গুলশান হামলা
গোপন তদন্ত মিশনে ৫ দেশের কর্মকর্তা
গুলশান হামলার ঘটনায় গোপনে তথ্য সংগ্রহ করছে জাপান, ইতালি, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ৫ দেশ। মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) সদস্যরা ইতিমধ্যে এ ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন। জাপান, ইতালি, ভারত ও অস্ট্রেলীয় দূতাবাসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে নানান তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। তারা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলছেন। বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গেও তারা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করেছেন এবং নানা ধরনের তথ্য জানতে চেয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছেন দৈনিক যুগান্তর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (গোপনীয়) মো. মনিরউজ্জামান সোমবার বলেন, ‘বিদেশী কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলশান হামলার বিষয়ে তদন্তের অনুমতি চায়নি। তবে বিদেশী তদন্ত সংস্থার মধ্যে যাদের সঙ্গে আমাদের ওয়ার্কিং রিলেশন আছে যেমন- এফবিআই, এনআইএ (ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি), এএফপি (অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ) তারা আমাদের কাছে ঘটনা সম্পর্কে তথ্য জানতে চেয়েছেন। আমরাও তাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করছি।
তারা আমাদের কাছে তদন্তে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা যখন প্রয়োজন মনে করব; তাদের সহযোগিতা নেব। আমরা সেভাবেই সরকারকেও বলেছি। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ও সেভাবেই বলেছেন।’ ৫টি দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা গুলশান হামলার বিষয়টি নিজেদের মতো করে তদন্ত করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পহেলা জুলাই গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা বাংলাদেশ, ভারত, জাপান, ইতালি এবং বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নিহত হন। বাংলাদেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন দিক থেকে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। এর পাশাপাশি এফবিআইও মাঠে নেমেছে। ঢাকায় জাপান ও ইতালি দূতাবাসের বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তারাও হামলার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে কাজ করছেন। এছাড়া ভারত সরকারের যুগ্মসচিবের (নিরাপত্তা) নেতৃত্বে একটি দল ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা গোপনে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দূতাবাসগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা হামলার বিভিন্ন দিক ও কারণ অনুসন্ধানের জন্য দফায় দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। পুলিশ, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করে তথ্য সংগ্রহ করছেন তারা। ৪ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে হলি আর্টিজানের সামনে তিনজন ইতালির নাগরিককে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিভিন্ন জনের সঙ্গে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলতে দেখা গেছে।
এ সময় তারা মূলত হামলাকারীদের প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন। পাশেই গুলশান থানা পুলিশের কতর্ব্যরত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এরা মূলত ইতালিয়ান পুলিশের সদস্য। কেন এ ধরনে হামলা হল সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে। এজন্য নানা ধরনের প্রশ্ন করছেন। ৩০-৩৫ বছর বয়সী তিন সদস্যের গ্রুপটির একজনকে হ্যালো বলে- পরিচয় জানতে চাইলে একজন নিহতের আত্মীয়, একজন ইতালির একটি পত্রিকার সাংবাদিক এবং অপর জন দূতাবাসের কর্মকর্তা বলে উল্লেখ করেন। ৯ জুলাই দুপুরে হলি আর্টিজানের গেটের কাছে বেশ কয়েকজন জাপানি কর্মকর্তাকে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পরদিনই জাপান ও ইতালি থেকে বিপুলসংখ্যক বিদেশী নাগরিক এসেছেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নাগরিকরা দূতাবাসে কাজের সুবাদে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই গুলশান ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করছেন। নিজেদের মতো করে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। ওই দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও আছেন বলে তারা প্রাথমিক তথ্য পেয়েছেন।
গুলশানের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত সিটি ইউনিটের এক এডিসি বলেন, বিদেশী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউ পরিচয় গোপন করে বা নিহতদের আত্মীয়স্বজন পরিচয় দিয়ে এসে থাকতে পারে। তবে দাপ্তরিকভাবে কেউ সিটি ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
জানা গেছে, এ ঘটনার তদন্ত অগ্রগতির বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে জাপান। রোববার ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ অসন্তোষের কথা জানান। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গুলশান হামলায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার জাপানিদের বিষয়ে আলামত সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে জাপান। তাদের দাবি আলামত সংগ্রহের পদ্ধতি ছিল ত্রুটিযুক্ত। তদন্তের অগ্রগতি নিয়েও তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, মূলত জাপান নিজেদের মতো করে ঘটনার তদন্ত এবং অনুসন্ধান করছে। তাদের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশী তদন্ত সংস্থার কাজে অসঙ্গতি ধরা পড়ায় তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।’
এদিকে ৪ জুলাই ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জঙ্গি হামলায় ইতালি ও জাপান নিজ দেশের নাগরিক নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশে সমন্বিত গোয়েন্দা তৎপরতা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেনতিলিনি ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমো কিসিদার টেলিফোন আলোচনা করে ওই সিদ্ধান্ত নেন। তারা সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশ এ ইস্যুতে জাপান, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করবে। মূলত এই প্রস্তাবের আগেই দু’দেশের প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় অবস্থান করতে দেখা গেছে।
এর আগে শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনা তদন্তে আমরাই যথেষ্ট। আমাদের গোয়েন্দারা এ বিষয়ে তদন্ত করতে সক্ষম। তবে তদন্তের প্রয়োজনে বিদেশী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কারিগরি সহায়তা নেয়া যেতে পারে। পুলিশ কি ধরনের সহযোগিতা নেবে এ বিষয়টি তিনি পরিষ্কার না করে বলেন, তদন্তের পর্যায়ে যখন যে সহযোগিতা দরকার সেটি চাওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি নামে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় ইতালির ৯ জন, জাপানের ৭ জন, ভারতের একজন ও বাংলাদেশের ৩ জন জিস্মি নিহত হয়। এ ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২৮ জন নিহত হন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে নীতিগত সিদ্ধান্ত
বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীবিস্তারিত পড়ুন
অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৬৬%
সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর মাসে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতি উভয়ইবিস্তারিত পড়ুন
গবেষণা: দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যেতে চান ৫৫% তরুণ
দেশের প্রায় ৪২% তরুণ বেকারত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মতে বেকারত্বেরবিস্তারিত পড়ুন