ কাটার সব দায় চাপান ইউএনও ও পুলিশ সদস্যদের ওপর।
এদিকে কাছে চিশতীর একটি অডিও জমা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই অডিওতে নিজের কাছে আটটি পিস্তল আছে বলে দাবি করেন চিশতী। আটটির মধ্যে পাঁচটির লাইসেন্স আছে এবং তিনটি অবৈধ বলেও জানান তিনি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নান্দাইলে চাচাতো ভাইয়ের হাতে চাচাতো ভাই খুন
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় বুধবার (১৯ জুন) সকালে ক্ষেতের আইল কাটাকেবিস্তারিত পড়ুন
ময়মনসিংহে ওসি-এসপি’র বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর
সরকারি দায়-দায়িত্ব ও কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথবিস্তারিত পড়ুন
ময়মনসিংহে ভূমিসেবা সপ্তাহ উপলক্ষে জনসচেতনামূলক সভা
ভূমি সংক্রান্ত সকল অনলাইন সেবার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে “স্মার্টবিস্তারিত পড়ুন