গুম-খুন আওয়ামী লীগের বৈশিষ্ট্য হওয়ায় বিএনপির গুম হওয়া নেতাকর্মীদের ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে তেমন আশা দেখছেন না দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান।

শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জিয়া নাগরিক ফোরাম (জিনাফ) আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন হতাশা ব্যক্ত করেন।

বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীর সন্ধান এবং চলমান হত্যা, গুমও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা, তাদের সন্ধান আমরা হয়তো আর পাব না। কারণ, গুম-খুনের সম্পর্ক রাজনৈতিক।’

তিনি বলেন, ‘ইলিয়াস আলীসহ বিএনপির যেসব নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে, তাদের ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আমরা খুব একটা আশাবাদী হতে পারছি না। আমাদের আশঙ্কা, তাদের সন্ধান আমরা হয়তো আর পাব না। কারণ, গুম-খুনের সম্পর্ক রাজনৈতিক। তা ছাড়া গুম-খুন, হত্যা-নির্যাতন ও লুটপাট ক্ষমতাসীন দলের (আওয়ামী লীগ) বৈশিষ্ট্য। তাই কর্তৃত্ববাদী সরকার যতক্ষণ গুম-খুনের রাজনীতি পরিহার না করবে এবং গুম হওয়াদের (বেঁচে থাকা সাপেক্ষে) ফেরৎ না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত গুম-খুনের ঘটনাও বন্ধ হবে না। গুম হওয়াদেরও আমরা ফেরত পাব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গুম-খুনের পরিবেশ থেকে পরিত্রাণ চাই। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমরা নির্বাচন চাই না, মানিও না। কারণ, অতীতে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনের নামে তামাশা ও ডাকাতি হয়েছে। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটছে। তারা শক্তি দিয়ে কোথাও কোথাও জিতছে আর যেখানে সেটা সম্ভব হচ্ছে না সেখানে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কলমের দ্বারা জিতছে।’

‘এই সরকারের অধীনে মানুষ শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, অর্থনৈতিকভাবেও নিপীড়িত। মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর কোনো দেশেই এখন বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া হচ্ছে না। বিগত ৫ বছরের তুলনায় বিদেশে আমাদের শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় আমরা আছি। এভাবে দেশ চলতে পারে না,’ যোগ করেন নোমান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা লোপাট হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের টাকা ‍লুট হচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা চুরি হওয়ার কারণে আমাদের কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা হবে না। অর্থাৎ ওই টাকা যারা লুট করেছে তাদেরকে জায়েজ করে দেওয়া হলো। এর সঙ্গে হয়তো তাদের দলের লোকজন অথবা তাদের ব্যবসায়ীরা সম্পৃক্ত। নতুবা তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত আন্তর্জাতিক চক্রকে এই টাকা দিয়ে দিয়েছে তারা। কারণ, তাদের কোনো দেশপ্রেম নেই। জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা যারা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, তারা অবশ্যই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব। সেই প্রতিবাদ কখনো হল রুমে হবে, আবার কখনো রাস্তায় হবে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে তারা যদি আমাদেরকে একটা থাপ্পড় মাড়ে, তখন চুপ করে না থেকে আমাদেরকেও থাপ্পড় মারতে হবে। নেতাকর্মীদের এই মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আমরা যদি মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে গুম-খুনের রাজনীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে না পারি, তাহলে আমরা সফল হতে পারবো না।’

জিনাফ সভাপতি লায়ন মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবেদীন ফারুক, অর্থনৈতিক-বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, সহ-স্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।