পুনরায় গণশুনানির আহ্বান
গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দাম বাতিলের দাবি বিএনপির
নতুন করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সরকারের অযৌক্তিক পদক্ষেপ— এমন মন্তব্য করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেলের দাম সমন্বয় করে পুনরায় গণশুনানি করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে এ দাবির কথা জানান মুখপাত্র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে দেরিতে দলীয় প্রতিক্রিয়া জানানোর বিষয়ে রিপন বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে এরশাদের মতো আমরা বলে দিতে পারতাম, ‘সরকারের এ সিদ্ধান্ত কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা।’ কিন্তু দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে শুধু বিরোধিতার খাতিরে আমরা বিরোধিতা করতে চাই না। তাই সরকারের এই দাম বাড়ানোর ফলে কি কি সুবিধা-অসুবিধা হতে পারে; সেজন্য আমরা তথ্য-উপাত্য দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে চেয়েছি।
তিনি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিইআরসি (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) যে গণশুনানি করেছিল, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল তাতে অংশ নিতে পারেনি। সে সুযোগও ছিল না। সে কারণে নতুন করে পর্যালোচনার জন্য পুনরায় গণশুনানি করতে হবে। এর আগে বাড়ানো দাম বাতিল করতে হবে।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, গ্যাসে সরকারের ভর্তুকি দিতে হয় না। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেটের টাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজনের পকেটে দেওয়ার দায়িত্ব জনগণ সরকারকে দেয়নি।
তিনি বলেন, এ বছরের শুরুতে অস্থির রাজনৈতিক সময়ে ‘বিনা ভোটের নির্বাচিত সরকারের’ মতো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন তথাকথিত লোক দেখান শুনানির নামে ১ সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছে।
রিপন বলেন, বিএনপি মনে করে এ দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক এবং এর ফলে নিম্নআয় ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা আরেক দফা দুর্ভোগে নিপাতিত হবেন। যখন সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় তাপে অস্থির এবং আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকাতে মানুষের এমনিতেই নাভিশ্বাস, তখন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে সংসার চালাতে তাদের আরও হিমসিম খেতে হবে।
তিনি বলেন, গ্যাস খাতে সরকারের ভর্তুকি দিতে হয় না এবং এ খাতে কোনও লোকসানও নেই। সেখানে গৃহস্থালি কাজে এক বার্নার ও দুই বার্নার চুলায় এক লাফে দুইশ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতি অবিচার। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে সরকার নিজেদের জবাবদিহি করার কথা ভাবত। কিন্তু ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় আসা যায় বা ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখা যায় বলে তারা দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা যেমন ভাবেনি, তেমনি কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-রপ্তানিতে এই দাম বৃদ্ধি কিভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সে বিষয়টিও আমলে নেয়নি।
রিপন বলেন, সরকার নিজেদের কথায় কথায় কৃষক ও কৃষিবান্ধব বলে প্রচার করতে ভালবাসে। এর আগে প্রমাণ হয়েছে, কি করে সরকার ধান-গম ক্রয়ের সময় নিজ দলীয় দালালদের মাধ্যমে কৃষকদের নির্মমভাবে ঠকিয়েছে। ফলে কৃষক ন্যায্যমূল্য তথা সরকার ঘোষিত মূল্যে তার উৎপাদিত ধান-গম বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতেও সরকারের কৃষক ও কৃষিবান্ধব নীতির পরিহাসের চিত্র ফুটে উঠেছে।
তিনি বলেন, মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপসানালয় ও সামাজিক সংঘেও বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়েছে। সরকার সামাজিক দায়বদ্ধতার সবক দেয় ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারের ধর্মীয়-সামাজিক দায়বদ্ধতা কোথায়, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বিএনপিনেতা রিপন বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য পুনরায় পর্যালোচনার জন্য শাসকদলের এক নেতার দাবি করায় বিষয়টি প্রমাণিত, বিএনপি জণগনের স্বার্থে কথা বলছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও বিইআরসি চেয়ারম্যান গ্যাস -বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে যে যু্ক্তি তুলে ধরেছেন বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, সিস্টেম লস কমাতে পারলে মূল্যবৃদ্ধির বোঝা জণগনের উপর চাপাতে হতো না।
তিনি বলেন, বিইআরসি চেয়ারম্যান ‘পে-স্কেল আসিতেছে’ শুনিয়ে আগাম মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপি জানতে চায়, গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সরকারি পে-স্কেলের আওতায় কতজন?
সরকারি প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে জনগণকে তার মাশুল দিতে হচ্ছে— এ দাবি করে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, গত এপ্রিল-মে মাসে আমদানি করা তেলের অর্ধেকেরও কম ব্যবহৃত হওয়ায় বাকি তেল বিদেশি কোম্পানিগুলোর পরিবহন জাহাজ থেকে খালাস না করায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে ৬৪৭৯৪৩.৭৫ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। এ ধরনের অব্যবস্থাপনা, অদূরদর্শিতা, দুর্নীতি, সিস্টেম লস বিদ্যুৎ খাতকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে, আর জনগণকে এর মাশুল দিতে হচ্ছে।
রিপন আশঙ্কা প্রকাশ করেন, সরকারের গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দুর্ভোগ ও অর্থনৈতিক চাপ ঘরে ঘরে চুলা থেকে শুরু করে পরিবহনে যাত্রীভাড়া, ঘর-বাড়ীতে বর্ধিত বিদ্যুৎ বিল-মানুষের সহ্য সীমাকে ছাড়িয়ে যাবে। কৃষি-শিল্প-ব্যবসা-রপ্তানিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এএসএম আব্দুল হালিম, দলীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, আব্দুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন